চরমোনাইতে হাতপাখা ঠেকাতে আ’লীগ-বিএনপি একাট্টা

প্রকাশের তারিখ: অক্টোবর ১৮, ২০২১ | ৭:৪১ অপরাহ্ণ

বরিশাল বাণী: বরিশাল সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের অস্বস্তিতে ফেলেছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং বিএনপির ছায়া প্রার্থীরা।

স্থানীয় বিএনপি কৌশল নিয়েছে দলীয় ছায়া প্রার্থী নেই এমন ইউনিয়নগুলোয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে থাকার। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের সূতিকাগার চরমোনাই ইউপিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাট্টা হয়ে পীর পরিবার ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। প্রায় দুই দশক ধরে ইউনিয়নটিতে পীর পরিবার চেয়ারম্যান পদে রয়েছে।

ইউপি নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর বরিশাল সদরের ছয়টি ইউপিতে নির্বাচন হবে। গতকাল রোববার ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এ ছয় ইউপিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী রয়েছে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছে পাঁচটিতে। তিনটি ইউপিতে রয়েছে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী।

নগরঘেঁষা রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আহমেদ শাহরিয়ার বাবুর বিরুদ্ধে ভোটের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খোকন। এখানে বিএনপির সমর্থনে প্রার্থী হয়েছেন কোতোয়ালি থানা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল আমিনের ভাই আলহাজ মনিরুজ্জামান মনির।

চরকাউয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দলের ইউনিয়ন শাখার সহসভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এক ভোট পেলেও শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকব। এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি; চরকাউয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মামুন সরদার গণি হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

চাঁনপুর ইউপিতে নৌকার প্রার্থী হেলাল উদ্দিন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক এইচএম জাহিদ। তিনি বলেন, আগেই ঘোষণা দিয়েছিলাম মনোনয়ন না পেলেও প্রার্থী হবো। মাঠ পর্যায়ে যাচাই না করেই নৌকার প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান মুন্না হয়েছেন নৌকার প্রার্থী। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুবেল হোসেন মামুন তালুকদার। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি প্রয়াত ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হকের ভাতিজা। ইউনিয়ন বিএনপির এক দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ভোটে তারা মামুন তালুকদারের পাশে থাকবেন।

চন্দ্রমোহন ইউনিয়নে স্থানীয় বিএনপির সমর্থনে প্রার্থী হয়েছেন সিরাজুল ইসলাম মাস্টার। প্রবীণ বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল পণ্ডিতসহ দলটির বিভিন্ন নেতা কয়েকদিন আগে তার সমর্থন সভায় অংশ নেন। এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম মতিউর রহমান।

চরমোনাই ইউনিয়নে ২০০২ সালের নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম। এরপর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে এই পরিবার থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীই জয়ী হয়ে আসছেন। আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন পীরের ছোট ভাই সৈয়দ জিয়াউল করীম। নৌকার প্রার্থী হয়েছেন মাস্টার নূরুল ইসলাম। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন গিয়াস। তবে এখানে পীর পরিবারকে হটাতে প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ইউনিয়ন বিএনপি।

সম্প্রতি জেলা বিএনপির (দক্ষিণ) সভাপতি এবায়েদুল হক চানের অংশগ্রহণে চরমোনাইয়ের রাজারচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিএনপির আলোচনা সভা ও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া-মোনাজাত হয়। সূত্র জানিয়েছে, দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠানের আড়ালে মূলত সেখানে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপির ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, চরমোনাই ইউনিয়নে বিএনপি প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নূরুল ইসলামের পক্ষে থাকবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম রাঢ়ী বলেন, চরমোনাই পীর পরিবার বিএনপির চিরশত্রু। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নেই। তাই পীর পরিবারের প্রার্থীকে পরাজিত করতে আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। এটা জেলা বিএনপির সিদ্ধান্ত বলেও দাবি করেন সালাম রাঢ়ী।

অপরদিকে জেলা সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন বলেন, ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে তখনকার প্রার্থী বিএনপির বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের ওপর হামলা করেছিল পীর পরিবার। ইউনিয়নটিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই পীর পরিবারের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাই ইউনিয়ন বিএনপি পীর পরিবারের প্রতিপক্ষ নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে থাকবে।

প্রতিটি ইউনিয়নে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা প্রসঙ্গে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম ছবি বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন। এরপর দল কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে।

সূত্র: দৈনিক সমকাল।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host