বরিশালে সংঘর্ষের ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মামলা, গ্রেপ্তার ২

প্রকাশের তারিখ: জুন ১২, ২০২২ | ৬:০৪ অপরাহ্ণ

বাণী ডেস্ক।।
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক কলেজছাত্রের মৃত্যুর জেরে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নিহত রোগীর স্বজন-সহপাঠীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। শনিবার (১১ জুন) বিকেলে সংঘর্ষ ও রাতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার পর রাত দেড়টার দিকে বরিশাল কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম আজাদ। এজাহারে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। মারামারির ঘটনায় আটক নিহত রোগীর দুই স্বজনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নগরের ইসলামিয়া কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী মো. শাওন ও নিহত কলেজছাত্রের মামা আনোয়ার হোসেন। তাঁদের দুজনকে আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। আদালত তাঁদের দুজনকে জামিন দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার মো. শাওনের মা শাহনাজ পারভীন অভিযোগ করেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কেউ মারধর করেনি। নিহত রিয়াদুলের সহপাঠীরা উত্তেজিত হয়ে একটি ফ্লাক্সে আঘাত করলে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা উল্টো এসে রিয়াদুলে স্বজন ও সহপাঠীদের মারধর করেন। অথচ উল্টো মারধরের অভিযোগে আমার ছেলে ও রিয়াদুলের মামাকে গ্রেপ্তার করা হলো। মামলা করে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেলে এক দফা সংঘর্ষের পর রাতে দুপক্ষের মধ্যে ফের উত্তেজনা দেখা দেয়। এতে প্রায় দেড় ঘণ্টার জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাকিন আহমেদ আজ বলেন, হামলাকারীরা যদি প্রকাশ্যে ক্ষমা না চায়, তাহলে আবারও আন্দোলনে যাবেন তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও কর্মবিরতিতে যাবেন।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটির সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবি শুনেছেন তিনি। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

হাসপাতালের চিকিৎসক, নিহত রোগীর স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে নগরের মহাবাজ সেতু এলাকায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আহত হয় কলেজছাত্র রিয়াদুল ইসলাম (১৭) ও তার দুই সহপাঠী। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এরপর তাদের হাসপাতালের চতুর্থ তলার সার্জারি ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সেখানে যাওয়ার পরপরই ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা রিয়াদুলকে মৃত ঘোষণা করেন এবং অপর দুজনের চিকিৎসা শুরু করেন। রিয়াদুলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে সহপাঠী ও স্বজনেরা সার্জারি ওয়ার্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কক্ষে হামলা চালান।

তাঁরা ওই কক্ষের জানালা ও আসবাব ভাঙচুর করেন। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। একপর্যায়ে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও আনসাররা হতাহত ব্যক্তিদের সহপাঠী ও স্বজনদের ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ করে রিয়াদুলের পরিবার।

সংঘর্ষের পর ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন। এ সময় তাঁরা জরুরি বিভাগের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে রোগী ও স্বজনেরা দুর্ভোগে পড়েন। অন্যদিকে, নিহত কলেজছাত্রের স্বজন ও সহপাঠীরা হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

খবর পেয়ে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের হাসপাতালের ফটক ও সড়ক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন। দুই পক্ষই সরে গেলে রাত ১১টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host