পিরোজপুর প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় শাম্মী আক্তার (৪০) নামের এক বিউটিশিয়ানকে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় কে এম লতীফ ইনস্টিটিউশনের শিক্ষার্থীরা এসব কর্মসূচি পালন করে।
এদিকে হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জেন্নাত আলীকে প্রত্যাহার করে পিরোজপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে পিরোজপুর পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বুধবার দুপুরে জেন্নাত আলীর প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কী কারণে তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা তিনি বলেননি।
গত সোমবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিউটিশিয়ান শাম্মী আক্তারের (৪০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে শাম্মী আক্তারের ছেলে সাইম আলম (১৭) বাদী হয়ে দুজনের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় হত্যা মামলা করে। এরপর পুলিশ শাম্মীর স্বামী শেখ সিরাজুস সালেকিন (৩৩) ও শাম্মীর ভাইয়ের স্ত্রী স্কুল শিক্ষক আয়শা খানমকে (৫০) গ্রেপ্তার করে। আয়শা খানম কে এম লতীফ ইনস্টিটিউশনের সহকারী শিক্ষক। মঙ্গলবার রাতে শেখ সিরাজুস সালেকিন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার বাদী সাইম আলম নিহত শাম্মী আক্তারের ছেলে। সে কে এম লতীফ ইনস্টিটিউশনের দশম শ্রেণির ছাত্র। তার সহপাঠীদের উদ্যোগে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ কর্মসূচিতে বিদ্যালয়ের কয়েক শ ছাত্র অংশ নেয়। নিহত শাম্মীর বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ছোট রাজাপুর গ্রামে। তিনি মঠবাড়িয়া শহরের কে এম লতীফ সুপার মার্কেটের শাম্মী বিউটি পার্লারের মালিক ছিলেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, দশম শ্রেণির ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মিছিল বের করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা বলে, তাদের সহপাঠীর মায়ের এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে তারা এ প্রতিবাদ সমাবেশ করছে। তারা আয়শা খানমকে বিদ্যালয় থেকে বরখাস্তের দাবি জানায়।
কে এম লতীফ ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, শিক্ষক আয়শা খানমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা বৃহস্পতিবার ডাকা হয়েছে।
থানা-পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার থানা পাড়া মহল্লায় একটি ভাড়া বাড়িতে শাম্মী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করতেন। ১৩ বছর আগে প্রথম স্বামীর সঙ্গে শাম্মীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তাঁদের দুই ছেলে রয়েছে। দুই বছর আগে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের ব্যবসায়ী শেখ সিরাজুস সালেকিনের সঙ্গে শাম্মী আক্তারের বিয়ে হয়। সিরাজুস ঢাকায় ব্যবসা করেন। সিরাজুস মাঝেমধ্যে ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়ায় আসা-যাওয়া করতেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রোববার সিরাজুস ও শাম্মীর বিবাহবার্ষিকী ছিল। এ উপলক্ষে সিরাজুস ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়ায় আসেন। ওই রাতে বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়শা খানম ওই বাড়িতে যান। রাতে তিনি ওই বাড়িতে ছিলেন। শাম্মী গভীর রাতে সিরাজুল ও আয়শাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে শাম্মী ও সিরাজুসের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে সিরাজুস ক্ষিপ্ত হয়ে শাম্মীর মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
শাম্মীর ছেলে ও মামলার বাদী অভিযোগে করে বলে, ঘটনার দিন সে বাড়িতে ছিল না। তার বড় ভাইও একটি মামলায় কারাগারে আছেন। হত্যার দায় এড়াতে পরের দিন সকালে সিরাজুস ও আয়শা তার মায়ের লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তাঁরা হত্যার ঘটনাকে ‘হার্ট অ্যাটাক’ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ঘটনার পর সিরাজুস সালেকিন ও আয়শা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ থানায় নিয়ে যান। পরে হত্যা মামলায় তাঁদের দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহা. নূরুল ইসলাম বাদল বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ওই দিন রাতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদিক আহমেদের কাছে আসামি শেখ সিরাজুল সালেকিন ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ১৬ আগস্ট আসামিদের রিমান্ডের আবেদনের শুনানি হবে। আসামিরা কারাগারে রয়েছেন। ওসি মুহা. নূরুল ইসলাম বাদল আরও বলেন, জেন্নাত আলীকে প্রত্যাহারের বিষয়টি তিনিও জানেন। জেন্নাতকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত ভিন্ন কারণে করা হয়েছে।