গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে সমাজে আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুল ওহাব খুলনার হুজুর (রহঃ) এর অবদান

প্রকাশের তারিখ: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২ | ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মাদ ইমাদুল হক ফিরদাউছ প্রিন্স

ইসলাম সর্বকালের ধর্ম—এই দাবি জোরালো করেছে যেসব বিষয় তাজদিদ বা সংস্কারের ধারণা তার অন্যতম। কালের আবর্তে মুসলিম সমাজের মূল্যবোধ, বিশ্বাস, রীতিনীতিতে যে মেদ, বাহুল্য ও বিকৃতি দেখা দেয়, তা থেকে আত্মরক্ষার একটি পদ্ধতির নাম তাজদিদ। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহ তাআলা প্রতি শতকে মুসলিম সমাজে একজন সংস্কার প্রেরণ করেন। তিনি উম্মাহর দেহে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন এবং মুসলিম সমাজে শিকড় গাড়া বিকৃতি ও বিচ্যুতি দূর করেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁর ভূমিকা হয় একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মতো, যিনি একজন রোগীর রোগ নির্ণয় করে তার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। দক্ষিণাঞ্চলের বিখ্যাত আলেম খুলনার হুজুর (রহঃ) তেমনি একজন মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক। তাঁর কর্মপরিধি ও সংস্কার আন্দোলনের বিপুল প্রভাবের কারণেই তাঁকে শিক্ষাবিদ, মুফতি, মুহাদ্দিস, সমাজ সেবক, সমাজ সংস্কারক ও খুলনার হুজুর বলা হয় এবং এই নামেই তিনি অধিক পরিচিত। তিনি দেখেছিলেন সমাজে পরাক্রমশালী অথচ বিভ্রান্ত সমাজপতিদের অন্যায়-অবিচারের সামনে সৎ সজ্জনরা কিভাবে অসহায়ত্ব বরণ করেছে এবং একইভাবে অসৎ মানুষগুলো জাগতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজের বোধ, বিশ্বাস ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বিকিয়ে দিচ্ছে। কিভাবে তারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে ফকির ফক্করদের বিকৃত ধর্মচিন্তার বীজ সমাজের পরতে পরতে বপন করছে। বিশেষত আদর্শচ্যুত আলেম নামধারী ভ্রান্ত লোকদের অসততা খুলনার হুজুর (রহঃ)-কে যারপরনাই ব্যথিত করেছিল। তিনি জীবন দিয়ে এই ধর্মীয় নৈরাজ্য রোধের সংকল্প করেন। সমাজ, রাষ্ট্র ও উম্মাহকে নিয়ে তাঁর কল্যাণচিন্তার প্রধান কারণ সম্ভব তার পবিত্র ‘রক্তধারা’ ও পরিবারের প্রভাব। কারণ তাঁর বাবা জনাব মোঃ দেলাল উদ্দিন জোমাদ্দার ছিলেন ঐ সময়ের একজন খ্যাতিমান সামাজিক ও ইসলামিক ব্যক্তিত্ব। অল্প বয়সেই তিনি আল কোরআনের প্রাথমিক হিফজ সমাপ্ত করেন। এরপর চট্রগ্রামের হাটহাজারি দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগের বিশিষ্ট আলেমদের কাছে উচ্চতর ইসলামী জ্ঞান অর্জন করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করে হাটহাজারি অবস্থিত দেশের শীর্ষ মাদরাসায় পাঠদান শুরু করেন। দারুল উলুমের তত্ত্বাবধানেই তিনি আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত হন। কর্মজীবনে পা রেখেই তিনি বুঝতে পারেন দেশের মুসলমানরা যেসব ব্যাধিতে ভুগছে তার আরোগ্য আলেমদের হাতেই রয়েছে, যদিও তাঁরা ক্ষমতার মোহ বা ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। আলেমসমাজ যদি অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, তবেই মুসলিম সমাজ মুক্তির পথ খুঁজে পাবে। কুসংস্কার ও বিকৃতির হাত থেকে সাধারণ মানুষের চিন্তা, বিশ্বাস ও ধর্মাচার রক্ষা পাবে। আলেমদের ভেতর দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে ওয়াজ নছিহতের মাধ্যমে তিনি নবীর উত্তরসূরি হিসেবে আলেমদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

সমাজের গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসা মানুষেরা যেন যুব সমাজের অনুপ্রেরণা হতে পারে, আদর্শ হতে পারে, এসব খেয়াল রেখে এলাকাবাসীকে জনপ্রতিনিধি বাছাই করতে বলতেন । তিনি বলতেন, কর্মজীবন থেকে ব্যক্তিজীবনে সততা, নৈতিকতা, মানবিকতার, পরমতসহিষ্ণতার চর্চা করতে হবে। মানুষের মধ্যে এগুলোর চর্চা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে। যে কোনো অবস্হান থেকে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানসিকতা দেখাতে হবে। আমাদের পারি নৈতিকতা, মানবিকতার এবং ব্যক্তিসচেতনতার দৃঢ় অবস্হানের সঙ্গে একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। তাঁর জীবন ব্যয় করছেন জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনের কাজে, দেশের যুবসমাজকে আধুনিক বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তোলার কাজে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সমাজসেবা ও মানব কল্যাণমূলক নানা কাজ করে আসছেন। সমাজ উন্নয়নে তার অবদান অনস্বীকার্য এবং তা অন্যদের জন্য অনুকরণীয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাশ নেয়ার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত যুবশক্তি গঠনে তিনি যে ভূমিকা পালন করছে, তা কালের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে । স্বপ্নচারী মানুষরা কখনও হতাশায় আক্রান্ত হতে পারে না, তারা নিত্য নব সৃষ্টির মাধ্যমে এগিয়ে যায়। জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনে তারা আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে। ঘুণে ধরা সমাজকে আলোর দিশা দিচ্ছে এবং নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় থেকে উত্তরণের পথ দেখাচ্ছে।

সমাজে ঘুষ-দুর্নীতি-সন্ত্রাস-অন্যায়-অবিচার ও নকল প্রতিরোধে জনমত গড়ে তুলতে হুজুরের উপদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এদেশের ছাত্র-যুবকরা যাতে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে নিজেদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিবার, জাতি ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে সেজন্য সপ্তাহে বৃহস্পতি ও শুক্রবার মসজিদে এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার মানুষকে দাওয়াত দিয়ে জীবন-যাপনের বিভিন্ন বিষয় উপদেশ দিতেন।

খুলনার হুজুর (রহঃ) এর নির্ভীক দাওয়াতি কার্যক্রম সাধারণ মানুষের ভেতর ঈমানি চেতনা জাগ্রত করে এবং তারা সত্যের পক্ষে কাজ করার সাহস ফিরে পায়। তাঁর সংস্পর্শে বহু মানুষ সত্যের পথে ফিরে এলো। হুজুরের সংস্রবে সব ধরনের বিদআত ও কুসংস্কার পরিহার করে সমাজের অমানুষগুলো মানুষ হয়েছে আর মানুষগুলো ফেরেশতায় পরিণত হয়েছে। মানুষের আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক সাধনায় মনোযোগ দেন। আধ্যাত্মিকতার লাইনে তিনি ছিলেন দেশের শীর্ষ ওলিকুল শিরোমণি চরমোনাই তরিকার অনুসারী। সমাজ সংস্কারে তার অবদান অনেক।

ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে ভালোবাসতেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, সমাজ সেবক ও শিক্ষাবিদ আলহাজ হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুল ওহাব সাহেব খুলনার হুজুর (রহঃ)। গ্রাম উন্নয়ন ও সমাজ সংস্কারে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন সদালাপী, বিনয়ী, ধার্মিক, মানবতাবাদী । তার মাঝে কখনো দাম্ভিকতা ও অহংকার কেহ দেখেনি। এটা তার জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সব শ্রেণির, সব মতের মানুষ তার সান্নিধ্যে আসত, তিনি সবাইকে ভালোবাসতেন। এটা তার বড় গুণ ছিল। ধর্মীয় কাজে তার বদান্যতা অতুলনীয়। খুলনার হুজুর (রহঃ) ছাত্রাবস্থা থেকেই সমাজ কল্যাণকমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। খুলনা গ্রামে হুজুরের এলাকায় গেলে তার বহু বদান্যতা ও ভালো কাজের প্রমাণ পাওয়া যায়।

 

হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) তাঁর এলাকায় নিজ জমিতে ২০১০ সালে ১১ অক্টোবর একটি জুময়া মসজিদ, ২০০৫ সালে মাওলানা মার্কেট (বাজার) ও ১৯৭৩ সালে একটি মাদ্রাসা (স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা) প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামের সকল ছেলেমেয়েরা যাতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেজন্য মাদ্রাসা, নিয়মিত নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য জামে মসজিদ এবং গ্রামের গড়িব মানূষরা যাতে ব্যবসা করে সংসার চালাতে পারে সেজন্য ফ্রি জমি ব্যবহার এবং নামমাত্র ভাড়ায় মার্কেটের দোকান ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছেন । তিনি সারাজীবন চেয়েছেন শিক্ষিত সমাজ গড়ে তুলতে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে শিক্ষার আলো ছড়াতে হুজুর আলোচনাসভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করতেন। তিনি একজন সুফি ভাবাদর্শের মানুষ ছিলেন। বলতে গেলে জন্মগত আল্লাহর অলি। গ্রামের লোকজন চলাচলের জন্য হুজুর (রহ,) নিজের জমির উপর দিয়ে রাস্তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। উল্লেখ্য তৎকালীন ঝালকাঠি-২ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য (এম পি) জনাব জুলফিকার আলি ভুট্রো মহোদয় হুজুরকে বলেছিলেন মাওলানা সাহেব আপনি নির্দ্ধিধায় এতোটা জমি দিলেন রাস্তা/সড়কের জন্য এর প্রতিদান হিসেবে এই রাস্তা/সড়কটির নামকরণ আপনার নামে হবে। সে থেকে রাস্তাটি মাওলানা সাহেবের রাস্তা/সড়ক নামে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত।

 

তাঁর গলার কন্ঠ ছিল শ্রুতি মধুর, সেই মধুর কন্ঠে ও শুদ্ধ উচ্চারণে পবিত্র আল কোরআন তেলাওয়াত সকলকে আকৃষ্ট করত এবং বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষ তাঁর ইমামতিত্বে নামায পড়ার জন্য রাজাপুর উপজেলার ভাতকাঠি গরামিবাড়ি জামে মসজিদে আসতেন। উক্ত মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন ভাতকাঠি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে পবিত্র ঈদের নামাযে পড়ান।
হুজুর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিজেরু প্রতিষ্ঠিত খুলনা জামে মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালনের ৯ বছরসহ তাঁর সুদীর্ঘ ৬০ বৎসর ইমামের দায়িত্ব পালন পূর্ণ হয়। ইমামতির জন্য তিনি কোন ধরনের আর্থিক সহযোগীতা গ্রহণ করেননি। খুলনা জামে মসজিদের ঈদগাহ কমিটির সকলের অনুরোধে মৃত্যু পূর্ব পর্যন্ত তিনি খুলনা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামায পড়ান। মানুষ গড়ার কারিগর-আদর্শ শিক্ষক হিসেবে খুলনার হুজুর (রহঃ) এর সুখ্যাতি রয়েছে। দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীর শিক্ষকতার জীবনে বহু ছাত্র পড়িয়েছেন। যারা আজ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আলেম, মুফতি, মুহাদ্দিছ, শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, কৃষি বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, কবি, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও শিক্ষক । শুধু শিক্ষকতা নয়, লেখক ও কলামিষ্ট হিসেবেও তাঁর সুনাম রয়েছে। দৈনিক ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখেছেন । গুণী শিক্ষক এবং লেখক হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে সংবর্ধিত হয়েছেন। ১৯৯৫ সালে ভোটার তালিকা হাল নাগাদ করার কর্মসূচী শুরু হলে তৎকালীন নলছিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভোটার তালিকায় হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) কে প্রথম অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে উপজেলার ভোটার তালিকা হাল নাগাদ করার কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন।

সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতিকারে কোরআন ও হাদিসের আলোকে বেশ কিছু করণীয় ও শিষ্টাচার অর্জনের কথা হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুল ওহাব সাহেব খুলনার হুজুর (রহঃ) বলেছেন, এরমধ্যে আল্লাহভীতি মনের পবিত্রতা ও সৎ কাজের নামই তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। চারিত্রিক নিষ্কলুষতা, ন্যায়পরায়ণতা, ক্ষমা, বিনয়, ভারসাম্যপূর্ণ মানুষ, সত্যকথন, সুসম্পর্ক স্থাপন সবই তাকওয়া বা আল্লাহভীতির অন্তর্ভুক্ত। এসব শিষ্টাচারের অনুপস্থিতি সামাজিক অবক্ষয় ডেকে আনে। যেমন লোভ-লালসা, অশ্লীলতা, অপব্যয়, মিথ্যাবাদিতা, ঘুষ, জুয়া, ওজনে বেশিকম করা ও পরচর্চা।

জীবনের অধিকাংশ সময়ই হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) সমাজের যত কলুষতা, বৈষম্য, নির্যাতনকারিদের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছেন । তিনি ভালবাসতেন মানুষকে, তাই মানুষের বিরুদ্ধে মুনাফালোভীদের যে কোন চক্রান্তের তিনি ছিলেন অগ্রগামী প্রতিবাদকারী। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়ীক। শুধু ধর্মীয় বৈষম্যই নয়, তিনি ছিলেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার। মানুষকে তিনি ইসলামের ধর্মীয় প্রচারের পাশাপাশি বিজ্ঞানের আলোয় শিক্ষিত করতে চেয়েছেন, যে চর্চায় অধিবিদ্যাবাদ আপনিতেই ঝরে পরে। তাই তিনি কখনই শোষিত মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। তিনি শোষিত মানুষদের অর্থনৈতিক মুক্তি চেয়েছেন কিন্তু শোষিত মানুষদের হিন্দু, মুসলিম, বাঙালি, বিহারি, চাকমা, মারমা, আর্য্য, দ্রাবিড়, নারী, পুরুষ ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত করেননি। তাঁর অবদান দেশের সাধারণ মানুষের কাছে চির অম্লান হয়ে থাকবে। মৃত্যু মানুষের স্বাভাবিক পরিণতি, পরিণাম নয়। মৃত্যুর পরেও যে মানুষকে জীবিত মানুষেরা দীর্ঘদিন স্মরণে রাখে, তাঁর জীবনের আদর্শকে অনুসরণের চেষ্টা করে সে মানুষই দেশে কালে সমাজে অমরত্ব লাভ করে, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুল ওহাব সাহেব খুলনার হুজুর (রহঃ) ছিলেন তেমন একজন সমৃদ্ধ মানুষ।
আত্মপ্রত্যয়ী, দৃঢ়চেতা, নিষ্ঠাবান একজন শিক্ষাবিদের নাম আলহাজ্ব হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) । ঝালকাঠি জেলার খুলনা গ্রামের স্বর্ণভূমিতে জন্ম নেওয়া এ সমাজ সেবক জীবন সায়াহ্নেও ছিলেন কিংবদন্তি পুরুষ। বাংলাদেশের আলেম সমাজের ইতিহাসে তাঁর সদর্প বিচরণ আমাদের গর্বিত করে তোলে। মানুষ গড়ার শিল্পী হিসেবে একজন সুবেদিত শিক্ষক, জাতি গঠনের অভিভাবক ছিলেন তিনি।
হযরত খুলনার হুজুর (রহঃ) আজ আমাদের মাঝে নেই, এই পৃথিবী এবং সংসারের দূলি-ধূসরতা রৌদ্রকরোজ্জ্বল মায়াবী উঠোন থেকে অকস্মাৎ আলোহীন, অন্য এক জগতে, অন্য এক ভূবণে প্রবেশ করেছেন। আমরা কেউ জানিনা সে শাশ্বত গহবরটি কেমন, কী তার সীমানা, কী তার রং-রুপ, চিত্রকল্প। তা আমরা কেউ জানিনা। শুধু শোকার্ত চেতনায় অণুমান করি সে একটি মঙ্গললোক, সে একটি কল্যাণলোক। সেখানে যেতে হলে শোকের মধ্য দিয়ে এক অবিচ্ছিন্ন বিশ্বাসেই আমরা যাত্রা করি।আমাদের সে যাত্রা অনিবার্য, অলংঘনীয় এবং অপরিবর্তনীয়।
আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোঃ আব্দুল ওহাব সাহেব খুলনার হুজুর (রহঃ) এর অনন্ত যাত্রার মুহুর্ত্বগুলো আমাদের জন্য অনেক বিষাদের, শোকের, বেদনা বিহবলতার। যখন্ হুজুরের মুখের দিকে, তাঁর অবয়বের দিকে ফিরে তাকাই সব বেদনা বিধূরতা, বিহবলতা ছাপিয়ে একজন হাস্যোজ্জ্বল মানুষের প্রতিকৃ্তি চোখের সামনে ভেসে ওঠে, প্রতিভাত হয়, দীপ্যমান হয়। আমরা জানি যে ব্যক্তি একবার মৃত্যুর সহযাত্রী হয় সে অনন্তের অন্তহীন অন্ধকারে ভ্রাম্যমাণ।
আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু রেখে গেছেন অগণিত ভক্ত-অনুরক্ত, কর্ম ও অমূল্য লেখনী। এসবের মাঝেই তিনি বেঁচে থাকবেন অনাদিকাল। মহান আল্লাহ্ এই বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও সমাজ সেবককে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ সম্মানের স্থান দান করুন, আমিন।

মুহাম্মাদ ইমাদুল হক ফিরদাউছ প্রিন্স
ডেপুটি রেজিস্ট্রার, পবিপ্রবি এবং
সভাপতি, খুলনা (মাওলানা মার্কেট) জামে মসজিদ।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host