মামুন-অর-রশিদ এর “প্রথম প্রেম”

প্রকাশের তারিখ: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২ | ৭:১০ অপরাহ্ণ

প্রথম প্রেম : মামুন-অর-রশিদ
——————-
প্রাইমারী লেভেল শেষ করে হাইস্কুলে পা রাখলাম। পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়ে সবার আদর স্নেহ যেন আমার প্রতি আরও বেড়েছে। আমাকে আরও মন দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। আমার দাদী প্রায় সময়ই আমার পড়ার টেবিলে বসে থাকতো। আমাকে বলতো, ‘দাদুভাই ভাল ভাবে পড়াশুনা করে ভাল রেজাল্ট করতে পারলে তোমাকে অনেক সুন্দর লাল টুকটুকে একটা বউ এনে দেব। চাঁদের মত সুন্দর বউ’। আমি ফিক করে হেসে উঠি। ষষ্ঠ শ্রেণিতেও প্রথম স্থান অধিকার করে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তির্ন হই। শিক্ষক, বাবা-মা আর সহপাঠীদের ভালবাসায় সিক্ত আমি। এবার আরও চ্যালেঞ্জ নিয়ে পড়াশুনা করতে হবে।
কিছুদিন পরে সামনে ১ম সাময়িক পরীক্ষা। সারাদিন শুধু পড়া আর পড়া। হঠাৎ একদিন একটি প্রয়োজনে দাদীর রুমে গিয়ে বিছানা উল্টে কি যেন খুজছিলাম। খুজতে খুজতে একটি মেয়ের ছবি পেলাম। একটি রঙ্গিন ফুল ছবি লেমিনেটিং করা। অসম্ভব সুন্দর একটি মেয়ে। ছবিটি লুকিয়ে নিয়ে গেলাম। বইয়ের মধ্যে গুজে রেখে দিলাম। রাতে পড়ার সময় ছবিটি সামনে পরলো। একটু দেখলাম। ছবিটি কার? ভাবতে ভাবতে মনে পরে গেল দাদীর কথা। আমাকে নিশ্চয়ই এই মেয়েটির কথাই বলেছিল। সত্যিই দাদীর পছন্দের তারিফ করতে হয়। অপলক দৃষ্টিতে আমার হবু জীবন সঙ্গীনির দিকে তাকিয়ে রইলাম। না আমাকে আরও ভাল ভাবে পড়াশুনা করতে হবে। কিছুক্ষন পড়তে লাগলাম। হঠাৎ আবার ছবিটি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। বইয়ের ভিতর থেকে বের করে আবার ছবিটি দেখতে লাগলাম। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। দেখতে দেখতে কল্পনার জগতে হারিয়ে গেলাম। এরপর থেকে প্রতিদিন পড়তে বসলেই ছবিটি অনেকক্ষণ দেখে নিতাম। দেখতে দেখতে এমন একটি অবস্থা হলো যে, সারাক্ষণ ছবিটি সঙ্গে সঙ্গে রাখতাম। যখনি মন চাইতো দেখতাম। মাঝে মাঝে মনে হতো মেয়েটি আমার সাথে কথা বলছে।
একদিন ভাবলাম দাদীর কাছ থেকে মেয়েটির নাম ঠিকানা জেনে নেব। কিন্তু সাহস করে কিছু বলতে পারলাম না। দেখতে দেখতে আমার বার্ষিক পরীক্ষা এসে গেল। কিন্তু পড়াশুনায় যে আর মন বসেনা। অনেক চেষ্টা করেও ভালবাসার মানুষটিকে এক মুহুর্তের জন্যও ভুলতে পারছিনা। বাসার সবাই আমাকে বকতে লাগলো আমার উদাসিনতার জন্য। অবশেষে পরীক্ষা হয়ে গেল। কিছুদিন পরে রেজাল্ট বের হলো। শুধুমাত্র একটি বিষয় ছাড়া আর সকল বিষয়ে ফেল। শিক্ষক সহপাঠী ও আমার বাসার সবাই হতবাক। বাসায় আসার পরে বাবা মা আর বড় ভাইয়ার বকুনি খেয়ে রুমের মধ্যে একা একা কাঁদতে লাগলাম। রাতে ঘৃনায় আর লজ্জায় না খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
পরদিন সকালে রুমে শুয়ে আছি। দাদী এসে আমাকে শান্তনা দিয়ে বললো কি হয়েছে দাদু ভাই, মন খারাপ করো না। তোমার কি হয়েছে আমাকে সব খুলে বলো। তুমি এত আনমনা কেন? আমি বললাম আমি তোমাকে অনেক আগেই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলতে পারিনি। দাদী বললো, আমাকে নির্ভয়ে বল, আমি কাউকে কিছু বলবো না। আমি বললাম, তোমার পছন্দের ঐ মেয়েটিকে আমি ভুলতে পারছিনা। প্লিজ তার সম্মন্ধে সব কিছু আমাকে খুলে বল। নয়তো আমি আর থাকতে পারছি না। কথাগুলো শোনার পর দাদী অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কোন্ মেয়ের কথা বলছো? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমি বললাম, কেন তুমি যে মেয়েিেটর কথা আমাকে বলেছিলে, আমি তার ছবি তোমার বিছানার নিচে পেয়েছি। প্লিজ দাদী তুমি আর না করোনা। আমাকে সাক্ষাত করিয়ে দাও। এই বলে আমি ছবিটি বের করে দিলাম।
দাদী ছবিটি দেখা মাত্রই অট্ট্র হাসিতে ফেটে পড়লেন। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আর দাদীও হাসি থামাতে পারছেনা। আমি তাকে জোর করে থামিয়ে বললাম, প্লিজ দাদী, আর হেসোনা। তারাতারি বল। দাদী বললেন, ধুর বোকা কোথাকার। এই ছবিটা দেখেইতো তোর দাদা পাগল হয়েছিল। এটা আমার ক্লাশ নাইনে পড়ার সময়ের ছবি।

লেখকঃ কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host