আগৈলঝাড়ায় রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘরে দুই যুগ পার বিধবা মাসুদার

প্রকাশের তারিখ: জুলাই ৪, ২০২০ | ৫:৩১ অপরাহ্ণ

আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ
“আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।” আসমানীর কথা আপনাদের মনে আছে? পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের অমর চরিত্র আসমানী মারা গেছেন। বেঁচে আছে বরিশালের আগৈলঝাড়ার আর এক আসমানী। এটা কল্প কোন কাহিনী নয় রক্ত-মাংসের মানুষরূপে বেঁচে আছে। স্বামী হারিয়ে এক সন্তান নিয়ে সরকারী রাস্তার পাশে বসবাস করছে প্রায় দু’যুগ ধরে। জন প্রতিনিধিদের দারে দারে ঘুরে পায়নি একটি ঘর।
সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের লাল চাঁন মিয়া ত্রিশ বছর পূর্বে একই উপজেলার অশোকসেন গ্রামের মোল্লা মন্নানের মেয়ে মাসুদা বেগম(৪৮)কে বিবাহ করে বাড়িতেই থাকতেন। প্রায় দু’যুগ আগে স্বামী চাঁন মিয়া মারা যান। মারা যাওয়ার পরে বাড়িতে জায়গা না থাকার কারনে ওই বছরই মাগুরা ভেলি ব্রিজের পাশে ঝুপরি ঘর তুলে বসবাস করতে শুরু করেন। শুরু হয় এক পুত্র সন্তান নিয়ে জীবন যুদ্ধ। সারা জীবন অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে জীবন জীবিকা চালালেও এই করোনা কালে প্রায় অর্ধ শত বছর বয়সী মাসুদা বেগম এখন বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। খেঁয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তিনি। ছেলেকে নিয়ে ঝুপরির মধ্যে ভাঙ্গা একটা চৌকি ছাড়া তেমন কিছুই নেই। ভাঙ্গা ও ফুটো টিনের ছাউনি। ঝুপরি ঘরে বর্ষায় পানি পরে সব কিছু ভিজে যায়। বর্ষার হাত থেকে কিছুটা স্বস্থি পেতে পলিথিন টাঙ্গিয়ে সেখানে শুয়ে থাকেন মাসুদা বেগম।
মাসুদা বেগম জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে স্থানীয় মেম্বর চেয়ারম্যানদের কাছে অনেকবার গিয়েছি কোন ঘর পাইনি। রোদে পুরে বৃষ্টিতে ভিজে সরকারী রাস্তার পাশে এখন এই ঝুপরিতে বসবাস করছি। রাত যত গভীর হয় সকালে প্রত্যাশা তত তীব্র হয়ে ওঠে। রাতের অন্ধকারে অসহায়ের মতো জুপরি ঘরে বসে থাকি। রাস্তা দিয়ে কুকুর গেলেও অন্ধকারকে ভয় পেয়ে কুঁকড়ে থাকি। সকাল হওয়ার আশায়। যদি আমার একটা ঘর থাকতো তাহলে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম। প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের ঘর দেয়। কিন্তু মেম্বর চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে তারা আমায় দেয় না।
স্থানীয় হারুন রাজ জানান, দু’যুগ পূর্বে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে মাহমুদা বেগম রাস্তার পার্শে ঝুপড়ি তুলে মানবতার জীবন যাপন করছে।
রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইলিয়াস তালুকদার বলেন, এমন অসহায় পরিবারের কথা জানা নেই। তবে জরুরী ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই পরিবারকে সাধ্যমত সাহায্য করার চেষ্টা করা হবে।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host