মঠবাড়িয়ায় জাপা নেতাকে কুপিয়ে পা বিচ্ছিন্ন, গ্রেপ্তার ১

প্রকাশের তারিখ: নভেম্বর ২২, ২০২২ | ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ

সোহেল, বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় জাতীয় পার্টি (এরশাদ)‘র নেতা শফিকুল ইসলামকে কুপিয়ে পা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মটর সাইকেল চালক বাবু গ্রেপ্তার হয়েছে। মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ রোববার (২০ নভেম্বর) বাতে উপজেলার তুষখালী বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন। প্রেপ্তারকৃত মঞ্জু ওরফে বাবু (৩৫) মধ্য তুষখালী গ্রামের আঃ রাজাজাক হাওলাদারের ছেলে।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা মঠবাড়িয়া থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাবু এজাহারভুক্ত আসামী না হলেও তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এর আগে মূল আসামী ইয়াসিনকে ঢাকা লালবাগ থানাধীন বেড়িবাধ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার তথ্য মতে হামলায় ব্যাবহৃত ধারালো অস্ত্র পৌর শহরের বহেরা তলা এলকার খাল থেকে উদ্ধার করা হয়। ইয়াছিন বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। সে তুষখালী গ্রামের মো. হাফেজ খানের ছেলে। অপর দিকে হামলার দিন গত ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরেই শফিকুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পণাকারী তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ভাই তুষখালী বাজারের মুদি দোকানী নাসির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নাসির হোসেনও বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। আহত শফিকুল ইসলাম তুষখালী গ্রামের আইয়ূব আলী শিকদারের ছেলে ও তুষখালী ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক।

ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, প্রেপ্তারকৃত মঞ্জু ওরফে বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদেও জন্য ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে সোমবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হবে। ঘটনায় জড়িত ও পলাতক অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

থনা সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব বিরোধের জেরে দুই বছর আগে আড়াই লাখ টাকায় জাতীয় পার্টি (এরশাদ)‘র নেতা শফিকুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পণা করে তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ভাই তুষখালী বাজারের মুদি দোকানী নাসির হোসেন। ভাড়াটে কিলার হিসেবে ইয়াছিনের সাথে চুক্তি হয় আড়াই লাখ টাকায়। বিভিন্ন সময় বিকাশের মাধ্যমে চুক্তির টাকা পরিশোধও করা হয়। শফিকুলকে হত্যার পরিকল্পণা অনুযায়ী ইয়াসিনসহ তার ৫ সহযোগিদের নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার উপজেলা ঝাউতলার একটি বাসায় একত্রিত হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার বাজার থেকে ৯‘শ টাকায় ৩টি দারালো ‘দা’ ক্রয় করে। ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হত্যার পরিকল্পণাকারী তুষখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ভাই তুষখালী বাজারের মুদি দোকানী নাসির হোসেন জাপা নেতা শফিকুল ইসলামের অবস্থান ও তথ্য ওঁৎ পেতে থাকা ইয়াসিনকে মোবাইলের মাধ্যমে অবহিত করে।

স্থানীয় বাসিন্দা মুসা শরীফের সাথে চলমান একটি মামলায় শফিকুল আদালতে হাজিরা দিতে সকালে মোটর সাইকেল যোগে তুষখালী থেকে মঠবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মাঝের পুলের সন্নিকটে ফরাজি বাড়ির সামনে কালভার্ট এর উপরে আসা মাত্রই একটি মহেন্দ্র গাড়ি শফিকুলের মটর সাইকেলকে ধাক্কা দেয়। শফিকুল মোটর সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে পিছনের দিকে দৌড় দিলে হামলাকারীরা মাহেন্দ্র থেকে নেমে তাকে ধাওয়া করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বাম পা বিচ্ছিন্ন করে। এ সময় এলোপাতাড়ি কোপানোর কারণে শফিকুলের পেটের ভুড়ি বেড়িয়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়। হামলাকারি ইয়াসিন ও তার সহযোগিরা ৪ কিলোমিটার দূরে বহেরাতলা এলাকার খালে ধারালো অস্ত্রগুলো ফেলে দিয়ে মাহেন্দ্র যোগে পালিয়ে যায়। মাহেন্দ্র চালককে ৫ হাজার ও অপর ৩ সহযোগিকে ১৫ হাজার টাকা প্রদান করে ইয়াসিন।

স্থানীয়রা গুরুতর আহত শফিকুল ইসলামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানেও তার অবস্থার অবনতি হলে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাপলে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় ওই দিন বিকেলে ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদারের ভাই নাসির হাওলাদারকে আটক করে। পরে নাসিরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আহত শফিকুলের মা মমতাজ বেগম মামলা করেন। ১ অক্টোবর হামলায় ব্যবহৃত মাহেন্দ্র গাড়িটি পাশর্^বতী ভান্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের শিংখালী গ্রাম থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে চালক পলাতক থাকায় এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার কারা সম্ভব হয়নি।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host