মাদারীপুরে অধ্যক্ষের অপসারণের দাবীতে আন্দোলনে নামলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

প্রকাশের তারিখ: নভেম্বর ২৮, ২০২২ | ৭:০৫ অপরাহ্ণ
জাহিদ হাসান,মাদারীপুর প্রতিনিধি:
মাদারীপুরে জেলার কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ হাসানুল সিরাজীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের হয়রানী, নারী শিক্ষকদের সাথে অশালীন আচরণ, একই সাথে দুই কলেজের অধ্যক্ষ পদে কর্মরত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ফলে এসব অনিয়মের অভিযোগে অধ্যক্ষের অপসারণ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের ২৪ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতাদির দাবিতে মানববন্ধন করেছে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সোমবার সকাল ১০টায় কালকিনি প্রেসক্লাবের সামনে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করা হয়।
মানবববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘অধ্যক্ষ স্যার আমাদের ক্লাশের কখনও কোন খোঁজ খবর নেন না, ক্লাশরুমগুলোর খুবই বেহাল দশা। আমাদের থাকার মতো কোন হোস্টেল নেই। অথচ আমরা করোনকালীন সময়েও বেতন-ভাতাদি প্রদান করেছি। আমাদের কোন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের জন্য স্যারের কাছে গেলে স্যার আমাদের বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানী করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কার্যক্রমের অচলাবস্থার জন্য অধ্যক্ষকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবিতে শ্লোগান দেয়।
মানববন্ধনে অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের সুনাম শুনে আমাদের সন্তানদের ভর্তি করেছি। কিন্তু এখন দেখি সেখানে নানা ধরণের অব্যবস্থাপনা। আমরা সন্তানদের একটি প্রত্যয়নপত্র কিংবা কোন কাগজপত্র আনতে গেলে অধ্যক্ষ স্যার দিনের পর দিন ঘুরান এবং বিভিন্ন ধরণের জটিলতা তৈরি করেন। আমরা তার কাছে অভিভাবক হিসেবে তেমন কোন সম্মানও পাই না। তার অব্যবস্থাপনার কারণে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, যার বিরূপ প্রভাব আমাদের সন্তানদের ফলাফলের উপর পড়ছে। অধ্যক্ষ আসলে শিক্ষার্থীবান্ধব নন, তার অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে প্রভাষক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে মো. হাসানুল সিরাজী যোগদানের পরই কলেজের ধ্বংস শুরু হয়েছে। তিনি কলেজে এসেই শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে গ্রæপিং সৃষ্টি করেন এবং একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। অধ্যক্ষ কলেজে যোগদান করার সময় বিশাল অংকের কলেজ ফান্ড ছিল। তিনি এসেই তার বাসভবন সংস্কারের, শিক্ষক মিলনায়তন সংস্কারসহ বিভিন্ন কাজের অজুহাতে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মাসাৎ করেছেন।’
প্রভাষক আয়শা খানম বলেন, ‘অধ্যক্ষের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘ ২৪ মাস যাবৎ কোন প্রকার বেতন-ভাতাদী পাচ্ছেন না। এছাড়া ২০১৯ সাল থেকে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার পারিশ্রমিকও তারা পান নাই। এর ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।’
প্রভাষক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা বেতনসহ অন্যান্য ফি প্রদান করেছে কিন্তু এই সময়ে কলেজের কোন প্রকার উন্নয়ন কাজ হয়নি এবং সময়ের আগ থেকেই শিক্ষক-কর্মচারীদের ২৪ মাসের বেতন-ভাতাদি বকেয়া রয়েছে। তাহলে ঐ সময়ের আয়ের অর্থ কোথায় গেল? কলেজের অভ্যন্তরীণ হিসাব নিরীক্ষার জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হলেও অধ্যক্ষের অসহযোগিতার কারণে অডিট করা সম্ভব নয় নাই। অধ্যক্ষের আর্থিক দুর্নীতি প্রকাশ পাবে বিধায় তিনি অডিট করতে বাঁধা দেন।’
সহকারী অধ্যাপক মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘কালকিনি উপজেলায় কোন কলেজ সরকারি না থাকা সত্তে¡ও অধ্যক্ষকে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ সরকারিকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে বার বার বলা সত্তে¡ও তিনি তাতে কোন প্রকার সহযোগিতা করেন না। বরং তিনি কলেজ জাতীয়করণের পথে বিভিন্ন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।
সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘অধ্যক্ষ মো. হাসানুল সিরাজী কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত থাকাবস্থায় বিগত ২০২০ সালের ২২ মার্চ থেকে প্রায় ৪ মাস বাগেরহাট জেলার কাজি আজাহার আলী কলেজ কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন পাবলিক ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় একাই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যার ফলে পরীক্ষায় বিভিন্ন অনিয়ম ও জটিলতা দেখা যায়। এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে স্থানীয় প্রশাসন ও বোর্ড কর্তৃক তাকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করায় কলেজটির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। আমরা অধ্যক্ষের তদন্তপূর্বক অবিলম্বে অপসারণ ও ২৪ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতাদী দাবি করছি।’ মানববন্ধনে কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
তবে অভিযোগের বিষয় অধ্যক্ষ হাসানুল সিরাজী মুঠোফোনে জানান, ‘আমি কখনোই কোন অনিয়মের সাথে জড়াইনি। কোন কোন শিক্ষক তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্যে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। আমি অচিরেই তাদের মুখোশ উন্মোচিত করবো।’

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host