উজিরপুরের সেই মানবিক ওসি করোনামুক্ত

প্রকাশের তারিখ: জুলাই ৬, ২০২০ | ৯:১৬ অপরাহ্ণ

রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি :: সস্ত্রীক আক্রান্ত বরিশালের উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউল আহসান করোনামুক্ত হয়েছেন। সোমবার (৬ জুলাই) সকালে তার পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। অবশ্য তার স্ত্রীর রিপোর্ট দ্বিতীয় দফাও পজিটিভ এসেছে।

জিয়াউল আহসান একজন মানবদরদী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সর্ব মহলে পরিচিতি অর্জণ ও সুনাম কুড়িয়েছেন। মানব ও দেশ প্রেম,পেশাদারিত্ব,দায়িত্ব বোধ.কর্তব্যনিষ্ঠা ও সর্বোপরি এলকার শান্তি,স্থিতি এবং আইন শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখায় বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জণ করা এ পুলিশ কর্মকর্তা দেশে প্রাণঘাতি কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ’র শুরু থেকে এর বিরুদ্ধে সন্মূখ সারির যোদ্ধা হিসেবে লড়াইয়ে অবর্তীণ হন। তিনি মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য মনে করে ও ভয়কে জয় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা, করোনা রোগীদের বাড়ি লকডাউন করা, কর্মহীন হতদরিদ্র মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া ও সচেতন করা সহ নানা ভাবে এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। মহাদূর্যোগ মুহুর্তে এলাকাবাসীর পাশে সার্বক্ষনিক থাকার মানসে তিনি থানায় ‘ঘরবসতি’ গড়ে তুলেছিলেন।

উজিরপুরের জল্লা ইউনিয়নের পীরেরপাড় নামক স্থানে রাস্তার পাশে বৃষ্টির মধ্যে সারা রাত ধরে পড়ে থাকা মধ্য বয়সী এক পাগলের লাশ করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দাফন করতে যখন কেউ এগিয়ে আসছিলেন না ঠিক সেই মুহুর্তে খবর পেয়ে তিনি এগিয়ে গিয়ে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এছাড়া করোনার মধ্যে উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের সোনারবাংলা বাজার এলাকায় রাস্তার পাশে এক পাগলী সন্তান প্রসব করে। খবর পেয়ে সেখানে তিনি ছুটে গিয়ে ওই পাগলী মা ও তার নবজাতককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে ওই শিশুটিকে আগৈলঝাড়ায় বেবি হোমে রাখার ব্যবস্থা করে দেন তিনি। এমন মানবসেবার অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে তার কর্ম জীবনে।

১৯ মার্চ লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি প্রিয়তমা স্ত্রী ও প্রিয় সন্তানদের স্নেহ ও ভালোবাসা থেকে বি ত করে ও নিজে বিরত হয়ে তাদের ঢাকার বাসায় ফেলে রেখে উজিরপুরে সার্বক্ষণিক অবস্থান করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি ২০ জুন জ্বর ও মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হন। ওই দিন তার নমুনা সংগ্রহ করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে পাঠানোর পরে ২১ জুন রাতে তার রিপোর্ট করোনা পজিটিভ আসে। সেই থেকে তিনি থানায় নিজ ব্যাচেলর কোয়ার্টারে আইসোলেশনে চিকিৎসাধিন ছিলেন। সেখানে তার স্ত্রী সেলিনা আহসান স্বামীর সেবাশ্রুষা করতে গিয়ে নিজেও করোনায় আক্রান্ত হন। তিনি বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনের একত্রে পরীক্ষায় ৬ জুলাই সোমবার তার (স্ত্রী) দ্বিতীয় দফা রিপোর্টও পজিটিভ এসেছে।

এদিকে ওসি জিয়াউল আহসান সবার দোয়ায় করোনামুক্ত হওয়ায় মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেছেন। তিনি তার স্ত্রীর সুস্থতার জন্যও সবার দোয়া চেয়েছেন।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host