২৫ বছরেও শান্তি ফেরেনি পাহাড়ে ! বাস্তবায়ন হয়নি পার্বত্য শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা

প্রকাশের তারিখ: ডিসেম্বর ২, ২০২২ | ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক নিউজ: পার্বত্য শান্তিচুক্তির ফলে পাহাড়ে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও শান্তি ফিরে আসেনি। বাস্তবায়ন হয়নি পার্বত্য শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা। বন্ধ হয়নি সংঘাত, কাটেনি ভূমি জটিলতা। অব্যাহত রয়েছে খুন, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার ও সন্ত্রাসী কর্মকা-।
এ অবস্থায় আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি। ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে এ চুক্তি সই হয়। এ উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয়রা বলছেন, আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি নিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর দ্বন্দ্বের কারণে পার্বত্য জেলাগুলোর পরিবেশ দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। নিজেদের স্বার্থে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতি ভেঙে এখন চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। চার সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারের কারণে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। পার্বত্য এলাকায় শান্তিচুক্তির পর যেসব হত্যাকা- হয়েছিল, তাদের অধিকাংশই বাঙালি; এক-তৃতীয়াংশ পাহাড়ি। বাঙালিরা খুন হয়েছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও চাঁদাবাজির জের ধরে। অন্যদিকে পাহাড়িদের অধিকাংশই নিহত হয়েছে দলীয় কোন্দলের কারণে।
চুক্তির ফলে শান্তি বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। সরকার তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। কিন্তু এ চুক্তির ২৫ বছর পার হলেও পাহাড়ে এখনো পুরোপুরি শান্তি ফেরেনি। এখনো ঘটছে গোলাগুলি, রক্তক্ষয়ী সংঘাত, সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, খুন, গুম ও অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকা-। শান্তি চুক্তির বছর যেতে না যেতে প্রতিষ্ঠা হয় চুক্তিবিরোধী সংগঠন ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট’ (ইউপিডিএফ)। এর পর থেকেই শুরু হয় পাহাড়ে দুই আঞ্চলিক দলের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। ২০০১ সালে তিন বিদেশিকে অপহরণের মাধ্যমে পাহাড়ে শুরু হয় অপহরণ বাণিজ্য। পরে ২০০৭ সালে জনসংহতি সমিতি থেকে বের হয়ে ২০১০ সালে আরেক আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালে এসে ইউপিডিএফ থেকে বের হয়ে আরেকটি সংগঠনের জন্ম হয়। যেটি ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে পরিচিত। এর পর বিভিন্ন সময় চার পক্ষের কর্মীসমর্থক হত্যার মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চলে।
২৫ বছরেও চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সরকারকে দোষারোপ করেছে ‘জেএসএস’। চুক্তির ধারা বাস্তবায়ন নিয়ে চলছে দুপক্ষের মতবিরোধ। এ ২৫ বছর ধরে ‘জেএসএস’ চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে রাজপথে সক্রিয় ছিল। অন্যদিকে ইউপিডিএফ সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ পার্বত্যাঞ্চলে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে জেএসএস (সংস্কারপন্থি) পক্ষও চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করছে। তবে চুক্তি নিয়ে তেমন কোনো কথা এখনো ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) পক্ষ থেকে শোনা যায়নি।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুজন চাকমা বলেন, পাহাড়ে শান্তিচুক্তি করা হলেও চুক্তির সুফল ভোগ করছে এখানকার বাঙালিরা। তাদের কোথাও চলাচল বা কাজ করতে বাধা নেই। কিন্তু উপজাতিদের ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে গেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি বিভূ রঞ্জন চাকমা জানান, দীর্ঘ সময় পার হলেও চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ বিষয় এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার বরং পার্বত্য চুক্তিবিরোধী বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে সরকার বলছে, চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেছেন, শান্তিচুক্তির কারণেই পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাহাড়ের মানুষ উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে।

দৈনিক আমাদেরসময়

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host