সুদ ও জামানতমুক্ত ঋণ হতে পারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আশীর্বাদ

প্রকাশের তারিখ: ডিসেম্বর ৩০, ২০২২ | ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

স্টাফ রিপোর্টার :
সুদ ও জামানতমুক্ত ঋণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য হয়ে উঠতে পারে আশীর্বাদ এবং দাতাদের জন্য বরকতের কারণ। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে করেন বর্ধিত ও বিকশিত’। (সূরা বাক্বারাহ: ২৭৬) সুদের কুফল সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ৬টি আয়াত এবং মহানবী মুহাম্মদ (স.)-এর ৪০টিরও বেশি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ থেকে সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা সম্যক জ্ঞান লাভ করি। সে কারণেই একটি সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সম্পৃক্ততা একান্ত জরুরি।

জাতীয় প্রেসক্লাবের মওলানা আকরম খাঁ হলে আজ বৃহস্পতিবার ‘সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা : সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। সাক্ষর শিক্ষা ও গবেষণা ফাউন্ডেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘হেল্পআদারবিডি ডটকম’-এর তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। সাক্ষর শিক্ষা ও গবেষণা ফাউন্ডেশনের পরিচালক, বিশিষ্ট সাংবাদিক মুহাম্মদ সানাউল্লাহর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট ব্যাংকার ড. কামাল উদ্দিন জসিম। প্রধান আলোচক ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট ড. মো. মিজানুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাক্ষর শিক্ষা ও গবেষণা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কবি রফিক হাসান। হেল্পআদারবিডি ডটকম-এর সমন্বয়ক এ কে এম মুন্তাসির আহমদ-এর সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সাংবাদিক ও গবেষক মীর লুৎফুল কবীর সাদী ও সাক্ষর শিক্ষা ও গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী।

বক্তারা বলেন, ইসলামে সুদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে সুদকে হারাম বলে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের দেশের আলেম সমাজ দীর্ঘদিন ধরে সুদের বিরুদ্ধে ওয়াজ-নসিহত করলেও সুদ থেকে বাঁচার কোনো পদ্ধতি বা দিকনির্দেশনা দিতে পারেননি। এমনকি বিশ্বের কোথাও এর কোনো নজির আমরা খুঁজে পাইনি। ফলে অনেকের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সুদের বেড়াজালে আটকে পড়ছে। সরকারি-বেসরকারী ব্যাংকগুলোও পরিচালিত হয় সুদ বা লাভের ওপর ভিত্তি করে। বক্তারা বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারি দেখা দিলে আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কিছুটা সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করি। দেশে ডিজিটাল পদ্ধতির বিকাশের সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা সুদবিহীন আর্থিক লেনদেনের একটি পদ্ধতি গড়ে তোলার চেষ্টা করি। আমাদের সামনে কোনো মডেল না থাকায় আমরা নিজেরাই একটি মডেল তৈরির চিন্তা-ভাবনা করি। আমাদের কিছু বন্ধু- বান্ধবের কাছে বিষয়টি তুলে ধরলে তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ঋণদান পদ্ধতি সম্পর্কে বক্তারা বলেন, আমরা হেল্প আদারবিডিডটকমের অধীনে তিন ধরনের স্বেচ্ছাসেবী গড়ে তোলার চেষ্টা করি। প্রথম ধরনের স্বেচ্ছাসেবী হচ্ছেন ‘দাতা স্বেচ্ছাসেবী’ যাঁরা টাকা ফি সাবিলিল্লাহ দান করে দেন। দ্বিতীয় ধরনের স্বেচ্ছাসেবী হচ্ছেন ‘জমাকারী স্বেচ্ছাসেবী’ যাঁরা একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমা রাখেন এবং সময় শেষ হলে টাকা ফেরত নেন, কিন্তু কোনো সুদ বা প্রফিট পান না। আর তৃতীয় ধরনের স্বেচ্ছাসেবী হচ্ছেন ‘গ্রহীতা স্বেচ্ছাসেবী’ যাঁরা টাকা নেন, কিন্তু কোনো ধরনের সুদ বা প্রফিট দেন না। প্রথমে একজন গ্রাহক পাবেন এক হাজার টাকা। তিন মাস পর ফেরত দিলে তিনি পাবেন দুই হাজার টাকা। দুই হাজার টাকা ফেরত দিলে পাবেন চার হাজার টাকা। চার হাজার টাকা ফেরত দিলে পাবেন আট হাজার টাকা। আট হাজার টাকা ফেরত দিলে পাবেন ১০ হাজার টাকা। এ ক্যাটাগরিতে এটাই সর্বোচ্চ পরিমাণ। এ পরিমাণ টাকা নিতে তাঁদের কোনো রকমের অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে না। যে পরিমাণ টাকা নেবে সেই পরিমাণ টাকাই তিনি ফেরত দেবে।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host