আদর্শ মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান চরফ্যাশন সরকারি টিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়

প্রকাশের তারিখ: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ | ৯:৫৮ অপরাহ্ণ

এম লোকমান হোসেন /এম এইচ হীরা:চরফ্যাশন সরকারি টি.ব্যারেট মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাংলাদেশের ভোলা জেলার অন্তর্গত চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্কুলটি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলা সংস্করণে জাতীয় পাঠ্যক্রমটি অনুসরণ করে। মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, বরিশাল এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত স্কুলটি। যার স্কুল কোড-১০১২৯৬। বিদ্যালয়টি চরফ্যাশন উপজেলার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। ব্রিটিশদের রাজত্বকালে এখানে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলা কালেক্টর মিঃ ট্যাফনাল ব্যারেট ১৯৩২ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এই বিদ্যালয়ের পক্ষে ১২৫ একর জমি দান করেছিলেন। তৎকালীন এ অঞ্চলে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ব্যক্তিরা এই স্কুলে শিক্ষকতার সাথে জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে আহমাদুল্লাহ মাস্টার, মুগবুল আহম্মাদ বি বি টি, বাবু সুরেন্দ্র মোহন দত্ত,আমজাদ হোসেন ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ছিলেন। এটি একটি জুনিয়র স্কুল হিসাবে স্বীকৃত ছিল। তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এটি একটি উচ্চ বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৪৮ সালে এই স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেন এবং তারা সকলেই পাস করেন। এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা এসএস সি পরীক্ষায় বিভিন্ন সময়ে সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিল। ক্রেডিট সহ এই স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন মিঃ শ্রুরেন্দো মোহন দত্ত। স্কুলটি ২০০৮ সাল থেকে একটি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃত।
স্কুলে একটি ভাল কম্পিউটার ল্যাব, মূল্যবান যন্ত্র সমৃদ্ধ একটি বিজ্ঞান পরীক্ষাগার রয়েছে এবং বিভিন্ন ধরণের বই সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানের শিক্ষা ব্যবস্থার দিক দিয়ে বরিশাল বোর্ডের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এতে বিভিন্ন সময়ে স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ধাপে ধাপে এই প্রতিষ্ঠানকে উন্নত শিক্ষার মানদন্ড হিসেবে গড়ে তোলেন। বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোঃ তানভীর আহমেদ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মিসেস তাসলিমা বেগম এছাড়াও ১৭ জন শিক্ষকের যথাযথ প্রচেষ্টা ও তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠানের গুণগত মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করতে শিক্ষকগণ প্রতিনিয়ত কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও ২ জন সহকারী শিক্ষক কাম অফিস সহকারী ও ৩ জন কর্মচারী রয়েছেন। অফিস সহকারি জনাব মোঃ মুসলেউদ্দিন মুসলিম শিক্ষকতার পাশাপাশি উক্ত প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালনে ও অফিশিয়াল সকল কর্ম অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সম্পাদন করছেন এবং তার সহযোগিতা পূর্ণ আচার-আচরণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারী ছাত্র ও অভিভাবকবৃন্দ খুবই সন্তুষ্ট।
আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ও জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্র ও ছাত্রী একত্রে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে যা শুরু থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ছিল না এছাড়াও ছিল না মহিলা শিক্ষক যেখানে বর্তমানে ৬ জন মহিলা শিক্ষক বিদ্যমান।
উক্ত বিদ্যালয়টি চরফ্যাশন উপজেলার একমাত্র সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় হওয়ায় এর শিক্ষা ব্যবস্থাও যুগান্তকারী মডেল হিসেবে সুপরিচিত। এর তিনটি সুসজ্জিত আধুনিক ভবন রয়েছে। রয়েছে বিজ্ঞান, ব্যবসা ও মানবিক শাখার জন্য ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী কক্ষ ও ভিন্ন ভিন্ন পাঠদানের সুব্যবস্থা। বিদ্যালয়টি অত্র উপজেলার একমাত্র গৃহৎ বিদ্যালয় হওয়ায় এর শিক্ষার্থীর সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। এতে ছাত্র ও ছাত্রী মিলে প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থীর নিয়মিত পাঠদান হয়। আকর্ষণীয় মননশীল ইউনিফর্ম এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কে আরো জাগরিত করে তুলেছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড বেইজ এবং ইউনিফর্ম পরিধান করে বিদ্যালয়ে প্রবেশ বাধ্যতামূলক। বিদ্যালয়টির শ্রেণি কার্যক্রম সুশৃংখল ভাবে পরিচালিত হয় বলে শিক্ষার্থীরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারেন খুব সহজেই। প্রতিটি শ্রেনী কক্ষ মাল্টিমিডিয়া ক্লাস উপযোগী করায় শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন আধুনিক শিক্ষার সকল সুবিধা। বিদ্যালয়ের সামনে বৃহৎ আকৃতির একটি খেলার মাঠ থাকায় শিক্ষার্থীরা শরীরচর্চা সহ সকল খেলাধুলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করছে। এটি শহরের মধ্যস্থলে হওয়ায় এর চতুর্দিকের পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম এবং এর পাশে উন্নত মানের মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। রয়েছে শিশু পার্ক। বিদ্যালয় কর্তৃক জাতীয় দিবসগুলো যথাযথভাবে উদযাপন করা হয় এছাড়াও সহ শিক্ষামূলক সকল কর্মকান্ড বিদ্যালয়ের শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হয়।
এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ২০১৯ সাল পর্যন্ত জেএসসিতে পরীক্ষার ফলাফল এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল বরিশাল বোর্ডের সেরা ১০ মধ্যে থাকে। জাতীয় পাঠ্যপুস্তক এর সংস্করণে বাংলা ভার্সন এবং দিবস শাখায় ছাত্রছাত্রী সম্মিলিত সহযোগে শ্রেণীতে পাঠদান করানো হয়। পুরো বইকে বছরে দুইটি পরীক্ষা অনুযায়ী সিলেবাসে ভাগ করে সম্পন্ন করা হয়। প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারিক ক্লাস মাল্টিমিডিয়া ক্লাস এবং বিভিন্ন নিত্য নতুন কৌশল ব্যবহার করে ক্লাসকে মনোমুগ্ধকর ও শিক্ষার্থীদের মনোযোগ তৈরি করা হয় যা সচরাচর প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান নয়।
জনাব আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাক- এমপি, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আইনজীবী সহ বিভিন্ন বিসিএস ক্যাডার বর্গ এক সময় উক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলেন। খেলাধুলায় উক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জাতীয় পর্যায়ে পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। করেছে স্কাউটে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে সেরা পারফরমেন্স শেখ রাসেল স্বর্ন পদক অ্যাওয়ার্ড-২০২২ অর্জন করে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের শুরু থেকে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান, প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ গার্লস গাইড শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ স্কাউট শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী, গার্লস গাইড শিক্ষার্থী, স্কাউট শিক্ষার্থী উপজেলা জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয় অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে।
বর্তমানে শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়নে শ্রেণিকক্ষে সকল শিক্ষা উপকরণ আধুনিক ও ডিজিটাল ক্লাসরুম রয়েছে যাতে বিদ্যমান প্রযুক্তির আধুনিক ধাপ প্রজেক্টর ভিত্তিক শিক্ষা পাঠান করা হয়। পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে শ্রেণীকক্ষ পরিচালনা এবং আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ ধাপে এগিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অত্যাধুনিক ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব যাতে একসাথে শিক্ষার্থীকে প্রযুক্তিগত শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব। এতে রয়েছে ডেক্সটপ ল্যাপটপ প্রজেক্টর ইন্টারনেট সহ অন্যান্য প্রযুক্তির প্রয়োজনীয় সামগ্রী। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ডিজিটাল সাইন্স ল্যাব যা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং আধুনিক। যাতে রয়েছে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও কেমিক্যাল। যার দ্বারা শিক্ষার্থীরা বাস্তবমুখী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাওয়ার পাশাপাশি নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারে। সকল উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শ্রেণি শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছেন যা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিক্ষার্থীরা সক্ষম।
এছাড়াও বিশেষ করে কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটির জন্য শিক্ষার্থীদেরকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা শামসুন্নাহার স্নিগ্ধা এর সম্পূর্ণ তত্ত্বাবধানে শেখানো হয় সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, বিতর্ক প্রতিযোগিতা সহ অন্যান্য সকল শিক্ষামূলক কার্যক্রম।
পরিশেষে বলা যায় উক্ত বিদ্যালয়টি ভোলা জেলার গৌরব।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host