৭ মাস বিদ্যুতের আলো দেখে না ভোলার ৩ ইউনিয়নের মানুষ

প্রকাশের তারিখ: জানুয়ারি ২১, ২০২৩ | ৬:২৫ অপরাহ্ণ

ভোলা প্রতিনিধি ::: দ্বীপ জেলা ভোলা। যার চারপাশটা মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীবেস্টিত। মেঘনার সাড়ে চার কিলোমিটার নদী পাড়ি দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলে বিদ্যুৎ পৌঁছে যায় ভোলা সদর ও দৌলতখান উপজেলার মাঝেরচর, মদনপুর ও মেদুয়া ইউনিয়নে।

সেই মদনপুর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি ঘরে জরাজীর্ন অবস্থায় বসবাস করছেন বিবি ছকিনা। স্বামীকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বসবাস করছেন খড়ের ঘরটিতে। বসার জন্য একটি কাঠের চেয়ার না থাকলেও একটু শান্তির আশায় অন্যদের মতো ফ্যান, লাইট ও ফ্রিজ ক্রয় করেছেন বিদ্যুত আসার আনন্দে। তিন মাস ভালোই চলছিল সব। গতবছরের ২৬ জুন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় চরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এতে আশার আলো নিভে যায় বিবি ছকিনার। সাত মাস বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় চরম দুর্ভোগে আছেন ছকিনার মতো হাজারো পরিবার।

বিবি ছকিনা বলেন, ‘আগেই ভালো ছিলাম। যেমন ভাবেই হোক সোলার কিংবা তেল দিয়ে কুপি জ্বালিয়ে জীবন চলেছে। সবকিছুই একটা ধারাবাহিকতা ছিল। বিদ্যুৎ দিতে পারবে না, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকবে তাহলে দেওয়ারই দরকার কি ছিল? টিভি, ফ্রিজ, ফ্যানসহ যা কিনেছি সবই সমিতির কাছ থেকে লোন দিয়ে। তা বিদ্যুৎ না পেলে মেঘনায় ফেলে দেওয়া ছাড়া কী করবো এসব দিয়ে।’

মেঘনা মধ্যবর্তী ভোলা সদর ও দৌলতখান উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে সাত মাস বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় চরম দুর্ভোগে ঐসব গ্রামের মানুষেরা। কবে নাগাদ পাবে তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা আর বন্ধের উপক্রম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

এদিকে স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী মো. রুহুল আমিন। এলাকায় বিদ্যুৎ আসার খবরে আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তা থমকে আছে গত ৭ মাস ধরে। বিদ্যুতের সঙ্গে সম্পর্কিত এমন একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন দৌলতখানের মদনপুর ইউনিয়ন পাটোয়ারী বাজারে। এনজিও থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা দিলেও বিদ্যুৎ না থাকায় দোকান রয়েছে বন্ধ। একই অবস্থা ঐ বাজারসহ আশপাশের অন্যসব বাজার ব্যবসায়ীদের। একই ধরনের ক্ষোভ রয়েছে অন্য গ্রাহকদের। গ্রামের পর গ্রাম বিদ্যুতের খুঁটি বসিয়েছে। ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় তিনটি ইউনিয়নে। সংযোগের কয়দিন পরেই সাবমেরিন ক্যাবলে সমস্যা দেখা দেয়। তিনটি ক্যাবলের একটিতে সমস্যা হয় ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর। এরপর পুরোপুরি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয় গত বছরের ২৬ জুন।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে জানা গেছে, শুধু সদর ও দৌলতখান উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন সাত মাস ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ৩৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার ৪৭২ কিলোমিটার এলাকার ৭৩টি গ্রামকে দুটি সাব স্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়। এজন্য আটটি সাবমেরিন ক্যাবল ব্যবহার করা হয়েছে। ৩৪ হাজার ৪৫০ জন গ্রাহক এই সুবিধার আওতায় এসেছে।

ভোলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন তিনটি ইউনিয়নকে পুনরায় বিদ্যুতের আওতায় আনার জন্য কাজ চলছে। এজন্য দুই কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে। জাহাজ নোঙর করায় এই ক্ষতি হয়েছে, ঐ এলাকাকে ডেঞ্জার জোন ঘোষণা করে ক্যাবল পুনঃস্থাপন অথবা নতুন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে।’

আলতাফ হোসেন আরও বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিসির সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। আশা করছি একটা উপায় বের করা সম্ভব হবে। কোনটাই না হলে সোলার গ্রিড করে বিদ্যুতায়ন করা হবে। তবে, এজন্য জন্য ২০২৩ সাল পুরো অপেক্ষা করতে হবে।’

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host