পটুয়াখালীতে কাজ শেষ না করেই বিল তুলে নিলেন ঠিকাদার

প্রকাশের তারিখ: জুলাই ১০, ২০২০ | ৪:২৬ অপরাহ্ণ

পটুয়াখালী পৌরসভার অডিটরিয়ামের নির্মাণকাজটি গত চার বছরেরও সম্পন্ন করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার সময়সীমা শেষ হয়েছে আরও দুই বছর আগে। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৫৫ ভাগ। এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৬ কোটি ৩৩ লাখ ১১ হাজার ২৬০ টাকা। অথচ সংশ্নিষ্ট ঠিকাদার অর্ধেকের মতো কাজ করে ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে। অর্থাৎ এ প্রকল্প বাবদ বিলের প্রায় শতভাগ টাকা এখন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের পকেটে।

নির্মাণাধীন পৌর অডিটরিয়ামটি অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে দুই বছর ধরে। ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়ার পর প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী এ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর। এমনকি এই প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বৃদ্ধিরও কোনো আবেদন করেননি সংশ্নিষ্ট ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম চাঁন মিয়া। ফলে অডিটরিয়ামটি আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা তাও বলতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষ।

এদিকে পৌর অডিটরিয়ামের নির্মাণকাজটি দ্রুত সম্পন্ন এবং প্রকল্পের কাজের সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন করার জন্য ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম চাঁন মিয়াকে চিঠি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসীম উদ্দিন আরজু স্বাক্ষরিত চিঠিটি চলতি বছর ১৪ জুন ঠিকাদারকে দেওয়া হলেও গত ২৪ দিনেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি ঠিকাদার। বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

পটুয়াখালী পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৪ জুন নিট ৫ কোটি ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করেন ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম চাঁন মিয়া। অথচ এ বিলের ওপর উৎস আয়কর, ভ্যাট ও জামানতের টাকা সরকারি কোষাগারে বা সংশ্লিষ্ট খাতে জমা দেননি তিনি। এমনকি পরিমাপ বইতে লিপিবদ্ধ পানি সরবরাহ, আসবাবপত্র সরবরাহ, শব্দ নিয়ন্ত্রণ ও মঞ্চ ডেকোরেশনসহ অন্যান্য কাজ বাস্তবায়নে পরিমাপের সঙ্গে বাস্তবে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছে না পৌর কর্তৃপক্ষ।

ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম চাঁন মিয়া বলেন, ‘আমি কাজ করব কীভাবে? পৌর মেয়রের নির্দেশে নির্মাণাধীন অডিটরিয়ামে বাণিজ্য মেলার মালপত্র তুলে রাখা হয়েছে। বরং ওখানে এসব মালপত্র রাখায় আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমার এই ক্ষতিপূরণ দেবে কে? আমি তো এখনও চূড়ান্ত বিল নিইনি। তাহলে শতভাগ টাকা তুলে নিয়েছি কীভাবে এবং পৌর কর্তৃপক্ষই বা আমাকে বিলের শতভাগ টাকা দিল কিসের স্বার্থে?

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসীম উদ্দিন আরজু জানান, পৌরসভার অডিটরিয়ামটির নির্মাণের সময়সীমা শেষ হয়েছে আরও দুই বছর আগে। এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ। অথচ ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম শতভাগ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন। এ প্রকল্পটি যখন হয়েছে তখন আমি এখানে কর্মরত ছিলাম না। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো কার্যক্রম শুরু করেননি তিনি। তাই তাকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২-৩ দিনের মধ্যে আরও একটি চিঠি দেওয়া হবে।

পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, পৌরসভার অডিটরিয়াম নির্মাণ কাজটি অর্ধেকের মতো সম্পন্ন করে সংশ্নিষ্ট ঠিকাদার পূর্ববর্তী পৌর কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিলের শতভাগ টাকাই তুলে নিয়ে গেছে। অথচ গত দুই বছর ধরে কাজটি অসমাপ্ত অবস্থায় অরক্ষিত পড়ে রয়েছে। সংশ্নিষ্ট ঠিকাদারকে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সদুত্তর মেলেনি। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না করলে সংশ্নিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সরকারি টাকা আত্মসাতের দায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host