চাকুরির ভয়ও তাহাকে পাপীয়াদের রংমহল হইতে দূরে রাখিতে পারে নাই

প্রকাশের তারিখ: মে ১৬, ২০২০ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

স্যারের ঈদ মার্কেটিং-৬

ঈদ মার্কেটিং-এ না নেয়ার বিষয়ে স্যার তাহার বিবিজানের সাথে বরিশালের ভাষায় কথা বলিলেও স্যার আসলে বরিশালের না। ছোটখাটো সাইজের এই মানুষটা এক সময় বরিশালের ডিসি ছিলেন। এই সুবাধে মাঝেমধ্যে বরিশালের কথা বলিবার চেষ্টা করিতেন মজা করিবার জন্য। কিন্তু তাহার কথা ঠিক বরিশালের হইতো না। তবু তিনি এই কান্ড মাঝেমধ্যেই করিতেন।
আবার বরিশালেও তাহার বহু কান্ড আছে। এককান্ডে তো তিনি হাফ ধরাও খাইয়াছিলেন। কেলেংকারী মশাল জ্বলেজ্বলে অবস্থা। মোটা টাকা দিয়া একটা আপোস রফা করিয়াছেন। কিন্তু কিছুদিন পর তাহার কাছে আবার টাকা দাবি করা হইলো। তিনি দিলেন। এক পর্যায়ে বুঝিলেন, টাকা দিয়া আর রেহাই পাওয়া যাইেবে না। ধরা খাওয়ানের ব্যবস্থা হইয়া গিয়াছে। তখন তিনি বরিশার মহানগর পুলিশের বড় সাহেবের কাছে গেলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পোস্টিং-এ থাকার সুবাদে এই পুলিশ তাহার পূর্ব পরিচিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে থাকার সময়ও তাহার এক কেলেংকারীর গল্প আছে। নাদুসনুদুস এক কর্মচারীকে তিনি নাকি জড়াইয়া ধরিয়াছিলেন। রটিয়াগেলো, তাহার অন্য তরিকার দোষও রহিয়াছে। তবে সেই বিষয়টা তেমন কোন সমস্যা করে নাই। বরিশালের বিষয়টা উল্টা হইয়া গেলো। পুলিশের সাহায্য লইতে হইলো। ফিটিং পার্টি পুলিশের চাপে একটু দমন দশায় পড়িলো। ইহার কয়েকদিন পর স্যার বদলী হইয়া ঢাকায় নতুন পোস্টিং-এ গেলেন। আগুন পানি নিয়া তাহার কারবার শুরু হইলো। স্যারে আসলে চাঁন কপাল। শুরুতেই তিনি একটা বড় নিয়োগ বানিজ্য হাতে পাইলেন। তয় শুরুতে তিনি নিজেই একটু প্রেসানীর মধ্যে পড়িয়াছিলন। কিন্তু তাহাতে তাহার বিশেষ কিছু আটকায় নায়। আসলে সরকাররি লোকগো আটকা আটকির দিন বহু আসে শেষ হইয়া গিয়াছে। এখন সবাই কেমন যানো ‘আমরা আমরাই তো’ হইয়া গিয়াছেন। এই তরিকায় রহিমের পাপ করিম ঢাকে, করিমের আকাম রহিম আড়াল করে।
একদম ঠিক সময় স্যার বদলি হইয়া বরিশাল ছাড়িয়াছেন। তাহা না হইলে আমাদের স্যারকে নিয়া জামালপুরের ডিসির মতো আর এক কাহন রচিত হইতে পারিতো।
তবে এই রকম কাহন বহু স্যারেরই আছে। কেবল প্রকাশ পায় না। যে কারণে স্যারেরা ড্যাম কেয়ার থাকেন। তবে পাপী পাপিয়া ধরা পড়িবার পর অনেক স্যারের বড়-ছোট বাধরুম বন্ধ হইয়া যাওনের জোগার হইয়াছিলো। এই দলে আমাদের স্যারও ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ মেহেরবান। পাপীয়ার খাস মেহমানদের খবর কাছিমের মতো ইকটু কল্লা উচাইয়া আবার ভিতরে টান দিলো। সেইটানই টান! আর বাহির হইলো না। ইহার পর করোনা আসিয়া হাজির হইলো। পাপীয়া কাহন ধামাচাপা পড়িয়াগেলো।
আসলে আমাদের স্যার না আছেন কোথায়! তিনি সর্বত্র বিরাজমান। আর ঈদ মার্কেটে যাইবেন না, তাহা কী হয়? করোনা মহামারি তাহাকে ঘরে রাখিতে পারিলো না! চাকুরির ভয়ই তাহাকে পাপীয়াদের রংমহল হইতে দূরে রাখিতে পারে নাই। এইসব বিষয়ে স্যার খুব সাহসী মানুষ। কিন্তু ম্যাডামের সামনে একেবারে সেই প্রাণী, যেই প্রাণী মাঝেমধ্যে ম্যাও করে। আমাদের স্যার তাও করেন না। কিন্তু ঈদ মার্কেটে যাইবার বিষয়ে তিনি কোন সাহসে ম্যাডামের মুখের উপর ‘না’ বলিতে পারিলেন? আশ্চার্য।
স্যারের অভূতপূর্ব এই সাহস ও ক্ষমতার নেপথ্যে বিশেষ রহস্য নিহিত রহিয়াছে। এই যাদুর কাঠির নাম প্রমিলা। প্রাপ্ত হিসাব মতে, এইটা স্যারের ২১ নম্বর প্রাপ্তি। সংযোগ সৃষ্টি হইয়াছে মাত্র মাস তিনেক আগে। ইহার দুই মাস পরই করোনা জাকিয়া বসিলো। স্যার এবং প্রমিলার মাঝখানে এখন করোনার পাহাড় হইয়া দাড়াইয়াছে। কিন্তু স্যার এই পাড়ার ডিঙ্গাইবেনই। প্রমিলাকে তিনি কথা দিয়াছেন। কারণ এইবার তাহাদের প্রথম ঈদ !  চলবে….

লেখক: আলম রায়হান

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host