আসাধারণ গল্প ‘রঙিলা সাধু’

প্রকাশের তারিখ: মে ৩, ২০২৩ | ২:৪৪ অপরাহ্ণ

শুভজ্যোতি মন্ডল মানিক

হিমাংশু চক্রবর্তী ভিষণ আইন বাজ প্রকৃতির মানুষ ছিল।ভুল ভাল কথা বার্তা নিজে যেমন বলতেন না তেমনি অন্যের থেকেও প্রত্যাশা করতেন না।সবসময় রঙিন ধূতি পাঞ্জাবি পরিধান করতেন।ধর্মীয় শাস্ত্র যেমন ভালো জানতেন তেমনি তন্ত্রমন্ত্র বিদ্যায় ও পারদর্শী ছিলেন।একারনে এলাকার লোকজন তাকে রঙিলা সাধু বলেই ডাকতো।শোনা যায় দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে তন্তমন্ত্র গুনেই এনেছিলেন।এক সময় যাত্রার দলে রোল করতেন।বয়স হয়েছিল বিধায় শেষ জীবনে ধর্মকর্মে বেশ মনোযোগী হয়েছিলেন;পাশাপাশি তন্ত্রমন্ত্র সাধনা করতেন মানুষের উপকারের জন্য।লোকের বাড়ির সীমনা,দেও দানবের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রায়ই লোকজন তার কাছে আসতো।কাউকে ভূত পিশাচে ধরলে রঙিলা সাধুর ডাক পড়তো।একদিন বিকাল বেলা কালুর হাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন,পথিমধ্যে এক লোক এসে রঙিলা সাধুর পা জড়িয়ে ধরে;আমার মেয়েটাকে বাঁচান।কি হয়েছে?সবার সাথে বাজে আচরণ করছে;মা -বাপ, ভাই কাউকে সহ্য করতে পারছে না;নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়ছে।ধারে কাছে কেউ গেলে বটি নিয়ে তেড়ে আসে।রঙিলা সাধু বাড়িতে উপস্থিত হতেই কাছে আসবি না বলে চিৎকার করে;বটি নিয়ে তেড়ে আসে শারমিন।রঙিলা সাধু হাতে একমুঠো ধূলো মাটি নিয়ে মন্ত্র পড়ে কুন্ডলী দেয়;লোকজন অসুস্থ মেয়েটাকে ধরে এনে কুন্ডলীর মধ্যে বসায়।সবাইকে কিল ঘুষি,কামড় মারতে থাকে,হাতে খানিকটা জল নিয়ে মন্ত্র পড়ে শারমীনের চোখে মারতেই কিছুটা ঠান্ডা হয়,চোখ বড় বড় করে রঙিলা সাধুর দিকে তাকিয়ে থাকে।চোখ নামা নইলে চোখ গেলে দেবো বলে সাধু ধমক মারে।শুকনো লঙ্কা আর কয়েক টুকরা হলুদ নিয়ে আসতে বলে বাড়ির লোকদের।লঙ্কা পোড়া দিয়ে শারমীনের নাকে চেপে ধরে;বল কে তুই?বলবো না।বলতে তোকে হবেই;ধপাধপ লাঠি দিয়ে মেয়েটাকে কয়েকটা আঘাত করে।মেয়েটা কিছুটা নরম হয়,বল কে তুই?বলবোনা;বলবিনা?হলুদ পুড়িয়ে নাকে ঘ্রাণ নেওয়ায়;দাঁতে কিটিমিটি মারতে থাকে মেয়েটা।বল কে তুই? না বললে আবার মারবো।বলছি,বলছি ;আমি রক্ত পিশাচ।কোথা থেকে ধরেছিস মেয়েটাকে?পুকুর পাড়ে বাঁশ ঝাড়ের গোড়া থেকে।কখন ধরেছিস?দিন পনেরো আগে মেয়েটা যখন অশুচি ছিলো।কেন ধরেছিস?ওকে নিয়ে যেতে চাই।নিতে তো পারবি না;ছাড়তে হবে।আপনি বললে না ছেড়ে উপায় আছে?তবে তাই কর।যেখান থেকে ধরেছিস সেখানের বাঁশঝাড়ের একটা বাঁশ ভেঙে স্বাক্ষী স্বরুপ রেখে যাবি।রক্ত পিশাচ কথা অনুয়ায়ী কাজ করে;মেয়েটা কিছু সময়ের জন্য তন্দ্রাঘোরে থাকে।রঙিলা সাধু কালুর হাটের দিকে রওনা হয়;একটা বড় ইলিশ মাছ কিনে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে।বাড়ি আসার পথে একটা ফাঁকা রাস্তা;ঘোর সন্ধ্যা;পিছনে কে যেনো রঙিলা সাধুকে লক্ষ্য করছিলো।লোকজনের সাড়াশব্দ নেই;বুঝতে বাকি রইলো না;একে তো মঙ্গলবার।পিছনে ফিরলেই বিপদ;রাগ পায়ে হাটছিলো তখন।বাড়ির কাছাকাছি বাঁশের সাঁকো;শুন্য ভরে উঠলে মহাবিপদ ;আঁচ করতে পারছিলো বিষয়টা;খালের ভিতর দিয়ে হেঁটে রঙিলা সাধু বাড়ি আসে।ইলিশ মাছটা আগুনে সেঁকা দিয়ে ঘরে তোলে;রঙিলা সাধু বাড়ি থেকে বের হবার সময় নিজের শরীর বন্ধক করতে ভুলে গিয়েছিল।

 

 

শুভজ্যোতি মন্ডল মানিক,

গ্রমঃপাথুরিয়া,পোস্টঃকালিবাড়ী বাজার,মোড়েলগঞ্জ- বাগেরহাট

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host