বছরের পর পরিচালক সমিতি এফডিসি’র বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল দিচ্ছেনা

প্রকাশের তারিখ: মে ২৩, ২০২৩ | ৬:২৪ অপরাহ্ণ

বিনোদন ডেস্কঃ

কেপিআইভুক্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) অভ্যন্তরে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনের সমিতির অফিস স্থাপনের বৈধতা নিয়ে শোবিজ অঙ্গনসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্পর্শকাতর কেপিআই এলাকার অভ্যন্তরে বিভিন্ন সমিতির অফিস কীভাবে আর কোন যুক্তিতে থাকে এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ।

এদিকে, এফডিসি’র মত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে পরিচালক সমিতিসহ বিভিন্ন সমিতির অফিস থাকার কারণে কেপিআই নীতিমালা ভঙ্গের পাশাপাশি সরকারি কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সুধীজন। যুগের পর যুগ সমিতির নামে সরকারি জায়গা দখল করে আসলেও এই নিয়ে খোদ এফডিসি কর্তৃপক্ষই নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এটা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে বিভিন্ন মহলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, সচিবালয়সহ দেশের সকল কেপিআই এলাকায় একই নিয়ম চালুর কথা থাকলেও কোন নীতিমালা ও কীসের ভিত্তিতে এফডিসির অভ্যন্তরে পরিচালক সমিতিসহ বিভিন্ন সমিতি অফিস প্রতিষ্ঠা করে সরকারি জমি দখল করে আছে – এই বিষয়টি নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। এক দেশের কেপিআই ভুক্ত এলাকায় দুই নিয়ম কীভাবে থাকে সেই বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নেয়ায়ও বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।

জানা গেছে, চলচ্চিত্র নির্মাণে শুটিং ফ্লোর, লাইট, ক্যামেরা, এডিটিং প্যানেল, ডাবিং থিয়েটার ভাড়া দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি সুবিধা প্রদানের জন্যই বিএফডিসি’র প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্পী, নির্মাতা, কলাকুশলীদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রদানের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এফডিসির প্রতিষ্ঠা করলেও এটি এখন বিভিন্ন সমিতির কার্যক্রম, অসামাজিক কার্যকলাপ আর আড্ডার আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এফডিসির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকির অভাবেই অবৈধভাবে দখল করে রাখা সরকারি জায়গায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠা করা সমিতির স্থাপনাগুলোর নেতারা তাদের সাংগঠনিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছে।

চলচ্চিত্র নির্মাণ জ্যামিতিক হারে কমে আসাতে এই সমিতিগুলোর কার্যকারিতা নিয়েও সাধারণ মানুষের মাঝে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেপিআই ভুক্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কোন নীতিমালার আলোকে পরিচালক সমিতিসহ বিভিন্ন সমিতি দীর্ঘদিন যাবত সরকারি স্থাপনা দখল করে আছে এবং এর বৈধতা কতটুকু – এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিএফডিসির জন সংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়া বলেন, চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী যুগের সময় পরিচালক, শিল্পী ও কলাকুশলীদের এফডিসিতে নিয়মিত যাতায়াতের অনেক বেশি প্রয়োজনীয়তা ছিলো। নির্মাতাদের মেধার উৎকর্ষতার জন্য তখন ডিরেক্টরস স্টাডি রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা এটিকে সমিতির অফিস বানিয়ে ফেলে। রাষ্ট্রীয় অন্যান্য সকল কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মতো এফডিসিতেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। দেশের অন্যসব কেপিআইভুক্ত এলাকার মত এফডিসিতেও একই নিয়ম প্রযোজ্য থাকুক সেটা আমরাও চাই। চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রপস বা সরঞ্জাম রাখার জন্য আমরা স্টোর রুম ভাড়া দিয়ে থাকি।

এফডিসির এই কর্মকর্তা আরো বলেন, বছরের পর পরিচালক সমিতি বিদ্যুৎ বিল ও পানির বিল না দেওয়াতে এফডিসির কার্যক্রম পরিচালনা করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এফডিসির অভ্যন্তরে পরিচালক সমিতিসহ অন্যান্য সমিতির অফিস না থাকলে এফডিসি কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম আরও সহজে পরিচালনা করতে সক্ষম হতো বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফডিসির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। কেপিআইভুক্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সমিতির অফিস থাকার বৈধতার বিষয়ে জানার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। দেশের সকল কেপিআইভুক্ত এলাকার সাথে এফডিসির মতো কেপিআইভুক্ত এলাকায় দুই নিয়ম থাকবে নাকি একই নিয়ম থাকবে সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষায় আছেন দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host