লিঙ্গের ক্যান্সার, যৌনবাহিত রোগ ও মূত্রপথের সংক্রমণ ঝুঁকি কমায় ‘খতনা’

প্রকাশের তারিখ: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

বাণী ডেস্ক: সরকারি বিজ্ঞান কলেজের ছাত্রাবাসে আমার রুমমেট ছিল সুজিত দাস। পরবর্তীতে সে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে। বিজ্ঞান কলেজের ছাত্রাবাসে থাকাকালীন ও অদ্ভুত সব গল্প বলতো, একদম সত্যি বলার মতো।

একবার বললো, মুসলমান মরার পর কি হয় জানিস? আমি হা করে তাকিয়ে থাকি!

তারা সব জোনাকি পোকা হয়ে ঘুরে বেড়ায় বনে-বাদাড়ে।

কেন?

মরার পর আল্লাহ চেক করে বলেন, তোমাকে তো যেভাবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলাম সেভাবে আসোনি। তোমার চামড়া কোথায়?

মুসলমানরা কাঁচুমাঁচু করে বলে, আল্লাহ আমি কি করবো? হাজাম তো ছোট্টবেলায়ই মুসলমানি করানোর সময় ফেলে দিয়েছে।

আল্লাহ বলেন, তোমাকে একটা উজ্জ্বল বাত্তি দিয়ে দিলাম। যাও, খুঁজে নিয়ে আসো।

সেই থেকে তারা দিবানিশি শরীরের বাত্তি জ্বালিয়ে চামড়া খুঁজে বেড়াচ্ছে।

সেই বয়সে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলায় দুললেও আজ আমি হাসি।

ইন্টার্ন ডাক্তার হিসেবে সার্জারি ওয়ার্ডে নাইট ডিউটি করছি। হঠাৎ সুভাষ বাবু নামে এক ভদ্রলোক রাত আড়াইটায় ওয়ার্ডে ইমারজেন্সি এডমিশন নিয়ে এলো যৌনাঙ্গে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে, ফাইমোসিস। রাতেই ভদ্রলোকের সারকামসিশন (খতনা) করলাম।

নিমিষেই প্রচণ্ড কষ্টের সমাপ্তি হলো। ভদ্রলোকের মুখে হাসি ফুটলো, সেটা জোনাকিপোকার আলোর মতোই উজ্জ্বল।

মনে পড়লো, বন্ধু সুজিতের কথা, সে-ও কি তবে জোনাকিপোকা হয়ে ঘুরবে?

মুসলিম, ক্রিশ্চিয়ান, ইহুদি সবাই সবাই সারকামসিশন করে।

সর্বপ্রথম এ সুন্নত পালন করেছেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। হজরত সাইদ ইবনে মুসাইয়াব (রহ.) থেকে বর্ণিত, হজরত ইব্রাহিম (আ.) হলেন খতনার সুন্নত পালনকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ২৬,৪৬৭)।

অনেক হাদিস শরিফে এ সুন্নত পালনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফিতরাত, অর্থাৎ মানুষের জন্মগত স্বভাব পাঁচটি- খতনা করা, নাভির নিম্নদেশে ক্ষুর ব্যবহার করা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা ও গোঁফ খাটো করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮৮৯)।

খতনার দ্বারা শরীর অধিক পাকপবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকে। খতনা করালে শিশুদের মূত্রপথের সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়।

প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে খতনা করালে লিঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ হয় ও যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি কমে। বাড়তি চামড়ার নিচে স্মেগমা নামক এক ধরনের সাদা পদার্থ জমে এবং এটিই পুরুষাঙ্গের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, পুরুষের খতনা এইচআইভি বা এইডস প্রতিরোধে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। আফ্রিকার যেসব দেশে খতনার হার বেশি, সেসব দেশে এইডসের হার তুলনামূলক কম।

খতনার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকজাতীয় (ব্যাকটেরিয়া) রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

অস্ট্রেলীয় মেডিকেল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. ব্রায়ান মরিস খতনা নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়, যেসব বালকের সারকামসিশন (খতনা) করা হয়নি, তাদের অপেক্ষাকৃত কিডনি, মূত্রথলি ও মূত্রনালির ইনফেকশন চার থেকে ১০ গুণ বেশি হয়।

তিনি বলেন, সারকামসিশনের (খতনা) মাধ্যমে অন্তত এক-চতুর্থাংশ মূত্রনালির ইনফেকশন হ্রাস করা সম্ভব।

ডা. রুবসন তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন, ১৯৩০ থেকে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার মানুষ আমেরিকায় মূত্রনালির ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে কেবল ১০ জন খতনাকৃত রয়েছে, বাকি সবাই খতনাবিহীন।

এসব দেখে মনে হয়, জোনাকিপোকা হলেও তেমন ক্ষতি নেই।

লেখক:

ডা. তাইফুর রহমান

কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি

জেনারেল হাসপাতাল, কুমিল্লা।

© 2023 বরিশাল বাণী কতৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by Eclipse Web Host