হারুন অর রশিদ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
বরগুনার আমতলী উপজেলার বৈঠাকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াস ব্লক নির্মাণে লেনটিনে রডের পরিবর্তে বাঁশের কাঞ্চি (টুনি) ব্যবহার করা হয়েছে। করোনায় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বড় দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। শনিবার সকালে ওই ওয়াস বøকের মেরামত কাজ শুরু করেতে গিয়ে লেনটিন ও ওয়াল ভেঙ্গে পড়ে। এসময় দেখা যায় লেনটিনের মধ্যে রডের পরিবর্তে বাঁশের কাঞ্চি (টুনি) ব্যবহার করা হয়েছে। রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ওয়াস বøক নির্মাণকারী ঠিকাদার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক নুরজামালকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলা জণস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে বৈঠাকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াস বøক নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করে। ৭ (সাত) লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওই কাজটি পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার মোঃ দেলোয়ার হোসেন নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দরপত্র দাখিল করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক ঠিকাদার নুরজামাল। ওয়াস বøক নির্মাণের শুরুতেই সে নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এতে বাঁধা প্রদান করেন। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সেই বাঁধা উপেক্ষা করে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদার নুরজামাল কাজ সম্পন্ন করেন। তখন নুরজামালের ভয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাজ দেখভাল পর্যন্ত করতে পারেনি। তৎকালিন উপজেলা জণস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ রেজাউল করিমের সাথে আতাত করে ঠিকাদার নুরজামাল নিজের ইচ্ছা মাফিক রডের পরিবর্তে বাঁশের কাঞ্চি (টুনি) দিয়ে ওয়াস বøক নির্মাণ করেছেন। ২০১৭ সালে ওই কাজ শেষ হয়।
ওয়াস বøকের দরজা মেরামতের জন্য খুলতে গিয়েই মুহুর্তের লেনটিনের মধ্যে থেকে বাঁশের কাঞ্চি (টুনি) বেড়িয়ে আসে। তাৎক্ষনিক বিষয়টি ওয়াস বøক মেরামতের দায়িত্বে থাকা রাজমিস্ত্রি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয়দের খবর দেন। প্রধান শিক্ষক রড়ের পরিবর্তে রাশের কাঞ্চি দেখে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মজিবুর রহমানকে জানায়।
রবিবার বিকেলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান ও জণস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ তরিকুল ইসলাম বিদ্যালয় ভাঙ্গা ওয়াস বøক পরিদর্শন করেন। খবর পেয়ে ঠিকাদার নুরজামাল গিয়ে ভাঙ্গা ওয়াস বøক থেকে লেনটিনে ব্যবহার করা বাঁশের কাঞ্চি সরিয়ে ফেলেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ সময় স্থানীয়দের তোপের মুখে সেখান থেকে সটকে পড়েন।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, ওয়াস বøকের ভিতরে লেনটিন ও ওয়াল ভেঙ্গে পড়া নির্মাণ সামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। ভেঙ্গে পড়া লেনটিনের মধ্যে রডের পরিবর্তে বাঁশের কাঞ্চি দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, ঠিকাদার নুরজামাল রডের পরিবর্তে বাঁশের কাঞ্চি দিয়ে ওয়াস বøক নির্মাণ করেছেন। যে কারনে অল্প দিনেই দেয়ালে ফাটল ও লেনটিন ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা ঠিকাদার নুরজামালের বিচার দাবী করছি।
বিদ্যালয় দফতরি মোঃ শাওন খলিফা বলেন, ঠিকাদার নুরজামাল এসে বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা লেনটিনের ভেঙ্গে পড়া অংশ সরিয়ে ফেলেছে। আমি গোপনে ভাঙ্গা লেনটিনের দুইটি টুকরো লুকিয়ে রেখেছি।
রাজ মিস্ত্রি মোঃ সুলতান হাওলাদার বলেন, ওয়াস বøক মেরামতের কাজ শুরু করা মাত্রই লেনটিন ও ওয়াল ভেঙ্গে পরেছে। পরে দেখতে পাই লেনটিনের মধ্যে রাশের কাঞ্চি (টুনি)। তিনি আরো বলেন, সমুদয় ওয়াস বøকে রডের পরিবর্তে আর কতগুলো বাঁশের কাঞ্চি ব্যবহার করেছে তা আল্লাহই জানেন।
বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোসাঃ সুলতানা রাজিয়া বলেন, ওই সময়ে তার কাছে কাজ সম্পাপ্তির প্রত্যায়ন চায়। কিন্তু কাজের মান ভালো না হওয়ায় আমি কোন প্রত্যায়ন দেয়নি বলে জানান। তিনি আরো বলেন, নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে ওয়াস বøক নির্মাণের বছর খানের পরেই লেনটিন ও ওয়ালে ফাটল দেখা দেয় ও দরজায় মরিচা ধরে তা ভেঙ্গে যায়। ওই ফাটল ও দরজা মেরামতের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস “ক্ষুদ্র মেরামতের” জন্য এ বছর বিশ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। শনিবার ওই ওয়াস বøকের মেরামত কাজ শুরু করেতে গিয়ে লেনটিন ও ওয়াল ভেঙ্গে পড়ে। এসময় দেখা যায় লেনটিনের মধ্যে রডের পরিবর্তে বাঁশের কাঞ্চি (টুনি) ব্যবহার করা হয়েছে। বিষয়টি আমি তাৎক্ষনিক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানাই।
এ বিষয়ে ঠিকাদার নুরজামাল রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ওয়াস বøক নির্মাণের কথা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। জানতে চাওয়া হয় কাজ তো আপনি করেছেন তাহলে রডের পরিবর্তে বাঁশ আসলো কোথা থেকে। এর কোন স্বদউত্তর তিনি দিতে পারেননি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদার রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ওয়াস বøক নির্মাণ করেছেন।
উপজেলা জণস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, নির্মাণের সময় আমি এখানে দায়িত্বে ছিলাম না। খবর পেয়ে আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত করে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, বাঁশের কাঞ্চি দিয়ে ওয়াস বøক নির্মাণের কথা শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।