২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গলাচিপায় এ্যাম্বুলেন্স সেবায় চলছে রমরমা ব্যবসা।

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সজ্ঞিব দাস,গলাচিপা (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি।

সরকারি হাসপাতালে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নিয়ে মানুষের বিভিন্ন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর মধ্যে রয়েছে বাড়তি ভাড়া নেয়া, সময়মতো এ্যাম্বুলেন্স না পাওয়া, অযুহাত দেখিয়ে ব্যক্তিগত এ্যাম্বুলেন্সে রোগী নেয়া সহ নানা হয়রানি। এই অভিযোগের ব্যতিক্রম নয় পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখানে রীতিমতো এ্যাম্বুলেন্সে সার্ভিসের নামে চলছে রমরমা ব্যবসা। নির্ধারিত ফি থাকলেও অতিরিক্ত ফি না দিলে মিলছে না সরকারি এ্যাম্ভুলেন্স সেবা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,গলাচিপার ৫০ সজ্জা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি এ্যাম্বুলেন্স ২ টি। ড্রাইভার ২ জন থাকার কথা থাকলেও এই পদ খালি রয়েছে। ফলে এই সুযোগে আউটসোর্সিং এ নিয়োগ প্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ব্যাক্তিগত গাড়ি চালক হিরন প্যাদা সরকারি এ্যাম্বুলেন্সের গাড়ি চালকের দ্বায়িত্ব নিয়েছে। হিরন প্যাদার ২টি ব্যাক্তি মালিকানাধীন এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। সরকারি এ্যাম্বুলেন্স চালানোর সাথে সাথে রোগিদের কাছে তার মালিকানাধীন এ্যাম্বুলেন্সের প্রচার প্রচারনা চালান। বিভিন্ন অযুহাত দিয়ে নিজস্ব এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে বেশি ভাড়ায় রোগী আনা নেওয়া করেন।

এমনকি সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে নিজের ফোন নম্বর বসিয়ে রোগীদের দিচ্ছে ব্যাক্তিগত এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। ওই নম্বরে কেউ ফোন দিলে সরকারি এ্যাম্বুলেন্সের নানা ত্রুটির-অযুহাত দেখিয়ে ব্যাক্তি মালিকানার এ্যাম্বুলেন্সে বেশি ভাড়ায় চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে চালক। বহিরাগত এম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের সাথে তাল মিলিয়ে হাসপাতালের ভিতরে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা ব্যবসা। ফলে দিন দিন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারন মানুষ।

অপর একটি গাড়ির ড্রাইভার আল আমিন বিচ্ছিন্ন উপজেলা রাঙ্গাবালীর জন্য ওয়াটার এ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে নিয়োগ পেলেও তিনি এখন গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে রোগী আনা নেওয়া করেন নিয়মিত। অভিযোগ রয়েছে হিরন ও আল আমিন দুজনের যোগসাজশে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সরকারি এ্যাম্বুলেন্স গলাচিপা থেকে পটুয়াখালী (৭৫০/=) ও বরিশাল (১৫০০/=) টাকা ভাড়া নির্ধারিত করে দিয়েছে কতৃপক্ষ। ভাড়া নির্ধারিত করায় সরকারি এ্যাম্বুলেন্স পাওয়া এখন দুরূহ ব্যাপার। সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে সার্ভিস না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে দরিদ্র রোগী ও রোগীর স্বজনরা। গলাচিপা হতে পটুয়াখালী (২০০০/ থেকে ২৫০০) এবং বরিশাল (৩০০০ থেকে ৩৫০০) টাকা নেয়া হয় ব্যাক্তি মালিকানার এ্যাম্বুলেন্সে। মালিক ও চালকরা সিন্ডিকেট তৈরি করে এক প্রকার রোগী ও তার স্বজনদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভাড়া কম বললে মিলে না এ্যাম্বুলেন্স সেবা ।

এ বিষয়ে এক ভুক্তভোগী কাঁচামাল বিক্রেতা মনির বলেন, ‘আমার আত্মীয় গুরুতর অসুস্থ হলে গলাচিপা হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডাক্তার রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পটুয়াখালী নিয়ে যেতে বলে। আমি সরকারি এ্যাম্ভুলেন্সে যেতে চাইলে চালক আমার কাছে ২০০০/ টাকা ভাড়া দাবি করে’।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক এ্যাম্বুলেন্স চালক জানান, হিরন ও আল আমিন দুজনে যোগসাজশে রোগীদের হয়রানি করছে। সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়ায় এখন তারা ব্যাক্তি মালিকানার এ্যাম্বুলেন্সে বেশি ভাড়ার আশায় রোগী আনা নেওয়া করেন। সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে নিজেদের ফোন নম্বর বসিয়ে রোগী ব্যাক্তি মালিকানার এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যায়। সরকারি লোগো বসিয়ে ভিজিটিং কার্ড করে সরকারি ড্রাইভার পরিচয় দিয়ে বেড়ায় তারা।

অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে হিরন প্যাদার নিকট সরকারি এ্যাম্বুলেন্স সেবা চেয়ে ফোন করেন গণমাধ্যম কর্মী। মুঠোফোনে তিনি সরকারি এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যেতে পারবে না বলে অস্বীকৃতি জানান। তবে তার ব্যাক্তি মালিকানার এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে পারবে বলে গলাচিপা থেকে পটুয়াখালী দুই হাজার টাকা ভাড়া দাবি করেন। সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে পটুয়াখালীর ভাড়া জানাতে চাইলে তিনি বলেন এক হাজার টাকা। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে হিরন প্যাদা বলেন, “তিনি এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যেতে পারবে না এ কথা বলেন নাই, তিনি বলেছেন এখন না পরে যেতে পারবেন। এ কথাও স্বিকার করেন (টিএইচও) এর গাড়ি চালক হিরণ প্যাদা ,তবে সরকারি এ্যাম্বুলেন্স তার দ্বায়িত্বে আছে। যা করছেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে করেছেন বলে দাবি করেন”।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি এ্যাম্বুলেন্সের অপর একটি গাড়ির চালক আল আমিন জানান, রাঙ্গাবালী উপজেলার ওয়াটার এ্যাম্বুলেন্সের চালক হিসেবে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ হয় তার। গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগ প্রাপ্ত চালক অবসরে যাওয়ায় এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, এই দ্বায়িত্ব নিতে গিয়ে চালক সিন্ডিকেট আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কাজী মোঃ আবদুল মমিন বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কোন সুযোগ নেই। ইতিমধ্যেই সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া নির্ধারণ করে নোটিশ আকারে দেয়ালে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। এছাড়াও অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিয়ে অভিযোগ গুলো তিনি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান’।

সর্বশেষ