১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

‘ডিফেন্স করোনা’ অ্যাপ উদ্ভাবন করলো স্কুলছাত্র সিয়াম

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

অনলাইন ডেস্ক :: ফ্রি মোবাইল অ্যাপ দ্বারা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে করোনার লক্ষণগুলো যাচাই করে সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও সুস্থ ব্যক্তিদের সংক্রমণের হাত থেকে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করবে ‘ডিফেন্স করোনা’ অ্যাপ।

‘করোনার সঙ্গে লড়াই, আসুন করি সবাই’ এ স্লোগান নিয়ে অ্যান্ড্রোয়েট ও আইওএস অ্যাপ্লিকেশন টাইপের এই অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রাণঘাতী করোনার ভয়াল থাবায় দেশ যখন স্থবির, ঠিক তখনই পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম রহমান উদ্ভাবন করলো বিস্ময়কর ‘ডিফেন্স করোনা’ অ্যাপটির। সিয়াম স্থানীয় যুব সংগঠন পটুয়াখালী ইয়ুথ ফোরামের সদস্য।

সংগঠনটির ব্যবস্থপনায় ও পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহযোগিতায় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের ৪২তম জাতীয় বজ্ঞিান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে প্রোটোটাইপ প্রজক্টেটি উপস্থাপন করে পটুয়াখালী জেলা পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অধিকারও করেছে সিয়াম। পরে ততকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মতিউল ইসলাম চৌধুরী অ্যাপের কার্যক্রম নিয়ে সিয়ামকে উৎসাহ দিলেও টাকার অভাবে তা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। বর্তমানের অ্যাপের কয়েকটি ফিচার সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

অ্যাপের উদ্ভাবক সিয়াম রহমান বলে, ডিফেন্স করোনা অ্যাপটি অফলাইনেও ব্যবহারকারীর সার্বক্ষণিক হাঁচি-কাশির সংখ্যা ও মাত্রা, জনসমাগমে গমনের সংখ্যা, জনসমাগমে গমনকালে সতর্কবার্তা দেওয়া ও মাস্ক পরিধান করেছিল কি-না এবং চোখের রঙ নিরীক্ষা করে হিসাব করে রাখবে এবং বাসস্থানে ফেরার পর হাত ধোয়ার নির্দেশ দেবে। পরবর্তীকালে এই সব বিষয় সমূহের ওপর ভিত্তি করে, অ্যাপটির ব্যবহারকারী করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছে কি-না, তা প্রতি সাতদিন পর পর একটি ফলাফল পাঠাবে এবং সব ফলাফল সমূহ ব্যবহারকারীর প্রোফাইলে সংরক্ষিত থাকবে। ব্যবহারকারী তার শারীরিক গতিবিধির তথ্য দেখতে পেয়ে নিজে সতর্ক হতে পারবে এবং অন্যকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

সিয়াম বলে, এই অ্যাপ করোনা সংক্রমিত রোগীর শারীরিক গতিবিধি সম্পর্কে জানা এবং রোগীদের মানসিকভাবে ভেঙে না পড়া ও প্রয়োজনীয় সহায়তা ও তথ্য দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। করোনার ভ্যারিয়েন্ট পরিবর্তনের সঙ্গে ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতাও পরিবর্তিত হয় এবং সংশ্লিষ্ট ভ্যারিয়েন্টের জন্য কার্যকরী ভ্যাকসিন প্রণয়ন সময়সাপেক্ষ হলেও সংক্রমণের লক্ষণ প্রায় একই থাকে বিধায় করোনার নতুন লক্ষণ ধরা পড়লে তার সেন্সিভিটি ফিচারসমূহ অ্যাপে খুব দ্রুত সংযুক্ত করা যাবে। ফলে করোনার ভ্যারিয়েন্ট পরিবর্তন হলেও প্রভাবশালী হতে পারবে না এবং সংক্রমণ খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

সিয়াম আরও বলে, ‘সমস্যা থেকে সমাধানের প্রচেষ্টা, গবেষণা ও চেষ্টার মাধ্যমে উদ্ভাবন’ এই বাক্যটিকে আমি ধারণ করি এবং নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দিয়ে গবেষণা ও চেষ্টার মাধ্যমে সার্বজনীন ও সাধারণ জিনিসিগুলোকে কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করার প্রবণতা আমার মধ্যে কাজ করে। তাই গত ডিসেম্বরে আমার ‘ডিফেন্স করোনা’ প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করা শুরু করি এবং চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি প্রোটোটাইপ প্রজেক্টটি ৪২তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে উপস্থাপন করে পটুয়াখালী জেলা পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করি। জেলা প্রশাসনের নির্দেশক্রমে আমি আমার প্রোজেক্টের ট্রায়াল ভার্সন প্রস্তুত করার জন্য আমার সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করি। যেহেতু আমার প্রোজেক্ট সময়পোযোগী ও জরুরি, তাই এর দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন এবং ফান্ডিং প্রক্রিয়া জটিল এবং অনেক সময়ক্ষেপণ হওয়ায়, আমি আর সময়ক্ষেপণ না করে নিজের অর্থায়নে কাজ চালিয়ে যাই এবং গত জুন মাসে আমার প্রোজেক্টের ট্রায়াল ভার্সন সম্পন্ন করতে সক্ষম হই। বর্তমানে সিয়ামের আর্থিক পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর ও বিভাগের সহযোগিতা প্রয়োজন। সহযোগিতা পেলে দ্রুত অ্যাপটি চালু করলে এর সুফল পাবে লোকজন।

এ বিষয়ে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন বলেন, পটুয়াখালী ইয়ুথ ফোরামের সদস্য ও পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম রহমান উদ্ভাবিত ডিফেন্স করোনা অ্যাপটি দেখেছি। এটা অতন্ত বিজ্ঞান সম্মত, অনেক ফিচার যুক্ত এবং তথ্য বহুল স্বয়ংক্রয়িভাবে কাজ করবে। এটা যথাযথ কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবো।

পটুয়াখালী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ইসরাত জাহান বলেন, আমি সিয়ামের উদ্ভাবন সর্ম্পকে জানি। সে পুরস্কার পেয়েছিল। সে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের কাছে এলে নবাগত ডিসি স্যারের সঙ্গে আলাপ করে এবং তাকে এই অ্যাপের কার্যকারিতা সর্ম্পকে জানাতে হবে। তার জেলা প্রশাসক স্যাওে মাধ্যমে ও তার নির্দেশনায় আমরা এটা তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠাতেটে পারি।

সর্বশেষ