২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দায়িত্ব নিয়েই সাড়া ফেলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বাণী ডেস্ক: বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন।  বাংলাদেশে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি চিকিৎসার পথিকৃৎ ও পুরোধা ব্যক্তিত্ব । দেশে প্লাস্টিক সার্জারি চিকিৎসার বিকাশ ও আধুনিকায়নে তাঁর রয়েছে অসামান্য অবদান। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই তার কিছু পদক্ষেপ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে দেশের স্বাস্থ্য খাতে। নড়েচড়ে বসেছেন চিকিৎসক ও সংস্লিষ্টরা। জনসাধারণের মনে যেন আশার আলো দেখা দিয়েছে। হয়তো ভালো কিছু হতে যাচ্ছে নতুন স্বাস্থ্য মন্ত্রীর হাতধরে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক থেকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রয়েছে তাঁর দক্ষ নেতৃত্বের ছাপ। সর্বশেষ বাংলাদেশের সকল বার্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দেশে প্লাস্টিক সার্জারি চিকিৎসার এই জীবন্ত কিংবদন্তি।
তাঁর জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৪ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার (তৎকালীন সিলেট জেলা) নাগুরা গ্রামে। পিতা জিতেন্দ্র লাল সেন ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং ভারতের চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্যে গোল্ড মেডেল অধিকারী।

সামন্ত লাল সেনের বেড়ে ওঠা
সামন্ত লাল সেন সেন্ট ফিলিপস হাইস্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক এবং পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ সালে তিনি অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা থেকে ‘ডিপ্লোমা ইন স্পেশালাইজড সার্জারি’ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে জার্মানি ও ইংল্যান্ডে সার্জারি বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবন
১৯৭৫ সালে দেশের প্রত্যন্ত এলাকা হবিগঞ্জের বানিয়াচং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। পাঁচ বছর পর তিনি বদলি হয়ে ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেন। সেখানে তিনি ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের লুধিয়ানা থেকে আগত ডা. পারজেভ বেজলীল ও অধ্যাপক আর.জে. গার্স্টের ঘনিষ্ট সাহচর্য পান এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। মাত্র পাঁচটি বেড নিয়ে শুরু হয় পোড়া রোগী ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা।
এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বল্প পরিসরে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা শুরু হয়, সেখানে ডা. সেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
পরবর্তীতে ২০০৩ সালে এ হাসপাতালে একটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বতন্ত্র বার্ন ইউনিট যাত্রা শুরু করে, যা পরবর্তীতে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ডা. সামন্ত লাল সেন ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাকালীন প্রকল্প পরিচালক। এই বার্ন ইউনিট অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পোড়া রোগীদের আস্থার নাম ডা. সেন
এর সুবাদে ধীরে ধীরে সারা দেশের পোড়া রোগীদের জন্যে আস্থা, ভরসা ও আশার অবিসংবাদিত নাম হয়ে ওঠেন ডা. সামন্ত লাল সেন। ফলশ্রুতিতে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গেলেও তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কের বিশেষ দায়িত্ব প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসায় ১০০ শয্যার বার্ন ইউনিটকে ৫০০ শয্যার একটি স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউটে রূপান্তরের দায়িত্ব নেন ডা. সেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ৪ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পোড়া রোগীদের জন্যে এটিই বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবার আওয়ামী লীগ সরকারের গঠন করা মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। এই দায়িত্বের আগের দিন পর্যন্ত তিনি দেশের সকল বার্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

পোড়া রোগীদের চিকিৎসা ও প্রসারে ভূমিকা
ডা. সেনের কর্মময় জীবনের বড় অংশ কেটেছে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা এবং এই সেবার প্রসারে। তিনি চিকিৎসা বিষয়ক বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর নেতৃত্বে ভুটানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্প-২০২৩’, যেখানে ঠোঁট কাটা ও তালু কাটা রোগীসহ প্লাস্টিক সার্জারির বিভিন্ন জটিল রোগীদের সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। বর্তমানে ভুটানের একজন নাগরিক শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। প্লাস্টিক সার্জারি তথা দেশের চিকিৎসাসেবার জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক।
ব্যক্তি জীবনে সদালাপী, নির্মোহ ও সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত ডা. সামন্ত লাল সেনের কর্মমুখর জীবনে তাঁর পাশে রয়েছেন স্ত্রী মিসেস রত্না সেন। তাঁদের এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান আছেন, যাঁরা প্রত্যেকেই ব্যক্তি জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত।
দেশে প্লাস্টিক সার্জারি চিকিৎসায় ‘জীবন্ত কিংবদন্তী’, অসংখ্য সাধারণ মানুষের জন্য ‘সেন স্যার’ হিসেবে ডা. সামন্ত লাল সেন এখনো নিরলসভাবে কাজ করে চলছেন।
দেশে প্লাস্টিক সার্জারি চিকিৎসায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপে ভূষিত হন তিনি।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশ প্লাস্টিক সার্জন সোসাইটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন ডা. সামন্ত লাল সেন।

সর্বশেষ