২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নলছিটির খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাকে ঘুষ না দেওয়ায় দুইজনের ডিলারশীপ বাতিল রোজায় চাল পাওয়া অনিশ্চিত ১১শ’ পরিবারের

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

রহিম রেজা, ঝালকাঠি
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. নাজমুল হোসাইনের ঘুষ, দুর্নীতি ও খামখেয়ালিপনার কারনে কুলকাঠি ইউনিয়নে ১১শ’ হতদরিদ্র পরিবারের রমজান মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রমজানের শুরুতেই চাল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দরিদ্র্য এসব পরিবারের সদস্যরা।
জানা যায়, কুলকাঠি ইউনিয়নের দুই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণের ডিলার বিশ^নাথ হাওলাদার ও মানিক হোসেনের কাছ থেকে ঘুষ দাবি করেছিলেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন। তাকে ঘুষের টাকা না দেওয়ায় গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর তাদের ডিলারশীপ বাতিল করে দেন ওই কর্মকর্তা। নিয়মানুযায়ী উপজেলা কমিটির অনুমোদন নিয়ে ডিলারশীপ বাতিল করা যায়। কিন্তু ওই কর্মকর্তা কোন কারণ ছাড়াই কারো অনুমতি না নিয়ে ডিলারশীপ বাতিল করে দেন। এতে বিপাকে পড়েছেন দুই ডিলারের কাছ থেকে নিয়মিত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল গ্রহণকারী হতদরিদ্র্য ১১শ পরিবার। রমজানের আগেই এ চাল পাওয়ার কথা ছিল তাদের। এদিকে দুইজনের ডিলারশীপ বাতিল করে গত ১৩ ফেব্রæয়ারি নতুন ডিলার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা। এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করে গত ১৯ ফেব্রæয়ারি ঝালকাঠির সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন দুই ডিলার। আদালত নতুন ডিলার নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। পাশাপাশি পুরনো ডিলারের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন। বিষয়টি নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে জানানো হয়। তিনি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাকে বেআইনীভাবে ডিলারশীপ কেন বাতিল করা হয়েছে, তা জানতে চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি ওই কর্মকর্তাকে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত বলেও উল্লেখ করেন। এসব কারণে কুলকাঠি ইউনিয়নের ১১শ পরিবার ৩০ কেজি করে রমজান মাসের চাল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলেও চিঠিতে বলা হয়। দ্রæত সমস্যার সমাধান করতে নির্দেশ দেন ইউএনও। কিন্তু উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. নাজমুল হোসাইন আদালতের আদেশ এবং ইউএনওর নির্দেশের প্রতি কোন গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠছে। ডিলার বিশ^নাথ হাওলাদার ও মানিক হোসেনের নামে চাহিদাপত্র (ডিও) পাঠানো করা থাকলেও তা পাঠাচ্ছেন না ওই কর্মকর্তা। সময়মতো চাল বরাদ্দ না দেওয়ায় ১১শ পরিবার রমজান মাসের চাল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই গ্রামের কয়েকজন সুবিধাভোগী অভিযোগ করেন, বছর পাঁচ মাস তাঁরা ডিলারের কাছ থেকে ৩০ কেজি করে প্রতিমাসে চাল নেন। কিন্তু রমজান মাসে তাদের চাল এখনো দেওয়া হয়নি। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
ডিলার বিশ^নাথ হাওলাদার বলেন, আমাদের কোন অপরাধ নেই, কোন নিয়মও ভাঙিনি, শুধুমাত্রা ডিও বাবদ দুই হাজার টাকা, মাস্টাররোল জমা দেওয়ার সময় দুই হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আমার ডিলারশীপ বাতিল করে দেন। তিনি একক সিদ্ধান্তে এ কাজ করতে পারেন না। এটার একটি কমিটি রয়েছে, তারা যদি তদন্ত করে কোন অনিয়ম পায়, তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে ডিলারশীপ বাতিল করতে পারে। কিন্তু শুধু ঘুষের টাকা না দেওয়ায় ডিলারশীপ বাতিলের এখতিয়ার তাঁর নেই।
ডিলার মানিক হোসেন বলেন, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে এই জেলায় চাকরি করছেন। তিনি এই জেলার বাসিন্দা হয়ে কিভাবে নিজের জেলায় চাকরি করেন! নিজের জেলায় চাকরি করার কারণে তিনি বেপরোয়া হয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন বলেন, দুই ডিলার অনিয়ম করায় আমি তাদের ডিলারশীপ বাতিল করেছি। এখন তাঁরা মামলা করেছে, তাই নতুন করে চাল বরাদ্দ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সভাপতি হচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আর সদস্যসচি হচ্ছেন খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা। সদস্যসচিব একক ক্ষমতায় কখনো ডিলারশীপ বাতিল করতে পারেন না। আমি বিষয়টি জানতে চেয়ে তাকে চিঠি দিয়েছি, তিনি এখনো কোন জবাব দেননি। সময়মতো জবাব না দিলে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ