৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বরগুনায় এলজিইডি কর্মকর্তার ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

অনলাইন ডেস্ক :: বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ‘ঘুষ’ নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলজিইডি বরগুনা কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, ইতিমধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করা হচ্ছে না।

এলজিইডি বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের ওয়ার্কশপ ইনচার্জ মো. জিয়াউর রহমানের ঘুষ নেওয়ার ভিডিওটি শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভিডিওটি জুন মাসে ধারণ করা বলে জানা গেছে। ওই ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আগে ভাই মাল (টাকা) দিয়ে কথা বলেন।’ ভিডিওতে জিয়াউর রহমানকে গুনে গুনে ঘুষের টাকা নিতে দেখা যায়। পাশাপাশি পুকুর ও খাল খনন (আইপিসিপি) প্রকল্পের অধীনে ওই দপ্তরের কর্মকর্তাকে কত শতাংশ ঘুষ দিতে হয়, তা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বুঝিয়ে বলতে শোনা যায় তাঁকে। এ সময় তিনি (জিয়াউর) সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বলেন, প্রকল্প পরিচালক বাবদ ২২ হাজার টাকা, নির্বাহী প্রকৌশলীকে ২ শতাংশ অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকা এবং এসও নজরুল ইসলামের জন্য তিনি ১৩ হাজার টাকা কেটে রেখেছেন। আর সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. হোসেন আলী মীর এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিনের জন্য নির্ধারিত টাকা তাঁদের হাতে দিয়ে আসতে বলেন তিনি।

অন্য ভিডিওটি ১৮ জুলাই ধারণ করা। এই ভিডিওতে দেখা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান একটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি ঠিকাদারদের কাছ থেকে জোর করে ঘুষ আদায় করছেন।

ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের অভিযোগ, ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না বরগুনার এলজিইডি অফিসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারেরা বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যক্ষ উন্নয়নকর্মী। সরকারের সব উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করে থাকি। দিন–রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে, পকেটের টাকা খরচ করে সরকারের উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করি। অথচ সেই কাজ বাস্তবায়নের পর বিল তুলতে গিয়ে ঘাটে ঘাটে আমাদের কড়ায় গন্ডায় ঘুষের পার্সেন্টিজ গুনতে হয়।’

আরেক ঠিকাদার বলেন, ‘কাজ পেতে হলে ঘুষ দিতে হয়, ওয়ার্ক অর্ডার পেতে ঘুষ দিতে হয়, কাজ বাস্তবায়নের সময় তদারকি কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে হয়, এরপর বিল পাওয়ার আগে হিসাবরক্ষকসহ অফিস সহকারী, উপসহকারী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী, এমনকি প্রকল্প পরিচালকসহ ঘাটে ঘাটে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এসব কারণে ঠিকাদারি পেশা থেকে এখন সরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।’

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে এলজিইডির বরগুনা কার্যালয়ের ওয়ার্কশপ ইনচার্জ জিয়াউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অসুস্থ। আমি ফরিদপুরে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। আমি শীঘ্রই অফিসে আসব এবং এসে এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলব।’ তবে তিনি কবে অফিসে আসবেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আসব শীঘ্রই।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনি কোন ভিডিওর কথা বলছেন, তা আমি অবগত নই। ভিডিওতে যে টাকা দেখানো হয়েছে, ওই টাকা আমার ঈদের বেতন এবং বোনাসের টাকা। ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’

বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এস কে আরিফুল ইসলাম বলেন, টাকা গ্রহণের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেননি।

জেলা পাবলিক পলিসি ফোরামের সভাপতি হাসানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঘুষ–দুর্নীতির এমন চিত্র কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ–দুর্নীতির কারণেই আমাদের দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি ও বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সারা দেশের স্থানীয় উন্নয়নে এ প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা অগ্রণী। এখানকার অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দৌরাত্ম্যে শুধু সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, সরকারের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে।’

সর্বশেষ