বরগুনা প্রতিনিধি ::: বরগুনা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর জন্য ভোট চাইলেন আরেক বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান ফরাজী মো. ইউনুচ। তাঁর ভোট চাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে (ভাইরাল) ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দুই দলের নেতাদের ভেতরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
গতকাল সোমবার উপজেলার লাউপাড়া স্কুল মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পথসভায় তিনি নৌকায় ভোট চান। এ সময় ওই সভায় সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমপি উপস্থিত ছিলেন।
ফরাজী মো. ইউনুচ তালতলি উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি। ২০২২ সালের ইউপি নির্বাচনে নৌকা মনোনীত প্রার্থী সুলতান ফরাজীকে পরাজিত করে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এর আগে গত রোববার একই আসনে নৌকা প্রতীকের জনসভায় বক্তব্য দিয়ে ভোট চান সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মতিউর রহমান রাজা। পরদিন সোমবার এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে রাজাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মামলায় নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহারের অভিযোগে করা পৃথক দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সেই বিএনপি নেতার জামিন করালেন এমপি শম্ভু। আজ (মঙ্গলবার) জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু নিজে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে এমপি শম্ভুর জিম্মায় পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক রাসেল মজুমদার।
চার মিনিট দুই সেকেন্ডের ভিডিওতে বিএনপি নেতা ফরাজী মো. ইউনুচকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার ইউনিয়নটি ভাঙনকবলিত ও দুর্গম এলাকা। বিগত দিনে যে উন্নয়ন হয়েছে ও আমি দুইবার চেয়ারম্যান থাকাকালীন যে কাজ হয়েছে তাতে এই এলাকার মানুষ সন্তুষ্ট বর্তমান সংসদ সদস্যের ওপরে। আমরা যাতে আরও উন্নয়ন পেতে পারি। ‘আরও দুজন বক্তা বলে গেছেন যে দুই-তিনটি রাস্তা হলে আমরা ভালো অবস্থানে যেতে পারি, তাই আমিও সেই দাবি করি। এগুলো আপনি (নৌকার প্রার্থী) পথসভায় বললে আচরণবিধি লঙ্ঘনে বাধা আছে বলে এখন প্রতিশ্রুতি দিতে পারবেন না। তবে খেয়াল রাখবেন আমাদের দিকে। এই বলে আমি আমার সোনাকাটাবাসীকে বলতে চাই। আমি নৌকায় ভোট চাই। ‘আপনারা (পথসভায় উপস্থিত জনতা) কারা কারা নৌকায় ভোট দেবেন হাত উঁচু করে দেখান, নৌকায় ভোট দেবেন কি না। আমি নিজে আমার এলাকার স্বার্থে যেটুকু প্রয়োজন সাধ্যমতো চেষ্টা করব যে নৌকা জয়যুক্ত করার জন্য। এই বলে আমি বক্তব্য শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ, জয় বঙ্গবন্ধু।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান ফরাজী মো. ইউনুচ বলেন, ‘আমার এলাকার উন্নয়নের জন্য নৌকায় ভোট চাইছি। এতে দোষের কিছু নেই।’
অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বিএনপি নেতা বলেন, ‘তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও প্রভাবশালী নেতা হয়ে এভাবে নৌকায় ভোট চাইতে পারেন না। এটা লজ্জাজনক বিষয়।’ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এজেডএম সালেহ ফারুক বলেন, যাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বিএনপির বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।