শাকিব বিপ্লব:
বরিশালের উন্নয়ন কাজে চাঁদা দাবি করায় প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাঁদা না দেয়ার কারণে বরিশাল শিল্প এলাকা বিসিকে চার ঠিকাদারকে নাস্তানাবুদ করার পর প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার পাইপ লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এই বিষয় অবগত হলেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে। তবে বিসিক উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারদের হুমকি ধামকি ও কাজে বাঁধা দেয়ার প্রেক্ষাপটে র্যাব-পুলিশ কিছুটা পদক্ষেপ নিলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বা নিতে পারছেন না।
অবশ্য বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মিডিয়ার কাছে বলছেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা মামলা না দেওয়ায় কাউকে আটক করা যাচ্ছে না। তবে বরিশালে চাঁদাবাজি চলবে না, এ ধরনের হুংকার দিলেও তা কাগুজেবাঘের ন্যায় পরিণত হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়।
উদাহরণস্বরুপ একটি ঘটনাই যথেষ্ট। বিসিকের ২০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ৪ গ্রুপের কাজের মধ্যে রাস্তা নির্মাণে ভূমি উন্নয়নের জন্য কীর্তনখোলা নদী থেকে বালু উত্তোলনে ব্যবহারে আনা প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার পাইপ তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পুলিশের বক্তব্য সন্তসজনক নয়। বিসিক ব্যবসায়ী সমিতির অভিযোগ কথিত দুই ছাত্রলীগ নেতা এই পাইপ লুটপাট করে নিয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে বিসিক সংশ্লিষ্ট কাউনিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিমুল করিম এই প্রতিবেদককে জানান, পাইপ নিয়ে যাওয়া বা জব্দ করার হেতু কখনই পুলিশকে অবহিত করা হয়নি।
অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ২০১৯ সালে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ভঙ্গুর বরিশাল শিল্প এলাকা বিসিক’র উন্নয়নে ৫২ কোটি টাকার একটি বরাদ্দ দেন। প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৫শ’ ফুট কার্পেটিং সড়ক, ১৭ হাজার ফুট ড্রেন, সীমানা প্রাচীরসহ পুকুর সংস্কার কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেয় এবং টেন্ডার আহ্বান করে। প্রাথমিকভাবে এই চার গ্রুপের কাজের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। টেন্ডারে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে ঢাকার ডিওএইচএস মহাখালীর মজিদ সন্স কন্সেট্রাকশন লিমিটেড, ড্রেন নির্মাণে ঢাকার নিকেতন গুলশানের এসএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, রাস্তা নির্মাণে ঢাকার সিদ্বেশরী সার্কুলার রোডের মেসার্স ইসলাম ব্রাদার্স ও ভূমি উন্নয়ন বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম শহরের ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লি: এই চারটি ঠিকাদারী কোম্পানী প্রকল্প বাস্তবায়নে গত বছর অনুমোদন পায়।
ওই বছরের শুরুতে সিডিউল অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে বালু ভরাটের জন্য ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স কাজ শুরু করলে একটি কালভার্ট ভেঙে কাজ শুরুর খবর পেয়ে প্রায় ২০-২৫ জন ক্যাডার বাহিনী মোটরসাইকেলযোগে এসে কাজ বন্ধ করে তাদের সাথে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এরপর প্রতিদিনই মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে বিসিকের ভিতরে আতঙ্ক সৃষ্টি করায় ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তাদের পক্ষে মাদারীপুরের একজন ঠিকাদার কীর্তনখোলা থেকে বালু উত্তোলন করে বিসিক পর্যন্ত নিয়ে আসতে ব্যবহারের জন্য প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার পাইপ আমদানী করে। বিসিক বেঙ্গল বিস্কুট ফ্যাক্টুরীর সামনে রাখা ওই পাইপ কোন এক রাতে দুটি ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়।
ঠিকাদারদের একটি সূত্র জানায়, পরিস্থিতিগত কারণে বরিশালের বাইরের ঠিকাদারা এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অস্বীকৃতি জানালে সময় ক্ষেপনের কারণে বরাদ্দ অর্থ ফিরে যাওয়ার আশঙ্কায় বিসিক ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ এক বৈঠকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারী কাজ নিজেদের তত্বাবাধনে করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও এ নিয়ে ব্যবসায়ী সমিতির মধ্যে বিভাজন রয়েছে বলে আলামত পাওয়া গেছে। তদুপরি কমিটির শীর্ষ সারির নেতারা কাজ শুরুর উদ্যোগ নিলে আবারও আসে বাঁধা এবং হুমকি।
সরেজমিন ঘুরে প্রকল্পের কাজের অংশবিশেষ ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে দেখা যায়। সেখানে পাহাড়া দিচ্ছে র্যাব-পুলিশ। কিন্তু যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে অনুপস্থিতি থাকছে তখনই সেই ক্যাডার বাহিনী মোটরসইকেল মহড়া দিয়ে কাঁপিয়ে তুলছে শিল্প এলাকা। ব্যবসায়ী সমিতি তাদের স্বার্থগত বিষয় হওয়ায় অন্যান্য ব্যবসায়ীদের একত্রিত করতে সক্ষম হওয়ায় এখন কাজ বন্ধ করতে না পারায় বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে সেখানে উন্নয়ন কাজে অনিয়ম হচ্ছে, এমন শিরোনাম দিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশের কৌশল নেওয়া হয়েছে। যাতে প্রকল্প নিয়ে বিতর্কে কাজ স্থগিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নাড়িয়ে তোলা যায়।
অবশ্য এ কথা সত্য যে পরিত্ত্যক্ত ইট ড্রেন ও সড়ক নির্মাণকাজে ব্যবহার করায় কিছুটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ কথা স্বীকার করে বিসিক ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি ও ফরচুন সু-কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, তার অনপুস্থিতিতে শুরুতে এ ধরনের কাজ ঘটেছে বটে। কিন্তু বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে সংবাদমাধ্যমকে আশ্বস্ত করেন।