৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক : সওজের ব্যর্থতায় ভোগান্তিতে লাখো মানুষ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

তন্ময় তপু ::: বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ধীরগতির কারণে দুর্ভোগে পড়েছে লাখো মানুষ। কাজ না করে তা ফেলে রাখায় ওই সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

সড়কের দুর্দশার কারণে অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন মাসের পর মাস। দ্রুত রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি ভুক্তোভোগীদের। জমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও বাজার এলাকায় পানি জমার কারণে কিছু অংশের রাস্তার কাজ বাকি বলে জানায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টার কথা জানিয়েছে তারা।

বরিশাল ভোলা লক্ষ্মীপুর সড়কের বরিশালের অংশে অর্থাৎ চরকাউয়ার পর থেকে লাহারহাট পর্যন্ত ধুলাবালিতে ঢাকা থাকে প্রতিনিয়ত। কেউ মাথা মুখে গামছা বেঁধে আবার কেউ নাক মুখে হাত দিয়ে ঢেকে চলাচল করে। যানবাহনও চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এই সড়ক। অর্ধসহস্র কোটি টাকার প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি না থাকায় ভাঙাচোরা সড়ক এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলের এই প্রকল্পটির আওতায় বরিশালের ১৩ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার, ভোলাতে ১৬ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার এবং লক্ষ্মীপুরে ১০ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্তকরণসহ মান উন্নয়নের কথা রয়েছে। সংশোধিত অনুমোদিত প্রকল্পটির ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৫২০ কোটি টাকা।

বরিশালের ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কসহ ভোলা ও লক্ষ্মীপুর অংশের সড়কেও বেহাল অবস্থা। জমি অধিগ্রহণ না করে সড়ক প্রশস্তের কাজ করতে গিয়ে স্থানীয়দের বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে। এই দপ্তরের ব্যর্থতায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ওই অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দা ও সড়কে চলাচলকারী লাখো মানুষকে।

মহাসড়কটির মাধ্যমেই চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ দেশের তিনটি সমুদ্র বন্দর এবং দেশের বৃহত্তম বেনাপোল ও ভোমড়া স্থল বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা। উপকূলীয় এই জাতীয় মহাসড়কটির কারণে উল্লিখিত তিনটি বিভাগের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৩০-৪০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পাওয়া ছাড়াও চট্টগ্রাম ঢাকা মহাসড়কটির ওপর যানবাহনের চাপও হ্রাস পাবে। এ তথ্য সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের।

অথচ এই মহাসড়কটি প্রশস্ত করাসহ মান উন্নয়নের মূল ডিপিপি তৈরির সময় সড়ক অধিদপ্তরের জমি কতটুকু ছিল, তা খতিয়ে দেখা হয়নি। ফলে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও জমি বুঝিয়ে দিতে না পাড়ায় মহাসড়কটির বরিশাল সড়ক বিভাগের ১৩ কিলোমিটারের বেশিরভাগ অংশে ব্যক্তিমালিকানার জমিতে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরুই করতে পারেনি। তিন বছর আগে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও তা শেষ করতে পারেনি। বরং প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে একশ কোটি টাকা।

প্রথম পর্যায়ে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩১২ কোটি টাকা, পরে তা সংশোধিত ব্যয় ধরা হয় ৫২০ কোটি টাকা। কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে সেই বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারছে না সড়ক ও জনপথ। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হলেও ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে এই কাজ শেষ হতে আরও ২ বছর লাগতে পারে বলে ধারণা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টদের।

ভুক্তভোগীরা জানান, দ্রুত রাস্তার কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও এখনো তা হয়নি। স্থানীয় কাওছার মাহামুদ জানান, গত কয়েক বছর ধরে রাস্তার কাজ চলছে। রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কেন শেষ হচ্ছে না জানি না।

ফেরদৌস আলম নামে এক ভ্যান চালক বলেন, এই সড়কে বাস, ট্রাক থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে। ওই যানবাহনগুলোর যেমনি চলতে সমস্যা তেমনি আমাদেরও সমস্যা। একটি গাড়ি গেলে ধুলাতে আর কিছু দেখা যায় না। তাছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা হয়। অনেক দোকানপাটও বন্ধ আছে এই রাস্তার কারণে।

বাস চালক আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা খুবই কষ্টে আছি। যাত্রীরা গালমন্দ করে। এমন রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে প্রতিদিন ভোগান্তি তো আছেই সঙ্গে গাড়িরও ক্ষতি হচ্ছে। পার্টস ভেঙে যায়। বছরের পর বছর ধরে এই রাস্তা এমনভাবে রেখে দেওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ তো শেষ করতে পারেইনি বরং মানুষকে এখন কষ্ট দিচ্ছে। বেসরকারি একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে প্রতিদিন এই সড়কে যাতায়াত করতে হয়। সাপের মতো চালাতে হয় মোটরসাইকেল। আর সাদা শার্ট পরা থাকলে তো শেষই। ধুলাবালির কোনো লিমিট নেই। এই সড়কে একবার গেলে গোসল ছাড়া উপায় নেই।

এদিকে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও বাজার এলাকায় পানি জমার কারণে কিছু অংশের রাস্তার কাজ বাকি বলে জানায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। বরিশাল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, জমি অধিগ্রহণ শেষ হওয়ার পাশাপাশি বাজার এলাকায় পানির কারণে যাতে রাস্তার ক্ষতি না হয় তাই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করা হবে। দ্রুতই রাস্তার কাজ শেষ হবে।

সর্বশেষ