৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাউফলে মেয়র ও এক সংবাদিকসহ ছাত্রলীগের ৩৫ নেতাকর্মীকে আসামী করে হত্যামামলা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল।। বাউফলে যুবলীগ নেতা তাপস কুমার দাস খুনের ঘটনায় বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জুয়েলকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে বাউফল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ভাই পঙ্কজ কুমার দাস বাদি হয়ে সোমবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় একজন সাংবাদিককেও আসামী করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৪ মে বাউফল থানা সংলগ্ন জেলা পরিষদের সামনে একটি তোরণ নির্মাণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমপি আসম ফিরোজ এবং পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ জিয়াউল হক জুয়েল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় তাপস কুমার দাস (৩৪) নামের এক যুবলীগ নেতা আহত হন। ওই দিন রাতে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান।
এ ঘটনায় নিহত তাপসের বড় ভাই পঙ্কজ কুমার দাস বাদি হয়ে সোমবার রাত সারে ১০টার দিকে বাউফল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় মেয়র জিয়াউল হক জুয়েলসহ ৩৫ জনকে আসামী করা হয়। এ মামলায় মেয়র জুয়েল ছাড়াও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান হাসান, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ রাহাদ জামসেদ, বাউফল সরকারী কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ইউসুফকে আসামী করা হয়েছে। এ মামালায় প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি এবিএম মিজানুর রহমানকে ২০ নম্বর আসামী করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য আসামীরাও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে জানাগেছে।
সাংবাদিক মিজান বলেন,‘ তাকে হয়রানি করার উদ্যোশেই এই মামলায় আসামী করা হয়েছে।
বাউফল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাদির টাইপ করার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারি এই মামলায় একজন সাংবাদিককে আসামী করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করবে। মামলায় নিরপরাধ কোন ব্যক্তিদের হয়রানি হওয়ার সুযোগ নেই।’
এদিকে প্রথম আলোর সাংবাদিককে হত্যা মামলায় আসামী করা ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন, বাউফল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাচ্চুসহ কর্মরত সাংবাদিকরা। এ ছাড়াও, পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল অনলাইন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মামুনুর রশীদ নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মামুন-অর-রশিদ তীব্র নিন্দা জানিয়ে সাংবাদিক মিজানকে আসামী করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অবিলম্বে মিজানকে মামলা থেকে অব্যহতি দেয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
অপর দিকে বাউফলের উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ জিয়াউল হক জুয়েলের পক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পৌর ভবনের ডাঃ এএফএম নাসির উদ্দিন সভা কক্ষে এ সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সাংবাদিক সম্মেলনে মেয়রের লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল লতিফ খান বাবুল।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মেয়র জুয়েল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় এলাকায় অবস্থান নিয়ে যখন অসহায় মানুষকে মানুবিক খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছিলেন, তখন একটি মহল ঈর্শ্বান্বিত হয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। এর অংশ হিসাবে ২৪ মে বাউফল থানা সংলগ্ন জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর সামনে বাউফল পৌরসভার উদ্যোগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা সংবলিত ব্যানার স্থাপনের সময় নাজিরপুরের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুকের নেতৃত্বে ৩০-৪০ সন্ত্রাসী বাহিনী এসে বাধা দেয় এবং ভাংচুর করে। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বাউফল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য থানার কনফারেন্স রুমে বৈঠক শুরু হয়। ওই বৈঠকে মেয়রসহ নাজিরপুরের চেয়ারম্যানও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক চলাকালীন সময় কালাইয়া ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদ মনির হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এসে ফের ব্যানার স্থাপনে বাধা দেয়। পুলিশের লোকজন লাঠিচার্জ করে পরিবেশ শান্ত করে। ওই সময় তাপস কুমার দাস নামের এক ব্যক্তি আহত হন এবং তিনি পরে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেয়র ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় বক্তব্য দেয়া হয় এবং মেয়রকে খুনি বলে তার ফাঁসি দাবি করে শ্লোগান দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে তাপস হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নাজিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম ফারুকের বিরুদ্ধে আনিত মেয়রের অভিযোগ সম্পর্কে ইব্রাহিম ফারুকের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বলেন, জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর সামনের গেটটি ছিল আওয়ামী লীগের। বিগত ৫ বছর ধরে আমি সেটি লালন করে আসছি। কয়েক দিন আগে ঝড়ে গেটটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সেটি পুনর নির্মাণের সময় মেয়রের নেতৃত্বে বাধা দেয়া হয়।’

সর্বশেষ