১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভারীবর্ষণে বরিশাল নগরীর রাস্তা-ঘাট তলিয়েছে, বাসা-বাড়িতে ঢুকছে পানি

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: শ্রাবনের পূর্ণিমার মরা কাটালে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার ঝরানো প্রবল বর্ষণে বরিশাল নগরী সোমবার সকাল ১১টার মধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে। এমনকি বসতবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।

সোমবার সকাল ৬টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশালে ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিাপাতের পরে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র ৬ ঘন্টায় নগরীতে আরো ১১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সাগর পাড়ের খেপুপাড়াতে সকাল ৬টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পরে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আরো ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রবল বর্ষণে বরিশাল নগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো শহরের রাস্তাঘাট প্রায় জনমানব শূণ্য।

গত এক সপ্তাহে বরিশালে প্রায় সাড়ে ৩শ মিলিমিটার এবং সাগর পাড়ের খেপুপাড়াতে ৫শ মিলিমিটারেরও বেশী বৃষ্টি হয়েছে।

জুলই মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮% কম বৃষ্টিপাতের পরে গত এক সপ্তাহের মাঝারী থেকে প্রবল বর্ষণে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের মাঠে থাকা প্রায় পৌনে ২ লাখ হেক্টরের আউশ ধান ও আরো অর্ধ লক্ষাধিক হেক্টরের আমন বীজতলার পুরোটই গত তিন দিন ধরে পানির তলায়। ফলে কয়েক লাখ কৃষকের এখন মাথায় হাত।

এবার বরিশাল অঞ্চলে আউশ ধান থেকে ৫ লাখ ৮৮ হাজার টন চাল পাবার লক্ষ স্থির করে রেখেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। কিন্তু গত ৪ মাসের কষ্টের আউশ ধান শেষ পর্যন্ত কৃষকের গোলায় কতটা উঠবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। একই সাথে চলতি খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৭ লাখ হেক্টরে আমন আবাদের লক্ষে মাঠে থাকা অর্ধ লক্ষাধিক হেক্টরের আমন বীজতলা ছাড়াও গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন সবজীও মারাত্মক হুমকির মুখে। চলতি মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমান থেকে প্রায় ১৭ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য রয়েছে।

সোমবার সকাল ৮টার পরেই বরিশাল নগরীতে মাঝারী থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরুর হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রবল বর্ষণ ১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাঝারী আকারে অব্যাহত ছিল। নগরীর প্রায় সব রাস্তাঘাটই পানির তলায় নিমজ্জিত হয়েছে।

নগরীর নবগ্রাম রোডসহ অনেক রস্তায়ই বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরছেন কৌতুহলী মানুষ। তবে নগরী সংলগ্ন কির্তনখোলা নদী তীরের একাধিক বস্তি সহ নগরীর বিভিন্ন এলকার বাড়ি ঘরেও পানি প্রবেশ করায় সাধারন মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই। নগরীর ড্রেনসহ পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থাগুলো সুষ্ঠু পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে গোটা নগরী জলাবদ্ধতার কবলে। গত কয়েক বছরের দূর্বল পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থায় এ নগরী সামান্য বৃষ্টিপাতেই ডুবছে। সেখানে গত এক সপ্তাহের মাঝারী বর্ষন সোমবার সকাল থেকে প্রবল আকার ধারন করায় পরিস্থিতি এখন সব বর্ণনার বাইরে।

আবহাওয়া বিভাগ থেকে রোববার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বরিশালসহ উপকূলভাগে ভারী বর্ষনের সতর্কতা জারী রাখা হয়েছে। মৌসুমী বায়ু বরিশাল সহ সন্নিহিত এলাকায় সক্রিয় এবং বঙ্গোপসাগরে মাঝারী থেকে প্রবল অবস্থায় রযেছে। সোমবার সকাল ৯টার পরবর্তি ২৪ ঘন্টার পূর্বাভাসে বরিশালসহ উপকূলভাগে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি সহ বজ্র বৃষ্টি, সে সাথে কোন কোন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদী বন্দরকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেতের সাথে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টার পরবর্তি ৭২ ঘন্টায় বরিশাল সহ সন্নিহিত এলাকার আবহাওয়া পরিস্থিতির সামান্য পরিবর্তনের কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।

সর্বশেষ