নিজস্ব প্রতিবেদক :: ‘মোগো বাড়ির মধ্যে মাদক সেবন করতো ওরা’ মোরা মাদক সেবন করতে বাধা দেওয়াই হলো কাল। তাই গভীর রাতে মোগো বসতঘরে আগুন দেয় প্রভাবশালী মেম্বারের ছেলে ও তার দলবল। তারা ক্ষমতাধার থাকায় আমাগো কেউ খোঁজ খবর নেয়না। গত ৮ দিন ধরে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকছি। একটি কাপড় পড়েই শীতের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। কেউ খাবার দিলে খাই, না দিলে না খেয়েই দিন কেটে যায়। এভাবেই কথা গুলো কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন ঘর পুড়ে স্বর্বশান্ত হওয়া অসহায় গৃহবধূ হামিদা বেগম।
ঘটনাটি পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর মুচির পোল এলাকার খন্দকার বাড়ীতে ঘটেছে।
সূত্রে জানা যায়- খন্দকার বাড়ির সামনে কাঠাখালি খালে জালপাতা নিয়ে গত শনিবার ৫ ডিসেম্বর দুপুরে আউলিয়াপুর ইউপি সদস্য আব্দুর আজিজুর রহমান এর ছেলে রনি মৃধা সাথে মাছ ধরা নিয়ে ওয়াজেব আলীর সাথে বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। পরে রনি তার দলবল নিয়ে ওয়াজেব আলী ও তার পরিবারকে মারধর করে তাদের বসতঘর ভাংচুর করে এবং যাওয়ার সময় রনি তাদের বলে যান বেশি বাড়লে তোদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিবো।
স্থানীয় আবুল হোসেনের স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, হামিদার মেয়ের জামাই ওয়াজেব কাঠ মিস্ত্রির কাম করে। ঘরের সামনে সরকারী খালে র্দীঘ দিন ধরে এলাকার অনেকেই জাল পেতে মাছ ধরে খায়। তাদের মতই ওয়াজেবও শনিবার জাল ফেলাতে গেলে পাশ্ববর্তী গ্রামের পূর্ব শারিকখালী এলাকার মেম্বার আজিজুর রহমানের ছেলে রনি তার লোকজন নিয়ে ওয়াজেব আলীকে মাছ ধরতে মানা করে তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে যায়। পরে তিনি প্রতিবাদ করলে তাদেরকে মারধর করেন। তার পরের দিন রবিবার গভীর রাতে ওয়াজেব ও হামিদার কাঠের দোতালা ঘরে কে বা কাহারা আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে আমরা বাঁচাও বাচাঁও কন্ঠ শুনে এসে দেখতে পারি ওয়াজেব’র ঘর আগুনে জ্বলছে। পরে আমরা ডাক চিৎকার শুরু করলে আশে পাশ্বের লোকজন ছুটে এসে আগুন নিভানোর চেষ্টা করে আগুন নিভাতে পারলেও ঘরসহ ভিতরে থাকা মালামাল পুড়ে কয়লা হয়ে যায়।
এদিকে একই এলাকার জাকির হোসেন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার বয়স আজ ৫০ বছরের উপরে। কিন্তু আমি আমার বয়সে এধরনের আগুন কখনও দেখিনি। আগুন লাগার কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় পুরো ঘরটি। আমার ধারনা এটা পূর্ব শক্রতার জের ধরে পরিকল্পিত ভাবে ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ ওই পরিবারের সবাইকে বাঁচিয়েছেন। তা না হলে ওরাও আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যেতো। সহিদ তালুকদার ও কবির বলেন, খালে মাছ ধরা নিয়ে মেম্বারের ছেলে রনি ও তার দলবল কাঠ মিস্ত্রি ওয়াজেব’র সাথে ঝামেলা হয়েছে। মনে হয় সেই সূত্র ধরেও আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে যারাই এই অসহায় গরিব পরিবারটাটির শেষ সম্বলটুকু আগুনে চালিয়ে শেষ করে দিলো আল্লাহ যেন তাদের বিচার করেন। তারা আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটির সহযোগিতায় এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি।
ভুক্তোভোগি হামিদা বেগম বলেন, আমাগো ক্ষমতার জোর নেই, টাহাও নেই, তাই আমরা থানায় গিয়েও সঠিক বিচার পাইনা। উল্টো হামলাকারীরাই মোগো বিরুদ্ধে মামলা দিয়া মোর স্বামীকে গ্রাম ছাড়া করেছে ওরা। এহন আমার স্বামী না খাইয়া কই আছে জানিনা। মোর মাইয়া-পোলা সারা দিন কেঁদে কেঁদে বাবার কথা কয়। মুই ওগো কিছু বলতে পারিনা।
তবে আগুনের ঘটনায় হামিদার মা হাসিনা বেগম অভিযোগ করেন, তিনি থানায় গিয়ে আগুনের সাথে জড়িত থাকাদের সনাক্ত করে মামলা দায়ের করতে গেলে থানা পুলিশ অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা নেয়।
তিনি আরও বলেন, আমি আগুনের সাথে জড়িত থাকাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনেকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয় আউলিয়াপুর ৯ নং ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, ওয়াজেব’র সাথে খালে মাছ ধরা নিয়ে আমার ছেলে রনির সাথে কথাকাটি হয়েছে। কিন্তু ওয়াজেবকে আমার ছেলে মারধর করেনি। উল্টো ওয়াজেব আমার ছেলেকে মারধর করেছে।
তিনি আরও বলেন, তাদের ঘরে কে বা কাহারা আগুন দিয়েছে তা আমাদের জানা নেই। আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এবিষয়ে ইউপি সদস্য আজিজুর রহমানকে ফোন করে জানতে চাওয়ার কিছুক্ষন পরেই তার ছেলে আতিকুর রহমান পারভেজ প্রতিবেদকে ফোন করে বলেন, ওয়াজেবের ঘরে আগুনের বিষয়ে আমার পরিবারের কেউ জড়িত নয়। ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে তার ভাই রনিসহ তাদের কেউ জড়িত নয়।
তিনি আরও বলেন, আমার দাবি প্রশাসন এঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।
এবিষয়ে আউলিয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ্যাড. মো: হুমায়ন কবির জানান, ঘটনার খবর শুনেই আমি সহ প্রসাশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা বলেছি। তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষিদের মুখোশ উন্মোচন করে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি এক প্রশ্নে উত্তরে বলেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সহযোগীতার জন্য সরকারি ভাবে আবেদন করা হয়েছে। খুব শিঘ্রই অনুদান দেওয়া হবে।
এবিষয়ে পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মোর্সেদ আলম বলেন, এঘটনায় একটি মামলা করেছে আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
এবিষয়ে পটুয়াখালী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড.গোলাম সরোয়ার হোসেন বলেন, মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে একটি হামলার ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। তবে আগুনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।