২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সার্কুলেশন প্রত্যাশী সংবাদপত্রের সংকট

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নাঈমুল ইসলাম খান: [১] বাংলাদেশের সেরা সংবাদপত্রে, বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সংবাদপত্রের ভেতরে টিকে থাকার যে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা দেখছি এবং শুনছি এবং দেখছি এগুলো সংবাদপত্র শিল্পের সবাইকে গভীর চিন্তায় ফেলা উচিত।

[২] অনেকেই মনে করেন, কোভিড-১৯ এর কারণে এই দুরাবস্থা। কিন্তু এটি কেবল আংশিক সত্য।

[৩] প্যান্ডেমিকের কারণে সংবাদপত্রশিল্প আচমকা অতিরিক্ত এবং অপ্রত্যাশিত সংকটে পড়েছে। কিন্তু এই বিশ্ব ধীরে ধীরে মহামারি থেকে মুক্ত হবে, সংবাদপত্রগুলোও ধাপে ধাপে এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসবে সেটা মোটামুটি আশা করা যায়।

[৪] কিন্তু কোভিড-১৯ এর অনেক আগে থেকেই সংবাদপত্রশিল্প অন্যান্য বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে কাবু হচ্ছিলো।

[৫] টেলিভিশন এবং অনলাইন গণমাধ্যমের কাছে বিজ্ঞাপন এবং সার্কুলেশন হারানো একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে চলেই এসেছিলো। তবে এই সমস্যা সাংবাদপত্রকেই সৃজনশীলতা ও নতুন নতুন উদ্ভাবনী এবং কৌশলের মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হতো এবং ভবিষ্যতে করতে হবেও। এটা ‘সার্ভাইবেল অব দ্য ফিটেস্টের চ্যালেঞ্জ’।

[৬] দেশে সামগ্রিক বিজ্ঞাপন ও সাপ্লিমেন্ট বিতরণ ব্যবস্থায় দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি ক্রমবর্ধমান হারে স্বচ্ছ ও সৎ প্রচেষ্টার সংবাদপত্রগুলোর জন্য এমন সমস্যা দাঁড় করিয়েছে যার সমাধান সংবাদপত্রের নিজের মধ্যে নেই। সরকার ও প্রশাসনে দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর হওয়া ছাড়া এই সমস্যার সমাধান নেই।

[৭] সংবাদপত্র শিল্পে যার যার সার্কুলেশন সঠিক নির্ণয় করতে সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য একটি স্বচ্ছ ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি গত বেশ কিছুকাল ধরে অনেক ক্ষেত্রে নেই বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও বৈষম্যের কারণে কেউ অবৈধ সুবিধা নিচ্ছে অপর কেউ কেউ তার বৈধ দাবি এবং অবস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর সমাধানও সংবাদপত্রগুলো নিজে করতে পারবে না, এরও সমাধান আসতে হবে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে।

[৮] মহামারিজনিত চ্যালেঞ্জের কিছু সমাধান তো আমরা আশা করতে পারি একসময়ে, কিন্তু তুলনামূলক সৎ সংবাদপত্রগুলো সংঘবদ্ধ না হলে সরকারি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রচলিত সমস্যাগুলোর সমাধানে কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না।

[৯] সরকার নিজে তাদের সাংবিধানিক ও আইনী দায়িত্বের অংশ হিসেবে, দুর্নীতির ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতার ঘোষণা এবং শুদ্ধাচারের ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলে প্রশাসনিকভাবে এই সমস্যাগুলো সমাধান সম্ভব।

[১০] দেশে সরকারি বিজ্ঞাপনের পরিমাণ সামগ্রিকভাবে ক্রমাগত কমছে। ই-টেন্ডারিং পদ্ধতি প্রচলনই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সংবাদপত্রগুলো উদ্যোগী হয়ে সরকারকে বোঝাতে হবে, ই-টেন্ডারে যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আসে সেটা আরও ভালো ও শক্তিশালী হবে, যদি টেন্ডারের বিজ্ঞাপন সংবাদপত্রে আগের মতোই প্রকাশিত হয়। এছাড়া সংবাদপত্র টিকে থাকার জন্যও বিজ্ঞাপন সহায়তা একান্ত জরুরি। সুতরাং সংবাদপত্রশিল্পের স্বার্থে বিজ্ঞাপন হ্রাসের প্রবণতা থামিয়ে বিজ্ঞাপন বাড়ানোর গতি ফিরিয়ে আনতে হবে।

[১১] বাংলাদেশে যে সকল সংবাদপত্র সত্যি সত্যিই উচ্চ সার্কুলেশন চায় এবং ক্রমাগত সার্কুলেশন বাড়াতে আগ্রহী তাদের স্বার্থ অন্যদের চাইতে ভিন্ন।

[১২] ক্রমবর্ধমান সার্কুলেশন প্রত্যাশী সংবাদপত্রের এই সংকট মোকাবেলায় পৃথক ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা নেওয়া জরুরি, দেরী করার মতো সময় আমাদের হতে নেই।

[১৩] বাংলাদেশের যে সকল সংবাদপত্র সার্কুলেশন কমিয়ে যে কোনোভাবে বেশি সরকারি বিজ্ঞাপন নিশ্চিত হয়ে অবৈধ ও অনৈতিক মুনাফা করছেন, তারা সুস্থ ধারার সংবাদপত্রের প্রতিপক্ষ।

দৈনিক আমাদের নতুন সময়

সর্বশেষ