১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

হৃদয় কাড়লো বরিশাল রাজনীতির তিন রত্ন

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

শাকিব বিপ্লব:

দূর্যোগে যে করিবে দান জনপ্রিয়তার সীমানায় তিনি সমাহার। কবিতার ছন্দ মিশ্রিত এই বাক্য উপমা স্বরূপ বলা যেতে পারে বরিশাল রাজনৈতিক অঙ্গনের তিন ব্যাক্তির “করোনা নিয়ে জীবন চলে না” এমন দূর্যোগময় প্রেক্ষাপটে তাদের অবদান মূল্যায়নে।
মরণব্যাধি করোনার ভয়ে স্থানীয় রাজনীতির ক্রীড়ানকরা যখন নিজেদের সুরক্ষায় লোকচক্ষুর অন্তরালে তখন আ.লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বিএনপির পারভেজ আকন বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ নেত্রী মনিষা চক্রবর্তী নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের মেলে ধরলেন ভিন্নরূপে।
শুধু করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা নয়, খাদ্যের নিশ্চয়তায় নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ত্রাণ বিতরন করে বরিশাল শহরে অভুক্তের কান্নার আশঙ্কা যেনো থামিয়ে দিলেন ত্রাণ সামগ্রী বিতরনের নানান পর্বে।
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও অপর দুই নেতা-নেত্রীর ভুমিকাও কম নয়। সার্বিক বিচার-বিশ্লেষণে স্থানীয় রাজনীতির ভিন্ন ভিন্ন মেরুর এই তিন রত্ন’র ত্রিমুখী অবদান কারো সাথে কারো তুলনা করা যাবেনা। একজন একদিক থেকে এগিয়ে থাকলেও অন্যজন ভিন্ন কিছু করে অবদানের কাতারে সমমর্যাদায় নিজেদের নিয়ে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
বিশেষ করে করোনার এই দূর্যোগে অচল বরিশালের মানুষকে সচল রাখতে সরকারী ত্রাণ ও অর্থ সহায়তার পাশাপাশি অলোচিত এই তিন রাজনীতিবিদের ত্রাণ তৎপরতা স্মরনীয় হয়ে থাকবে আগামীতে এধরনের কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখিতে।
কথায় বলে , যিনি কাজ করেন বেশী তিনি সমালোচিত হন বেশী। এই উদাহরনতো সাদিক আব্দুল্লাহর নামের সাথে জুড়ে আছে। বরিশাল রাজনীতিতে পদার্পণের শুরু থেকেই যুববয়সী এই নেতা সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক যে ভুমিকায় তিনি থাকেন না কেনো, আলোচনা তাকে পিছু ছাড়েনা। সমলোচনার তীর এমনভাবে বিদ্ধ করে, তাতে হৈ-চৈ না পড়লেও মিডিয়ার শিরোনাম হন, চায়ের টেবিলে বিতর্কের ঝড় ওঠে।
এই নেতা সময়ের আবর্তে এই দূর্যোগকালীন মূহূর্তে অগ্রণী ভুমিকায় অন্তত ৯০ হাজার মানুষের দুয়ারে পৌছে দিয়েছেন নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যের বস্তা। সেই কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আগে গভীর রাতে এই ত্রাণ সহায়তা দেয়া হতো। এখন বিকেল কিংবা সন্ধায়ও মেয়র সাদিকের ত্রাণের ট্রাক নির্ধারিত গন্তব্যে ছুটতে দেখা যায়। স্থানীয় সমাজ বিশ্লেষকদের অভিমত, এমন রাজনৈতিক ত্রাণ তৎপরতা অতীত ইতিহাসে দেখা যায়নি। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ , ৯৬ এর বন্যা মানুষকে ভাসিয়েছিলো পানিতে, কাঁদিয়েছিলো খাদ্যে। তৎকালীন সরকার ত্রাণ কার্যক্রমে ভুমিকা রাখলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে মিল নেই, অবশ্যই এই অলোচনা বরিশাল শহর কেন্দ্রীক। সিটি মেয়র ও নগর আ.লীগের সাধারন সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহ এবারের ত্রাণ তৎপরতার ব্যাতিক্রমতাও রয়েছে। নিজে মাঠে না থাকলেও তার দলীয় অনুসারী-অনুগত্দের মাধ্যমে এই কার্যক্রম এখন পর্যন্ত সফল বলে বিবেচিত হচ্ছেন। বলা বাহুল্য যে, সাদিক আব্দুল্লাহ সিটি কর্পোরেশনের ত্রাণ তহবিলের মাধ্যমে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের মাঝে এই খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন। এখানেও রয়েছে আরেকটি ইতিহাসের মাইলফলক। যতটুকু জানা গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন গঠন হওয়ার পর কোনো দূর্যোগ মোকবেলায় এধরনের পদক্ষেপ এটাই প্রথম। সেক্ষেত্রে সাদিক আব্দুল্লাহর সদইচ্ছার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।
অবশ্য বাসদ নেত্রী তরুণী মণীষা চক্রবর্তী করোনা মোকাবেলার যুদ্ধে প্রথম থেকেই ফ্রন্টলাইনে রয়েছেন। তিনি প্রথম পদক্ষেপে করোনা প্রতিরোধে গণসচেতনতায় বেশীমাত্রায় অগ্রগামী হয়েছিলেন। পরিবেশ পরিস্থিতিতে তার পদক্ষেপ ভিন্ন ভিন্ন ধাপে প্রসারিত করেন। বিত্তবানদের ঘর থেকে উদ্ধৃত্ত চাল সংরক্ষণ করার আহবান রেখে দুমুঠো চালের সংগ্রাম শুরু করেন অভুক্ত মানুষের ভাবনায়। এমনকি শিশুখাদ্য বিতরেনও নিয়েছেন ভিন্ন মাত্রার কর্মসূচি। আবার স্থানবিশেষ ব্যাতিক্রমী বাজার বসিয়ে স্বল্পমূল্যে পণ্য ক্রয়ে শহরবাসীকে দিয়েছেন সহায়তা। সঙ্গত কারণে মাঠে থাকা এই নেত্রী সহসাই বরিশাল রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। তার ঘনিষ্টজনদের দাবী, মণীষা চক্রবর্তী ভুমিকায় নেতৃত্বে থাকলেও তার দল সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ এক্ষেত্রে অনুপ্রানীতি করছে।

অপর দিকে হঠাৎ করে ধুমকেতুর মতো বরিশালে দুর্যোগের মাঠে আবির্ভাব ঘটে যুবদল নেতা পারভেজ আকন বিপ্লব’র। তার দল বিএনপি যখন নীরব, তখন জেলা যুবদলের সভাপতি এই যুবরাজনীতিবিদ স্ব-উদ্যোগে রাতে চমকে দেন নিজ এলাকা কাউনিয়ার একটি সুউচ্চ ভবনে দাড়িয়ে হ্যান্ডমাইক দিয়ে জোরালো কন্ঠে আওয়াজ তুলে। সেখানে তার আহবান ছিলো করোনা প্রতিরোধে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার তাগিদ দিয়ে। এরপর শুরু করেন নিজের দলের বেকারগ্রস্ত নেতা-কর্মীদের তালিকা তৈরী করে তাদের বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচি। দ্বিতীয় ধাপে মধ্যবিত্ত মানুষের দুয়ারে কড়া নাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ভাষ্য হচ্ছে, তিনি মাঠে নেমে অনুধাবন করেন শুধু দল নয়, সাধারণ এমন কিছু পরিবার রয়েছে যারা লজ্জায় অর্থসঙ্কটেও খাদ্য সহায়তা চাইতে পারছেন না। এমতাবস্থায় তার নিজস্ব ফেসবুক একাউন্টে একটি আবেগী স্ট্যাটাস দেন। সেখানে উল্লেখ করেন, এধরনের কোনো ব্যাক্তি বা পরিবার খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন মনে করলে তার সাথে গোপনে যোগাযোগ করতে পারেন। ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ফেসবুকে এই ঘোষণা দেয়ার পর অগণিত সংখ্যক মানুষ তাদের কষ্টের বিবরন তুলে ধরতে সেলফোনে যোগাযোগ করেন। কৌশলী এই নেতা যোগাযোগকারীদের নাম-পরিচয় গোপন রেখে একটি তালিকা তৈরী করেন তাদের সহায়তা দেয়ার জন্য।
মাত্র কয়েকজন কর্মী-অনুসারী নিয়ে এই ত্রাণ সামগ্রী নিজ অর্থায়নে সংগ্রহ করে পৌছে দেয়ার উদ্যোগ নেন। সেখানেই ব্যাতিক্রমতায় অলোচনায় আসেন পারভেজ আকন বিপ্লব।
গভীর রাতে মুখে মাস্ক বেঁধে অনেকটা নিজেকে আড়াল করার ন্যায় নিজেই সিএনজি চালিয়ে এই ত্রাণ পৌছে দেন অন্তত ১৩শ সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়। ঈদের ২ দিন পূর্বে আবার তিনি মাঠে নামেন সেমাই-চিনি নিয়ে। সাথে অন্যাণ্য সামগ্রী । তার ত্রাণ বিতরণের সীমানা বিস্তৃত বা সংখ্যাগত দিক ভারী না থাকলেও গৃহীত উদ্যোগ নজর কেড়েছে , এসেছেন আলোচনায়। অনেকে বলছেন , বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ যখন করোনা দূর্যোগে গৃহমুখী, তখন পারভেজ আকন বিপ্লব ত্রাণ দিতে নেমে তাদের বিবেককে তাড়িত করেছে।
ধারনা করা হচ্ছে বা বাস্তবতাও বলছে, এরপরই বিএনপির শীর্ষ নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার মাঠে নামেন এবং ত্রাণ বিতরনে দলীয় সেল গঠন করেন।
কারো কারো অভিমত, বিপ্লব যে পথ দেখিয়েছেন সেই পথে এখন অব্যাহত রয়েছেন এই নেতাসহ তার অনুসারীরা। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে , পারভেজ আকন বিপ্লবের ত্রান তৎপরতা নিয়ে বিএনপির মধ্যেকার একটি অংশ বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারেনি। এই অংশটিই এখন এই যুবনেতার বিরুদ্ধে নিরবে বিষোদগার করছে, বুনছে ষড়যন্ত্রের জাল।
এ বিষয়ে পারভেজ আকন বিপ্লবের প্রতিক্রিয়া কি? তা জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে নারাজ। শুধু জানালেন , তার নেতা মজিবর রহমান সরোয়ারের সাথে পরামর্শক্রমেই তিনি রাজনৈতিক পথে হাঁটতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় পারিবারিক অনুপ্রেরনা এবং দলীয় মহাসচিব মীর্জা ফখরুল আলমগীরের আহবানে সাড়া দিতেই এই ত্রাণ কার্য়ক্রমে নিজেকে অংশীদার করেছেন দলের পক্ষ থেকে।
বিপ্লব ও সাদিক’র ভিতরে মিল এখানেই। সাদিক আব্দুল্লাহ আ.লীগের ব্যানারে কোনো ত্রাণ সহায়তা দেননি। এমনকি স্থানীয় নগর কিংবা জেলা পর্যায়ের কোনো নেতৃবৃন্দ তাকে সহায়তায় এগিয়ে আসেননি। স্থানীয় আ.লীগের মধ্যে এই ত্রাণ নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও তা প্রকাশ্যে আসেনি। তবে কৌশলী সাদিক এ বিষয়ে অভিযোগ বা অভিমান না রেখে “একলা চলো রে” নীতি অবলম্বন করে সিটি কর্পোরেশন মেয়র হিসেবে ত্রাণ কার্যক্রমে নিজেকে নিয়ে গেছেন জনপ্রিয়তার ভিন্ন এক আঙ্গিকে।
স্থানীয় রাজনৈতিক যোদ্ধারা বলছেন, এই ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিয়ে সাদিক আব্দুল্লাহ , পারভেজ আকন বিপ্লব ও মণীষা চক্রবর্তী নিজেদের শুধূ রাজনৈতিক অবস্থান নয়, ব্যাক্তি ইমেজও সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। বিপরীতে তাদের সমকক্ষ বা তার চেয়েও অধিকতর পরিচিত রাজনৈতিক মুখ দুর্যোগে মাঠে না নেমে প্রাদপ্রদীপের আলোর পাশে নিজেদেরকে অন্ধকারের মাঝে লুকিয়ে রাখলেন। অবশ্য সদর আসনের আ,লীগের সাংসদ ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম প্রথমে ত্রাণ তৎপরতায় বেশ সোচ্চার থাকতে দেখা গেলেও হঠাৎ করে বিদ্যুত বিচ্ছিনের ন্যায় নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন । এই নিয়ে নানা মন্তব্য শোনা যায়। কিন্তু ভেতরকার খবরের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি , কেনো তিনি ইমেজ তৈরী বা মানুষের পাশে আসার এই সুবর্ণ সুযোগ থেকে নিজেকে দূরত্বে রাখলেন।

প্রাসঙ্গিক আলোচনায় উঠে এসেছে যে, দলীয় প্রভাব বিস্তারের দ্বন্দে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ত্রাণ তৎপরতায় ভিন্ন মেরুর নেতা মন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এবারও হোঁচট খেলেন । প্রতিদ্বন্দী নেতার ত্রাণ নিয়ে দৌড়-ঝাপে আরও ম্লান হলেন নিরবতায়। অথচ তার থেকেও বয়সে অনুজ যুবদল নেতা পারভেজ আকন বিপ্লব ও বাসদ নেত্রী মনীষা চক্রবর্তী ক্ষমতার কোনো মঞ্চে না থাকলেও বাতিঘরের ন্যায় জ্বলে উঠলেন এই দূর্যোগে , নিজেদের নাম করেছেন আলোকিত।

সর্বশেষ