৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই ফেব্রুয়ারি নিয়ে কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

রবিউল ইসলাম ফরাজী : ১৪ই ফেব্রুয়ারি মানে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস প্রতিটা বছরের মত এবারও শুরু হয়ে গেছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। রাস্তা-ঘাটে ব্রিজে অলিতে গলিতে পাড়ায় মহল্লায় বিভিন্ন রঙে সাজিয়েছে, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। উপলক্ষে ফুলের, দোকানগুলোতে তরুণ তরুণীদের উপরে পড়া ভিড়।
যদিও এ দিনে বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান, বন্ধু-বান্ধব সবার প্রতিই ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়; তবু এর ভিন্নমাত্রা দেখা যায় প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে। এ দিনে তারা একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন ভিন্ন মাত্রায়।
যদিও বলা হয় ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট কোনও দিন বা তারিখ নেই, সপ্তাহের ৭ দিন এবং বছরের ৩৬৫ দিনই ভালোবাসার দিন। তবু ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভালোবাসা প্রকাশের একটি প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। যে কারণে এ দিন টিকেই ভালোবাসা প্রকাশের দিবস হিসেবে নেয়া হয়েছে, এর পেছনে কতগুলো ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা রয়েছে।
ইতিহাস থেকে যে কয়’টি কারণ জানা যায়, এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ঘিরে কয়েকটি ঘটনা।
ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন শিশু-প্রেমিক, সামাজিক ও সদালাপি। তিনি ছিলেন খিস্ট্রধর্মের অনুসারী। তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিলেন দেব-দেবী পূজারী। সম্রাট তাকে দেব-দেবী পূজা করতে বললে তিনি তা অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে সম্রাট ভ্যালেন্টাইনকে বন্দি করে। পরবর্তীতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। তাই এ দিন থেকেই প্রেমিক প্রেমিকা সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালিত করেন।দিবসটি যদিও পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুসরণ, যদিও মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার সাথে সাথে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। তবুও আমাদের তথাকথিত মিডিয়াগুলো তরুণ প্রজন্মকে মুসলিম ও বাঙালি সংস্কৃতি থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের তরুণ-তরুণীদের সামনে দিবসটিকে এতো লোভনীয় আকারে উপস্থাপন করছে যে, এর ফলে অনেক রক্ষণশীল পরিবারের সন্তানরাও এ দিন নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে যায়। আবার অনেকে জেনে বুঝেও শুধুমাত্র বাণিজ্যিক কারণে এ দিবসটি নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি করে থাকে। তারা ১৪ ফেব্রুয়ারি কয়েকদিন আগে থেকে শুরু করে তার কয়েকদিন পর পর্যন্ত এ দিবসকে ঘিরে নানা রকম প্রচারণা চালায়। বিভিন্ন কোম্পানী এ দিবস উপলক্ষে নানা অপার দিয়ে তরুণদেরকে আকর্ষণ করে। বড় বড় হোটেলগুলোর হলরুমে তারুণ্যের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। নানা রঙের বেলুন আর অসংখ্য ফুলে স্বপ্নাতীত করা হয় হলরুমের অভ্যন্তর। অনুষ্ঠানের সূচিতে থাকে লাইভ ব্যান্ড কনসার্ট এবং উদ্দাম নাচ। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত আগতদের সিংহ ভাগই অংশ নেয় সে নাচে। এভাবে নাচতে নাচতে হায়া মায়া, সভ্যতা-শালীনতা সব হারিয়ে আমাদের প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সভ্যতা, সংস্কৃতি, মনুষ্যত্ব ও মানব সমাজকে রক্ষা করতে উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের সুশীল, সমাজ কে সচেতন হতে হবে। অভিভাবকদের নজরে রাখতে হবে তরুন তরুনী-দের যাতে করে ভুল পথে পা, না ভাড়াতে পারে। যা একটি সভ্য দেশ কখনো মেনে নিতে পারে না, কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা নিজেদেরকে ‘মুসলিম’ বলে দাবী করি, কিন্তু ঐটা একটা নামকাওয়াস্তে লেবাস মাত্র। পৃথিবীর প্রায় সব মুসলিম নামধারী দেশ গুলোতে ‘ভালবাসা দিবসের’ নাম দিয়ে তরুন-তরুনীরা ব্যাভিচারের মেতে উঠে। এ ক্ষেত্রে সরকার গুলো যেন নিরব। সরকারের যেনো এখানে কিছুই করার নেই!তবে সুশীল সমাজের একটি দাবি করেন সরকার ও প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে বেহায়াপনা ও বাণিজ্য বন্ধের। বিশ্ব ভালবাসা দিবস, এটি এমন একটি দিবস, যে দিনে কিছু মেয়ে পতিতা হবে, কিছু মেয়ে প্রতারিত হবে, কিছু ছেলে খারাপ কাজে জড়িত হবে। আপনার পরিবার যে আক্রান্ত হবে না, তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে? আপনারা হয়তো জানেন, এই বিশ্ব ভালবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় ৯০,২৪০ জন নারী তাদের গর্ভপাত করে। কি নির্লজ্জতা? এটা কি আইয়্যামে জাহেলিয়াত নয়? তাই এই দিনটিকে কোনো মতেই বিশ্ব ভালবাসা দিবস বলা যাবে না, ১৪ ই ফেব্রুয়ারি দিবসের নাম হবে ”বিশ্ব বেহায়া দিবস”। এই দিবসের সঙ্গে কোনো মুসলিমের সম্পর্ক থাকতে পারে না। কারন মুসলিমদের প্রতিটি দিনই ভালবাসার।
আদ্ দিনু ওয়ান্ নাসিহা, দ্বীন মানেই হলো কল্যাণ কামনা (ভালবাসা উপকার) সুবহানাল্লাহ। কোরআনের প্রত্যেকটি পাতায় পাতায় কেবল ভালবাসার কথাই বলেছেন। মা-বাবাকে কিভাবে ভালবাসতে হবে, আত্মীয়- স্বজনকে কিভাবে ভালবাসতে হবে, স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে কিভাবে ভালবাসতে হবে, প্রতিবেশী, মুসলিম-অমুসলিম বন্ধু-বান্ধব সহ এমনকি মাতা-পিতার বন্ধুদের সাথে কি আচরণ করতে হবে, সব খুলে খুলে আল্লাহ সুবহানাহু বেহায়াপনা নিয়ম শুদ্ধ আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। এটা মুসলমানের কোনো প্রয়োজন নাই, এটা প্রয়োজন ঐ দেশে, যে দেশের জীবনে, পরিবারে, সমাজে কোনো ভালবাসা নাই। যে দেশের ছেলে- মেয়েরা ১৮ বছর পার হলেই মা- বাবাকে ছেড়ে গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে লিভ-টুগেদার করে, সেই দেশের জন্য ভালবাসা দিবসের প্রয়োজন থাকতে পারে। যেই দেশে বার্ধক্যে বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হয়, সেই দেশে নির্দিষ্ট একটি দিন ভালবাসার নামে বেহায়াপনার জন্য প্রয়োজন হতে পারে। আমাদের মতো শান্তির দেশ, ভালবাসার দেশে ‘ভালোবাসা দিবসের’ মতো ‘বেহায়া দিবসের’ কোনো প্রয়োজন নাই। ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস, যা পালনে অবনতি ছাড়া উন্নতি নাই। ভালবাসা দিবস পালন করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালন থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। তাই আসুন বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালন করা থেকে সকলেই বিরত থাকি। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন আমিন।

সর্বশেষ