২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিএম কলেজে যোগদানে এসেই রাজনৈতিক বাধায় ৪ অধ্যাপক

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

অনলাইন ডেস্ক:  বরিশাল বিএম কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে প্রফেসর এ এস এম কাইয়ুম উদ্দিন আহমেদের যোগদানে বাধা দিয়েছে সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। তারা গতকাল রোববার প্রফেসর কাইয়ুমকে দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষক হিসেবে আখ্যায়িত করে এই যোগদান প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে। প্রফেসর কাইয়ুম প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের আমলে টানা ১০ বছর অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে বিএম কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। ওই সময়ে নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক শংকর চন্দ্র দত্ত যোগদান করতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করার ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বিএম কলেজে চারজন অধ্যাপক যোগদানে বাধার মুখে পড়লেন। তবে প্রফেসর কাইয়ুম উদ্দিন দাবি করেছেন, একদল ছাত্রনেতা তার যোগদানে বাধা দিচ্ছে। এর নেপথ্যে রয়েছেন কথিত শিক্ষক নেতারা।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার সকাল থেকে একদল যুবক ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন। ক্যাম্পাসের আমবাগানে একদল যুবক ক্রিকেট খেলছে, শহীদ মিনারের সামনে বটগাছের নিচে আর একদল অবস্থান নিয়েছে। এদের অধিকাংশই বহিরাগত বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তারা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুনিম এবং সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতের অনুসারী বলে জানা গেছে। তারা কলেজের প্রশাসনিক ভবনের গেটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে বিক্ষোভকারীরা সদ্য দায়িত্ব পাওয়া অধ্যাপক কাইয়ুম উদ্দিনকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে আখ্যায়িত করে তার যোগদান স্থগিতের দাবি জানান।

আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্স শেষবর্ষের ছাত্র দাবিদার ইয়াসির আরাফাত বলেন, বিগত দিনে শিক্ষক কাইয়ুম উদ্দিন কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক থাকা অবস্থায় দুর্নীতি করেছেন। তিনি অস্থায়ী কর্মপরিষদ করে নানা কেলেংকারি করেছেন। তার ইন্ধনে এর আগে শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হয়েছেন। তারা বর্তমান অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে এই যোগদান স্থগিত করার জন্য প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। আন্দোলনরত অনিক ইসলাম নামে ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের এক ছাত্র জানান, দুর্নীতিগ্রস্ত কোনো শিক্ষককে এ কলেজে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তারা ছাত্রলীগসহ এই যোগদান প্রটেকশন দিতে সংগঠিত হয়েছেন।

জানতে চাইলে প্রফেসর এএসএম কাইয়ুম উদ্দিন আহমেদ বলেন, তাকে যোগদানে বাধা দিতে একদল ছাত্রনেতা গত শনিবার রাত থেকে ক্যাম্পাস দখল করে রেখেছে। রোববার ওই ছাত্রনেতারাই যোগদান ঠেকাতে কলেজের প্রধান গেটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। এ অবস্থায় তিনি অধ্যক্ষকে ফোন দিয়েও পাননি। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ক্যাম্পাসে এখনই যাবেন না, অপেক্ষা করবেন। অবশ্য মন্ত্রণালয় আদেশ দিয়েছেন অবিলম্বে যোগদানের। অধ্যাপক কাইয়ুম বলেন, তিনি বিএম কলেজের ১০ বছরের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। সরকারের সবার আদেশ-নির্দেশে কাজ করতে হয়েছে। এখন তিনি (কাইয়ুম) নাকি কারও লোক না এমনটা চিহ্নিত করে বিএম কলেজ উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করতে দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ছাত্রনেতাদের সঙ্গে শিক্ষক পরিষদের কথিত নেতারাও জড়িত।

বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনীম বিএম কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেন। তার অনুসারী কর্মীরাই গতকাল রোববার কলেজ ক্যাম্পাসে নবাগত উপাধ্যক্ষ বিরোধী আন্দোলনে ছিলেন। এ প্রসঙ্গে আতিকুল্লাহ মুনীম বলেন, সাধারণ ছাত্ররা মনে করছেন অধ্যাপক কাইয়ুম উদ্দিন উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করলে কলেজে দুর্নীতি বাড়বে। এজন্য তারা আন্দোলন করছে। প্রয়োজন মনে করলে ছাত্রলীগও সাংগঠনিকভাবে এ আন্দোলনে যোগ দেবে।

রাজনৈতিক চাপে যোগদানে বাধার মুখে চার অধ্যাপক : বিএম কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে প্রফেসর এএসএম কাইয়ুম উদ্দিন আহমেদের যোগদানে গতকাল রোববার যেমন বাধা প্রদান করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঠিক একই ধরনের বাধা এমনকি মারধরের শিকারও হয়েছেন বিগত আরও তিনজন অধ্যাপক। এর মধ্যে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক শংকর চন্দ্র দত্ত যোগদানের চেষ্টা করলে তৎকালীন অবৈধ কর্মপরিষদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করে বের করে দেয়। ওই ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। অধ্যাপক কাইয়ুম উদ্দিন তৎকালীন সময় কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে অধ্যাপক কাইয়ুমের ইন্ধনেই তখন অধ্যাপক শংকর চন্দ্র দত্ত যোগদান করতে গিয়ে মার খেয়েছেন।

একইভাবে কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে ২০১১ সালে যোগদান করতে এসেও ব্যর্থ হয়েছিলেন অধ্যাপক নুরুল আমিন। একইভাবে অধ্যক্ষ হিসেবে সামশুদ্দিন খান বিএম কলেজে যোগদান করতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এ দুটি ঘটনায়ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে শিক্ষকরা দাবি করেন।

প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষক পরিষদের ভূমিকা : বরিশাল বিএম কলেজের শিক্ষকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সংগঠন শিক্ষক পরিষদ বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ছিল। সদ্য বাধার মুখে পড়া অধ্যাপক কাইয়ুম উদ্দিন ১০ বছর অবৈধভাবে শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটির সম্পাদক আল আমিন সরোয়ারও অবৈধভাবে দখল করে আছেন এ পদটি। যে কারণে শিক্ষকদের ক্রান্তিকালে নেতাদের পাশে পাওয়া যায় না বলে কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক অভিযোগ করেছেন। বিএম কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সহকারী আল আমিন সরোয়ারকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর সফিকুর রহমান সিকদার নির্বাহী আদেশে এক বছরের জন্য দায়িত্ব প্রদান করেন। সাধারণ শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও শিক্ষক আল আমিন সরোয়ার রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দেড় বছর ধরে অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছেন। এ নিয়ে কলেজে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএম কলেজের উপাধ্যক্ষ হতে ১৯ জন অধ্যাপক আবেদন করেছেন। তাদের কারও কারও ইন্ধনও রয়েছে অধ্যাপক কাইয়ুমের যোগদান বাধাগ্রস্ত করার জন্য এমনটাই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে ছাত্র, শিক্ষকদের মাঝে।

বিএম কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক আল আমিন সরোয়ার বলেন, অধ্যাপক কাইয়ুম উদ্দিন উপাধ্যক্ষ পদে যোগদানে শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক হিসাবে তিনি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন। কিন্তু কাইয়ুম উদ্দিন এ পর্যন্ত তার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে এ শিক্ষক নেতা বলেন, কাইয়ুম উদ্দিন অনৈতিকভাবে টানা ১০ বছর শিক্ষক সম্পাদক পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। তখন কলেজের ইজারার জমির ২ শতাংশ ব্যক্তির নামে অন্তর্ভুক্তিসহ অসংখ্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ওই সময়ে তার বাধার কারণে নুরুল আমিন নামক এক শিক্ষক উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করতে পারেননি। অধ্যক্ষ শংকর চন্দ্রের ওপর হামলা ঘটনার মূল হোতা ছিলেন কাইয়ুম উদ্দিন।

এ ব্যাপারে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া বলেন, ছাত্রদের দাবি উপাধ্যক্ষ হয়ে আসা কাইয়ুম স্যারকে তারা যোগদান করতে দেবে না। তিনি বলেন, কাইয়ুম স্যার যোগাযোগ করছে। তাকে যোগদানের জন্য কলেজে আসতে বলেছেন। কিন্তু এখনও আসেননি। এ কলেজে এ পর্যন্ত চারজন অধ্যক্ষ বাধারমুখে যোগদান করতে পারেননি এ প্রসঙ্গে অথ্যক্ষ ড. কিবরিয়া বলেন, এমনটা কাম্য নয়। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিত অবশ্যই কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। অধ্যক্ষ বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ শিক্ষক পরিষদ নিয়েও তিনি চিন্তা করছেন। করোনা পরিস্থিতি গেলে একটি গঠনতন্ত্র তৈরি করে পরিষদের নির্বাচন দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

 

আলোকিত বাংলাদেশ

সর্বশেষ