২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এফ এমের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে বরিশাল বেতার কেন্দ্র

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল শহরের সন্নিকটে অবস্থিত বরিশাল বেতার কেন্দ্রটি। এ এম বন্ধ দুদিন। এফ এমের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে বরিশাল বেতার। দুর্নীতি আর অনিয়মের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। দুর্নীতিবাজ স্বার্থান্বেষী মহলের দৌরাত্মে কেন্দ্রটি এখন প্রায় নামসর্বস্ব কেন্দ্র পরিণত হয়েছে। অনিয়ম দুর্নীতির ফলে সৃষ্ট সমস্যার জন্য কেন্দ্রটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।

মানসম্পন্ন অনেক অনুষ্ঠান প্রচার কমে গেছে। বছরের পর বছরেও অনেক শিল্পী বেতারে অনুষ্ঠান করার আমন্ত্রণ পাননা। এখানে দুর্নীতির মধ্যে রয়েছে বছরের পর বছর অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণের সুযোগ এবং পূণঃ প্রচারিত কোন অনুষ্ঠানের শিল্পী সম্মানী না দিয়ে ভুয়া বিল করে টাকা আত্মসাৎ করা।

অভিযোগ রয়েছে- তোষামোদী পছন্দের শিল্পী ও ব্যক্তিদের একই দিনে বার বার অনুষ্ঠান করার সুযোগ দিয়ে টাকা তুলে ভাগাভাগি করা হয়।অধিকাংশ অংশগ্রহণকারীদের মেধা বিবেচনা করা হয়না ও অনুষ্ঠানের মান যাচাই না করে প্রচারিত হয়। যাচাই বাছাই ছাড়া বরিশাল বেতারে অনুষ্ঠান প্রচার হওয়ার কারনে আষাঢ়ের প্রোগ্রাম গরমে আর গরমের প্রোগ্রাম আষাঢ়ে প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার এই প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব হলেও কর্মকর্তারা টাকার পাহাড় বানাতে ব্যস্ত।

দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে ১৯৯৯ সালের ১২ জুন বরিশাল বেতার কেন্দ্রটি একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।যে উদ্দ্যেশে বেতার কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছিল সে উদ্দ্যেশ্য আজ বিফলে। কারন বেতার বন্ধ দুদিন যাবৎ। রেডিওতে শুনতে পারছেন না দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ কেন্দ্রের কোন অনুষ্ঠান।

২০১৩ সালে ১০ কিলোওয়াট মধ্যম তরঙ্গ ট্রান্সমিটারের পরিবর্তে ২০ কিলোওয়াট শক্তির মধ্যম তরঙ্গ ট্রান্সমিটার প্রতিস্থাপন করা হয়। এছাড়া ২০১৩ সালে ১০ কিলোওয়াট শক্তির একটি নতুন এফ.এম. ট্রান্সমিটার স্থাপন করা হয়।
২০১৩ সাল থেকে স্থাপিত ২০ কিলোওয়াট ১২৮৭ কিলোহার্জে এফএমে রেডিওতে অনুষ্ঠান প্রচারিত হলেও মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায়। মেরামতের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

বেতার সবার জন্য, সবসময়, সবখানে’ এই প্রতিপাদ্য কাগজে কলমে পরিনত হয়েছে দক্ষিনাঞ্চলের কোটি মানু্ষরে কাছে। রেডিও অন করে বরিশাল সেন্টার ধরাতে গেলে শো শো শব্দ করে। ২০ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন হলেও বাকেরগঞ্জ বসেও শ্রোতারা শুনতে পায়না স্পষ্ট কথা।

ফলে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যক্রমভিত্তিক অনুষ্ঠান, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক অনুষ্ঠান- ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং আইটি বিশ্ব, তথ্য অধিকার ও আমাদের অধিকার, সরকারী বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান- পরশমনি, এসো কুরআন শিখি ও রমজানুল মুবারক, স্বাস্থ্য ও সম-সাময়িক বিষয়ক ফোন-ইন অনুষ্ঠান: জিজ্ঞাসা, সংগীত বিষয়ক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান-প্রিয় সুর প্রিয় গান, খেলাধুলা বিষয়ক অনুষ্ঠান-খেলার মাঠে, আবহাওয়া বার্তাসহ সকল অনুষ্ঠান।

বরিশাল বেতার কেন্দ্রটি দুর্নীতির আতুড়ঘর হওয়ায় এ কেন্দ্রটি এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি চর্চা ও লালনে এবং একইসাথে জনস্বার্থ ও জাতীয় ইস্যুতে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারছেনা। অভিযোগ রয়েছে পাচঁ থেকে ছয় বছর যাবৎ বরিশাল বেতার কেন্দ্রে দ্বায়িত্ব পালন করছেন আঞ্চলিক প্রকৌশলী হিসেবে আবদুল্লাহ নুরুস সাকলাইন। তিনি কাউকে পরোয়া করেননা। বেপরোয়া কর্মকান্ডের জন্য বরিশাল বেতার কেন্দ্রটির এ অবস্থা। বেতারের স্টুডিওগুলো আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল করা হলেও কনসাল, মাইক্রোফোনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ থাকে নষ্ট। রশি আর কসটেপ দিয়ে চালাতে হয় এসব যন্ত্রাংশ।

বরিশাল বেতার কেন্দ্রটি অনুষ্ঠান, প্রকৌশল ও বার্তা-এই তিন শাখার সমম্বয়ে সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দুদিন যাবৎ এফ এম বন্ধ, অনুষ্ঠানের মান নাই। পুরনো রেকর্ডিং বার বার প্রচার করাই হচ্ছে এখন এ কেন্দ্রটির মুল কাজ।

শিল্পীসম্মানী আর অনুষ্ঠানের জন্য শিল্পীদের মনোনয়ন নিয়ে রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। একজনকে একই দিনে এবং পর পর একাধিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের বিধান না থাকলেও তোষামোদির কারণে ব্যক্তি বিশেষকে বার বার অনুষ্ঠানও করতে দেখা যায়। আঞ্চলিক পরিচালকের পছন্দের লোকদের বেশি অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণের হার অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল বেতার কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক কিশোর রঞ্জন মল্লিক জানান, এএম বন্ধ রয়েছে গতকাল থেকে তবে এটা প্রকৌশলী শাখার। তিনি প্রকৌশল বিভাগে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

এ এম বন্ধ সহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে বরিশাল বেতারের আঞ্চলিক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ নুরুস সাকলাইন বলেন, ১৩ জুলাই থেকে বরিশাল বেতারের এ এম বন্ধ রয়েছে। টেকনিক্যাল বিষয় পার্টস বিকল হওয়ার কারনে হয়তো বন্ধ হয়ে গেছে। চেষ্ট চলছে আশা করি চালু করা সম্ভব হবে।বরিশাল বেতারে ৫ থেকে ছ বছর আছি বলে স্বিকার করে বলেন আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অসত্য। বেতার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন,কবে নাগাদ চালু হবে তা কেউ সঠিক ভাবে বলতে পারছেনা।

সর্বশেষ