২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শেবাচিমে এক বছরেও শিডিউল পাচ্ছেন না ডায়ালাইসিস রোগীরা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০ বেডে চিকিৎসা দিয়ে ডায়ালাইসিস রোগীদের সামাল দিতে পারছেন না চিকিৎসক ও নার্সরা। অনেকে এক বছর আগে আবেদন করেও শিডিউল পাচ্ছেন না। ফলে দিন দিন আরও জটিল সমস্যায় পড়ছেন ডায়ালাইসিস রোগীরা।

হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, ডায়ালাইসিস রোগীদের সামাল দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আরও ৫০টি বেড চাওয়া হয়েছিল। পাওয়া গেছে মাত্র ১০টি। এক মাসের অধিক সময় হলেও সেগুলো স্থাপন করা হয়নি। ওই ১০টি বেড চালু হলে প্রতিদিন ৪০ রোগীর ডায়ালাইসিস করানো যাবে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, কর্তৃপক্ষের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বর মাসে ডায়ালাইসিসের জন্য ১০টি বেডসহ সব মেশিনারি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়। আসার পর থেকে হাসপাতালের একটি কক্ষে ওসব জিনিসপত্র বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। কয়েকদিন আগে সেখান থেকে বেডগুলো হাসপাতালের তিনতলায় ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডের পাশের কক্ষে নিয়ে ফেলে রাখা হয়। এখন পর্যন্ত বেডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেশিনারি সংযুক্ত করা হয়নি। এ কারণে রোগীদের ডায়ালাইসিস করানো সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে প্রতিদিন বাড়ছে ডায়ালাইসিস রোগীদের আবেদনের সংখ্যা।

পাশাপাশি দুই বেডে ডায়ালাইসিস চলছিল ঝালকাঠি সদরের আড়তদারপট্টির বাসিন্দা মো. মাসুদ ও তার বাবা আনোয়ার হোসেনের। দুই বছর ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত জানিয়ে মাসুদ বলেন, ‌‘প্রথম দিকে ঢাকায় ডায়ালাইসিস করাতাম। সপ্তাহে পাঁচ হাজার টাকা লাগতো। আর্থিক সংকটে প্রাইভেট হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করানো সম্ভব হয়নি।’

আমার বাবাও একই রোগে আক্রান্ত উল্লেখ করে মাসুদ আরও বলেন, ‘সপ্তাহে দুবার বাবা ও আমার ডায়ালাইসিস করাতে হয়। এতে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। যৌথ পরিবারে ওই খরচ মেটানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

যেসব পরিবারে দুই-তিনজন কিডনি রোগী আছেন তাদের একজনের টাকা মওকুফ করলে পরিবারের অনেক উপকার হতো জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই রোগটি ব্যয়বহুল। তারপরও কেউ মরতে চান না। আল্লাহ যে কয়েকদিন হায়াত দিয়েছেন, ওই কয়েকদিন বেঁচে থাকার লড়াই করছি আমরা। এজন্য সপ্তাহে ডায়ালাইসিসের জন্য হাসপাতালে ছুটতে হয়।’

সরেজমিনে শের-ই-বাংলা হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, আবেদন করেও মাসের পর মাস শিডিউল পাচ্ছেন না অনেকে। এর মধ্যে একজন নগরীর কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা মলিনা দাস। তিনি বলেন, ‘ডায়ালাইসিস করানোর জন্য এক বছর আগে আবেদন করেছি। এখন পর্যন্ত শিডিউল পাইনি। শিডিউল পেতে প্রতিদিন হাসপাতালে ধরনা দিচ্ছি। আমার ছেলেসন্তান নেই। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এখন শিডিউল পেতে কাউনিয়া থেকে প্রতিদিন একা হাসপাতালে আসতে হয়। এতে দিন দিন আরও অসুস্থ হচ্ছি। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।’

আমার মতো অনেক রোগী শিডিউলের অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে মলিনা দাস আরও বলেন, ‘রোগীর চাপে শিডিউল মিলছে না। এজন্য ডায়ালাইসিস বেড বাড়ানো দরকার। সেইসঙ্গে দুই শিফটের স্থলে তিন শিফট চালুর দাবি জানাই। এতে অন্তত এক বছর অপেক্ষা করতে হবে না।’

হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডের ইনচার্জ বিউটি খানম বলেন, ‘আমাদেরকে ঢাকা কিডনি হাসপাতাল থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এখানে আনা হয়েছে। এখানে আসার পর আমরা আবার প্রশিক্ষণ দিয়েছি অন্যদের। এভাবে জনবল বাড়িয়ে কিডনি রোগীদের চিকিৎসা চলছে।’

বর্তমানে ১০ বেডে সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দুই শিফটে ২০ রোগীর ডায়ালাইসিস করানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গুরুতর অসুস্থদের সিরিয়াল করা হয় না। তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে ডায়ালাইসিসের সুযোগ দেওয়া হয়। যাদের শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো তাদের আবেদনের ভিত্তিতে সিরিয়াল অনুয়ায়ী শিডিউল দেওয়া হয়। এখনও আমাদের কাছে তিন শতাধিক আবেদন জমা আছে। প্রতিদিন আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে এমনও আছেন এক-দেড় বছর আগে আবেদন করেছেন। কিন্তু তাদের শিডিউল দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

এ বিষয়ে হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী রুমি বলেন, ‘২০২০ সালের ১২ মে হাসপাতালের তিনতলায় মেডিসিন ইউনিটে নেফ্রোলজি বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিদিন ১০টি মেশিনে ২০ জনকে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চাপ সামাল দিতে পরিচালক আরও ৫০টি ডায়ালাইসিসের বেড ও মেশিনারির চাহিদাপত্র দিয়েছিলেন। মন্ত্রণালয় থেকে ১০টি বেড ও মেশিনারি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু জায়গা সংকটে সেগুলো এখনও বসানো হয়নি। বর্তমানে যেখানে ডায়ালাইসিস চলছে তার পাশে একটি কক্ষে ১০টি বেড স্থাপনের কাজ চলছে। ১০ বেড চালু হলে আরও ২০ রোগীর ডায়ালাইসিস করানো যাবে।’

৫০ বেড দিলেও রোগীদের চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বিভাগীয় শহর হওয়ায় কিডনি রোগীর চাপ অনেক বেশি। এজন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত জায়গা এবং জনবল সংকট দূর করা। বড় পরিসরে পৃথক ওয়ার্ড চালু করতে হবে। এতে ডায়ালাইসিসের বেড এবং মেশিনারি আসার সঙ্গে সঙ্গে তা স্থাপন করে কাজ শুরু করা যাবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ডায়ালাইসিস মেশিন আসার পরই একটি কক্ষ সংস্কারের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা দেরিতে কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে যেখানে ডায়ালাইসিস করানো হচ্ছে ওই কক্ষের পাশের কক্ষটি প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানে ডায়ালাইসিসের বেড আনা হয়েছে। কিন্তু কক্ষটি প্রস্তুত না করায় বেডের সঙ্গে মেশিনারি সংযুক্ত করা যাচ্ছে না।’

কক্ষ প্রস্তুতের সবশেষ অবস্থা জানতে এই প্রতিনিধির সামনেই গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাকে কল দেন হাসপাতালের পরিচালক। এ সময় গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা অপরপ্রান্ত থেকে পরিচালক জানান, কক্ষটি প্রস্তুত করতে আরও তিন-চার দিন লাগবে।’

গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের গড়িমসির কারণে নতুন ১০টি বেডের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না অভিযোগ করে হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, ‘দেড় কোটি মানুষের ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। এই অঞ্চলে প্রচুর কিডনি রোগী রয়েছেন; যাদের ১০টি বেড দিয়ে সামাল দেওয়া কষ্টকর। এ কারণে গত বছর ৫০টি বেডের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছিলাম। ১০টি বেড দেওয়া হয়েছে। বাকি বেডগুলো পাবো বলে আশা করছি।’

সর্বশেষ