৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইঁদুরের গোলায় দুরন্ত শিশু-কিশোরের হানা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা, পটুয়াখালী,প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ঝরে পড়া ও ইঁদুরের গর্তে জমানো ধান সংগ্রহে মেতে উঠেছে স্থানীয় শিশু-কিশোররা।রোদ কিছুটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওরাঁ দল বেঁধে নেমে পড়েন সদ্য সাফ হওয়া ফসলের মাঠে। করো হাতে খুন্তি, কোদাল, শাবল। আবার কারো হাতে ব্যাগ। শিশু-কিশোররা মাটি খুঁড়ছে। তবে কোন গুপ্তধন পাওয়ার আশায় নয়। মাটি খুঁড়ে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করছে তারা। স্থানীয় ভাবে যাকে বলে ইঁদুরের গোলায় হানা।
ভাগ্য ভালো হলেই দু’চারটি গর্তে মেলে ৮ থেকে ১০ কেজি ধান। এরাঁ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থী। এ মৌসুমে অনেক শিশু-কিশোর স্কুলে না গিয়ে দিন পার করছে ফসলের মাঠে ইঁদুরের গোলায় হানা দিয়ে ধান সংগ্রহে। দরিদ্র শিশুরা জানান, তাদের সংগ্রহ করা ধানে ২/৩ মাস খাবারের সংস্থানসহ চলে লেখা পড়ার খরচ ও কেনেন শীতের পোশাক। ইকরচালী ইউপি’র সাতঘড়ি পাড়া গ্রামের বিলে ধান সংগ্রহ করতে আসেন ৫ থেকে ৭ জন কোমলমতি শিশু- কিশোর। এসময় ১০ বছরের শিশু জিয়াদ বলেন, বিভিন্ন মাঠে সংগ্রহ করা ধান দিয়ে ২/৩ মাসের খাবারও হয় এবং বিক্রির টাকা দিয়ে কেউ কেনেন শীতের পোশাক, কেউ কেনেন খাতা-কলম। আরেক কিশোর রুসেল (৯) বলেন, আমরা সদ্য সাফ হওয়ায় বিভিন্ন ফসলের মাঠ থেকে পড়ে থাকা গোছা ধানের শীষ ও ইঁদুরের গর্তে হানা দিয়ে ধান সংগ্রহ করি। এধান বিক্রি করে কেউ কেনেন শীতের পোশাক, কেউ কেনেন খাতা-কলম। দল বেঁধে এভাবে ধান সংগ্রহ করতে আমাদের খুব ভালো লাগে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের দিগন্ত ভরা ফসলের মাঠে ধান কুড়ানি শিশু-কিশোর, বউ, ঝি, বিধবা নারীরা দলবেঁধে চষে বেড়াচ্ছেন। তাদের পরনে উসকো খুসকো পোশাক, গায়ে কাঁদা মাটির দাগ। তারা তুলছেন পড়ে থাকা গোছা ধানের শীষ। ভাগ বসাচ্ছেন ইঁদুরের গর্তে জমানো ধানে। দৈনন্দিন এমন দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। গোলখালী ইউনিয়নের চর হরিদের গ্রামের আমন ধান চাষী নাসির উদ্দীন হাওলাদার বলেন, ক্ষেত থেকে ইঁদুর ধানের শীষ কেটে নিয়ে আপদকালীন খাদ্য হিসেবে গর্তে মজুদ রাখে। শিশু-কিশোরাও যেন ইঁদুরের ব্যতিক্রম নয়। তারাও আপদকালীন খাবার সংগ্রহ করছেন। আর মাটিতে পড়ে থাকা ধান সংগ্রহে আমরা বাঁধা দেই না। এতে এক দিকে পড়ে থাকা ধানের অপচয় রোধ হচ্ছে। অন্যদিকে গ্রামের হতদরিদ্র শিশু পরিবার থেকে শুরু করে বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা নারীরা এ ধানের পুঁজি দিয়ে শীতকালীন মুড়ি, পিঠা তৈরি করে সংসারে আয়-রোজগার করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আরজু আক্তার বলেন, ধান ঘরে তোলার পর ফসল শুন্য মাঠে ধান কুড়ানী এবং ইঁদুরে গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তবে এখন আগের মত ইঁদুরের গর্তে তেমন ধান পাওয়া যায় না। কারণ কৃষক পর্যায়ে ইঁদুর নিধনে নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ধান কাটা-মাড়াই করলে ধানের অপচয় রোধ হবে।

সর্বশেষ