৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে জায়েদ ভুল করেছে: ফারুক

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলচ্চিত্র স্বার্থবিরোধী কর্মকা-ে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে বয়কট করেছে চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি, পরিচালক সমিতিসহ অপরাপর সংগঠন। এতে টালমাটাল আর অনিশ্চয়তায় পড়েছে চলচ্চিত্র অঙ্গন। শিল্পীরা দেখছেন চোখে মুখে হতাশা। যদিও এ হতাশায় কিছুটা হলেও আলো হয়ে অভিভাবকতুল্য কথা বলেছেন চিরবিপ্লবী কন্ঠস্বর বরেণ্য অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ওরফে ফারুক।

এক ভিডিওবার্তায় ‘সুজন সখি’খ্যাত এই অভিনেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একটা কথা বলতেই হয় শিল্পীদের অবাঞ্ছিত করার ক্ষমতা পৃথিবীর কারও নেই। শিল্পীরা তাদের নিজস্ব পৃথিবী তৈরি করেন। সেই পৃথিবীতে বাস করেন। তাদের কোনো বর্ডার নেই। যারা বলেন শিল্পীদের বয়কট করেছি তাদের মতো মূর্খ লোক পৃথিবীর কোনো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে থাকা উচিত নয়।’

এমন ভিডিওবার্তার পর মুঠোফোনে বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে মিয়াভাইখ্যাত প্রভাবশালী এই অভিনেতা বলেন, ব্যাপারটা আমার না। তারপরও আমার লাগে কারণ আমি শিল্পী। প্রযোজক-পরিচালকসহ যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা ভুলে গেছেন ওই ১৮ সংগঠনের আমি প্রধান। প্রযোজক নেতাদের মধ্যে না হয় বিএনপির লোকজন দিয়ে ভরা তাই বলে কি গুলজার পারতো না বিষয়টির সমস্যা কাঁধে তুলে নিয়ে আমাকে একবার জানাতে? তারা সেটাতো করলেনই না বরং এই কারোনাকালে হুট করেই অনেক আগের একটা প্রসঙ্গ তুলে জায়েদ খানকে বয়কট করলো। কাজটি সঠিক করেছে বলে আমি মনে করি না। বলছি না জায়েদ দোষত্রুটির ঊর্দ্ধে। পৃথিবীর কেউ-ই ধোয়া তুলসী পাতা নয়, ভুল ওর থাকতেই পারে তাই বলে বলা নেই কওয়া নেই, হল খোলার খবর নেই, ঠিকমত শুটিং হচ্ছে না, শিল্পী টেকনিশিয়ানরা অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে এরমধ্যে বয়কট বয়কট খেলা? এটা কি ভালো উদাহরণ হলো?

‘জনতা এক্সপ্রেস’খ্যাত ফারুক বলেন, ‘জায়েদ অন্যায় করলে সেটা নিয়ে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। এখানে কিন্তু তারা সেটা করে নি। আমার কাছে তাই পরিস্কার মনে হচ্ছে চলচ্চিত্রাঙ্গনকে অস্থির করতে সংগঠনগুলোতে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপির অনুসারীদের কাজ তাদের সঙ্গে হয়তো জোট বেধেছে দালালশ্রেণি। আসলে এসব চক্র কখনই ইন্ডাস্ট্রির ভালো কিছু চায় নি।’

“আজকে দেখো প্রযোজক নেতারা এত বড় বড় কথা বলছে কই তারাতো ছবি বানাচ্ছেন না। তারাতো সেটা করছেই বরং পরিচালক সমিতিকে এখন ব্যবহার করছেন। পরিচালক সমিতি বুঝে হোক বা না বুঝে হোক ব্যবহার হচ্ছেন। এটা দুঃখজনক। আলোচনা করেই যেখানে সমস্যার সমাধান সম্ভব সেখানে এই পরিস্থিতি তাদের এই বয়কট সিদ্ধান্ত আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আরও দুটি বিষয় বলতে চাই প্রথমত জায়েদ-মিশা-ডিপজল ওরা কিন্তু চাইলে করোনাকালে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘরে বসে থাকতে পারতো। কিন্তু ওরা সেটা করে নি বরং শিল্পীদের অভূক্ত রেখে নিজেরা পেটপুরে খাবে এমনটা ওরা করেনি। যেটা অন্যান্য সংগঠনগুলোর নেতারা করছেন। এটা কি এই ছেলেদের অপরাধ? দ্বিতীয়ত পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকেই বাংলা ভাষাভাষি শ্রোতারা এন্ড্র কিশোরকে জানেন। তার মৃত্যুতে তার পরিবারের পর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র। যারা বড় বড় কথা বলেন তারা কিন্তু একটা ফুলের তোড়া হাতে কেউ তার শেষকৃত্যে যান নি। জায়েদ গিয়েছে। তার এই যাওয়ার মধ্য দিয়ে কোটি কোটি এন্ড্রু ভক্তরা দেখলো চলচ্চিত্র পরিবার থেকে কেউ করোনাকে উপেক্ষা করে অন্তত শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে জায়েদ চলচ্চিত্রকে আরও সম্মানিত করেছে অথচ আমরা ওকে বয়কট করে মানুষকে জানিয়ে দিলাম আমাদের ভেতরে থাকা ক্ষোভের কথা। হ্যাঁ আমিও বলি জায়েদ ভুল করেছে ও চলচ্চিত্রকে এখনকার অনেক কর্মহীন নেতার চেয়ে বেশি ভালোবেসে এটা সত্যি অন্যায়।

সংকটকালে চলচ্চিত্রবোদ্ধারা আপনার অবস্থান থেকে সমাধান প্রত্যাশা করছে এ ব্যাপারে কি বলবেন। জবাবে ফারুক বলেন, অতীতেও সংকট গেছে, ভূমিকা রেখেছি। তখন প্রচুর কাজ হতো অল্পতেই সমাধান করা গেছে। কিন্তু এখনকার ওরা কাজহীন ঘরের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এই অহমিকাটা না কমালে সেখানে গিয়ে ফায়দা নেই। তবে এটা অবশ্যই বলবো কেউ যদি আমার প্রিয় এই স্থানটাকে নিয়ে রাজনীতি করতে চান তাহলে তাকে কঠোরভাবেই জবাব দেওয়া হবে। চলচ্চিত্রকে যারা ভালোবাসেন তারাও জবাব দেবেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন নায়ক ফারুক তাদের একজন। সুজন সখী, গোলাপী এখন ট্রেনে, সারেং বউ, লাঠিয়াল, নয়নমণি, মিয়াভাই, আলোর মিছিল-অসংখ্য আলোচিত সিনেমার নায়ক ফারুক। তার নায়ক জীবনে এদেশের শীর্ষ সব নায়িকারা অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন আজীবন চলচ্চিত্র সম্মাননা। অভিনেতা ছাড়া ঢাকা-১০ আসনের একজন সংসদ সদস্যও তিনি।

সর্বশেষ