দৌলতখান (ভোলা) প্রতিনিধি :: ভোলার দৌলতখানে সদ্য প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি কলেজের অফিস সহকারি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একটি বিদেশি সংস্থার পক্ষ থেকে গভীর নলকূপ, উন্নত জাতের গাভী, পাকা ঘর ও মসজিদ নির্মাণ করে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে উপজেলার সহস্রাধিক মানুষের কাছ থেকে উল্লিখিত পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। ওই দুই প্রতারক হলেন চরখলিফা ইউনিয়নের ৩ নং ওযার্ডের রুহুল আমিনের ছেলে শহিদ ও তার স্ত্রী আঁখি আক্তার। টাকা ফেরৎ পেতে পাওনাদাররা গত কয়েকদিন ধরে বাড়িতে এসে উপর্যুপরি চাপপ্রয়োগ করতে থাকলে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে শহিদের বাবা-মায়ের কাছে ফেলে রেখে শহীদ ও তার স্ত্রী আঁখি আক্তার আত্মগোপনে চলে যায়। সরেজমিন গেলে প্রতারণার শিকার শতাধিক ভুক্তভোগী তাৎক্ষণিক এসে হাজির হন।
তারা জানান, শহিদের স্ত্রী আঁখি আক্তার কুয়েতী একটি উন্নয়ন সংস্থায় চাকুরী করেন বলে দীঘদিনধরে এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। ওই সংস্থা দৌলতখানে সুপেয় পানির জন্য কয়েক গভীর নলকূপ, দরিদ্রদেরকে উন্নত জাতের গাভী, পাকা ঘর ও কিছু পাকা মসজিদ নির্মান করে দেবে বলে প্রচার চালান। এসব পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহস্রাধিক মানুষের কাছ থেকে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা করে উত্তোলন করেন। এতে আনুমানিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করেন। আর এসব টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে চরখলিফা ইউনিয়নের চার ইউপি সদস্য ও দৌলতখান পৌরসভার এক মহিলা কাউন্সিলরকে আস্থার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। চরখলিফা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য জাহিদ হোসেন টিটু ও ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য আজম খান বলেন, আমাদের এলাকায় ৫৭ টি গভীর নলকূপ দেবে বলে ৫৭ জনের কাছ থেকে ২০ হাজার করে ১১ লাখ চল্লিশ হাজার টাকা, ১০ টি গাভী দেবে বলে ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা ও একটি মসজিদ নির্মান করার কথা বলে ২০ হাজার টাকা নেয় শহিদের স্ত্রী আঁখি আক্তার।
ওই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের রেনু বেগম বলেন, আমাকে দৈনিক ৫০০ টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে আমার মাধ্যমে ১৭ টি নলকূপ বাবদ ১৭ জনের কাছ থেকে ২০ হাজার করে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ৮০ টি উন্নত জাতের গাভী দেবে বলে ৮০ জনের কাছ থেকে ১০ হাজার করে ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে। এ ছাড়াও তিনজনকে তিনটি পাকা ঘর দেওয়ার কথা বলে ৯০ হাজার করে দুই লাখ সত্তর হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। চরখলিফা ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা খন্দকার মাইনউদ্দিন বলেন, আমার এলাকায় ৭ টি নলকূপ দেবে বলে আমার কাছ থেকে শহিদ ও আঁখি আক্তার ১ লাখ ১১ হাজার টাকা নিয়েছে। সাংবাদিকদের দেখে এ সময় শতাধিক পাওনাদার অভিযোগ জানাতে হুমড়ী খেয়ে পড়েন। এ ব্যাপারে চরখলিফা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মেহেদী মাসুদ মুকু খান জানান,আমার কলেজের অফিস সহকারি অভিযুক্ত শহিদ ও তার স্ত্রী আঁখি আক্তার এলাকার সহস্রাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব মানুষ প্রতিদিন আমার কাছে এসে অভিযোগ করছে। প্রতারণার দায়ে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
এদিকে শহীদের পিতা রুহুল আমিন বলেন, কয়েকদিন যাবৎ শহীদ ও তার স্ত্রী আঁখি আক্তার বাড়িতে আসেন না। দৌলতখান থানার ওসি বজলার রহমান বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’