২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বরিশালে বাড়ি দখলে সহযোগীতা না করায় উল্টো পুলিশ কর্মকর্তার বিরূদ্ধে অভিযোগ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বরিশাল নগরীতে একটি বাড়ি দখলে সহযোগীতা না করায় বিএমপির কোতয়ালী মডেল থানার এসআই রিয়াজ উদ্দিনের বিরূদ্ধে উল্টো দখল চেষ্টার অভিযোগ দিয়েছেন বাড়ির সাবেক কেয়ারটেকার ও স্বঘোষিত মালিক দাবিদার মমতাজ বেগম আশা (৭০)। অভিযোগের বিষয়টি প্রকাশ হলে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেল আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। এক সময়ের কেয়ারটেকার এখন নিজেই মালিক বনে যাওয়া ও জোরপূর্বক একটি ফ্লাট দখল করে রাখার পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নগরীর ১১নং ওয়ার্ডের ব্যাপ্টিষ্ট মিশন রোডের এই আকন ভিলা’র এক সময়ে মালিক ছিলেন কবির আকন। বাড়ির মালিক প্রবাসী হওয়ায় তার তৎকালীন শাশুড়ি মমতাজ বেগম আশাকে বাড়িটি দেখভাল করা এবং ভাড়া তোলার দায়িত্ব দেন। সেই সুবাদে আশা ২য় তলার একটি ফ্লাটে থাকতেন। পরবর্তিতে কবিরের সকল অর্থ সম্পদ আত্মসাতের চেষ্টার বিষয়টি জানতে পারলে সে বাড়িটি নিজ হেফাজতে নেন। এদিকে মমতাজের মেয়ের সাথে কবিরের ডিভোর্স হয়ে যায়। এর পরেও মমতাজ বাড়িটি দখলে রাখে। উপায়ান্তর না পেয়ে কবির বাড়িটি তার ভাই আকন আজাদের কাছে বিক্রি করে দেন। কিন্তু তাতেও মমতাজ তার দখল ছাড়েননি। অবশেষে ভাড়াটিয়ারা তাদের বাড়িভাড়া মূল মালিক অর্থাৎ আকন আজাদের কাছে দেওয়া শুরু করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভাড়াটিয়াদের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন করান মমতাজ। তাতে প্রতিবাদ করলে ভাড়াটিয়া এসআই রিয়াজের বিরূদ্ধে উল্টো বাড়ি দখলে অভিযোগ দেন মমতাজ বেগম।

বাড়ির মালিক আকন আজাদ বলেন, ক্রয়সূত্রে এই বাড়ির মালিক আমি। অথচ মমতাজ বেগম গায়ের জোরে দখল করতে চাচ্ছেন। তাছাড়া বার বার সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানী করছেন। আমরা এর প্রতিকার চাই।

মমতাজ বেগম আশা বলেন, বাড়িটি আমার। এসআই রিয়াজ প্রথম দিকে ঠিকমত ভাড়া দিলেও এখন কয়েকমাস যাবত ভাড়া দিচ্ছেনা। তাই তার বিরূদ্ধে পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।

এসআই রিয়াজ বলেন, আমি এখানে বাসা ভাড়া নেওয়ার পর থেকে মমতাজ বেগমকেই ভাড়া দিতাম। পরবর্তিতে আকন আজাদ নামে একজন বাড়িটি ক্রয় করেন। এরপর তার সাথে ভাড়াটিয়া চুক্তি করে আমি ঐ বাসায় আছি এবং তার কাছে নিয়মিত বাড়িভাড়া পরিশোধ করছি। কিন্ত মমতাজ বেগম অযাচিত বাড়িভাড়া দাবী করছেন। এটা না দেওয়ায় তিনি আমার বিরূদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়েছেন। এতে সামাজিকভাবে আমি হেনস্তা হয়েছি।  আমি বিষয়টি আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে ন্যায় বিচার চেয়ে আমিও আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।

এরপূর্বে গত বছরের ৯জুলাই বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় একটি জিডি করা হয়। যার নং- ৩৮১। আকন ভিলার তৎকালীন মালিক কবির আকনের ভাই মহিউদ্দিন আকন জিডিতে উল্লেখ করেন, উজিরপুর উপজেলার বামরাইল গ্রামের মৃত আবু বক্কর দেওয়ানের মেয়ের সাথে টরকী গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে কবির হোসেন আকন এর বিবাহ হয়। বিবাহের পর থেকেই কবির হোসেন হল্যান্ড ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছে। সেই সুবাদে পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে সেখানে বসবাস করছে। কবির হোসেন আকন বরিশাল জেলার কোতোয়ালী থানার জে এল নং- ৫০ মৌজা- বগুড়া আলেকান্দা এস, এ ৮৫৪৮, খতিয়ান হাল-৫৮৪৭ এ ২ ইউনিটের ভবন নির্মাণ করে। সে ভবনে কবিরের শাশুড়ী মমতাজ বেগম আশা (৭০) বসবাস করতো এবং বাড়ী ভাড়া উত্তোলন দায়িত্ব ছিল তার। কবির হোসেন ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে বাংলাদেশে এসে শাশুড়ীর কাছে বাড়ী ভাড়ার হিসেব বুঝে নিতে চাইলে বিভিন্ন ভয়-ভীতি ও মামলায় জড়ানো হুমকি দিয়ে তার নিজ ভবন থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে শুরু হয় উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ৩০ জুন স্ত্রী তালাক প্রদান করে কবিরকে। তালাক প্রদানের পরেও বাড়ী ছাড়ছে না শাশুড়ী। এরপর ৬ জুলাই প্রবাসী কবিরের অনুরোধে ভাই মহিউদ্দিন আকন ও খালাত ভাই রফিক সহ পরিবারে কয়েকজন সদস্য মিলে ভাড়া উত্তোলন করতে গেলে তাদেরকে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে এবং খুন-যখমের হুমকি দিয়ে ধারালো দা নিয়ে তেড়ে আসে। ভয়ে সেখান থেকে তারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এছাড়াও প্রবাসী কবিরের খালাত ভাই মানসু আলী রফিককে ০১৭১২৫৭০৮২৮ নম্বর দিয়ে ফোন করে মমতাজ বেগম আসার ভাইয়ের পরিচয় দিয়ে বরিশাল এলাকা ছাড়া করবে এবং খুন-গুম চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর হুমকি প্রদান করছে।

সর্বশেষ