৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বরিশালে যেই ট্রলার নিয়ে অভিযান, সেই ট্রলারেই আগুন দিলেন ইউএনও

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বাংলানিউজ: বরিশালের বাবুগঞ্জে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষার অভিযানে ব্যবহৃত একটি ট্রলার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী এবং তার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমার উপস্থিতিতে তার দেহরক্ষী আনসার সদস্যরা ট্রলারটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা বলেছেন,
রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করা ট্রলারটিতে আগুন দেওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে কারণ ট্রলার মাঝি আনোয়ারই জানিয়েছেন গ্যাসের চুলা থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেইসঙ্গে আকস্মিক ট্রলারটিতে আগুন লাগায় তিনিও কিছুটা হতভম্ব হয়ে যান।
যদিও ট্রলার মাঝি আনোয়ার জানান, ট্রলারটি ইউএনওর নির্দেশে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আনোয়ারের বাবা জানান, ট্রলারে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর থেকে তার ছেলে, ছেলের বউসহ পরিবারের সবাই ভেঙ্গে পরেছেন। কারণ আনোয়ারের ভাড়ায় আনা এ ট্রলারটিই ছিলো পরিবারের একমাত্র আয়ের পথ। এখন আনুমানিক তিন লাখ টাকা মূল্যের ট্রলারটি কিভাবে তার মালিককে বুঝিয়ে দিবেন তা নিয়েই শঙ্কায় রয়েছেন।

এদিকে ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে থাকা বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) হান্নান মিয়া জানান, অভিযান শেষে বাবুগঞ্জ (কেদারপুর) খেয়াঘাটে আনোয়ার হোসেনসহ অভিযানিক দলের নৌযানগুলো আনা হয়। পরে নৌযানগুলো থেকে জব্দ হওয়া জাল ও মাছ তীরে ওঠানো হয়। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান, মৎস্য কর্মকর্তা, থানা পুলিশের সদস্যদের উপস্থিতিতে ইউএনও বিভিন্ন এতিমখানায় জব্দ ইলিশ বিতরণ করেন এবং জব্দ জাল পাশেই নদী তীরেই পুড়িয়ে ধ্বংস করেন। এর কিছু সময় পরেই হঠাৎ করে ইউএনও আনোয়ারের ট্রলারটির সামনে যান এবং তার দেহরক্ষী আনসার সদস্যরা ট্রলারটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। তবে এরআগেই তুচ্ছ ঘটনায় ইউএনও আনেয়ারের ওপর চটলে সে পালিয়ে যান।
অভিযানে যাওয়া থানা পুলিশের সদস্যদের বরাত দিয়ে বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি পুলিশ সদস্যদের থেকে জানতে পেরেছি আনোয়ারকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হলে, তিনি ভয়ে পালিয়ে যান। পরে ইউএনওর সঙ্গে থাকা দেহরক্ষী আনসার সদস্যদের দ্বারা ডিজেলের মাধ্যমে ট্রলারটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তবে কি কারণে ট্রলারটিতে আগুন দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলতে পারবেন। আর ঘটনাস্থলে আজ কোন মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথাও আমার জানানেই।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ নিয়ে থানায় আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে ঘটনাস্থলে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দেহরক্ষী আনসার সদস্য মামুন হাওলাদার ও সুকদেব দাস জানিয়েছেন, যখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা বিভিন্ন এতিমখানায় জব্দ ইলিশ বিতরণ করছিলেন তখন ট্রলারটির ভেতরে হঠাৎ করেই আগুন জ্বলতে দেখেন। আর বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনিসহ সবাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুনের ব্যপ্তি ছড়িয়ে পরলে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত ফাতিমা বলেন, যখন ট্রলারটিতে আগুন জ্বলছিলো তখন তিনি তা যেমন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন, তেমনি অন্য নৌযানগুলোর ক্ষতি এড়ানোর চেষ্টাও করেন।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রলার মাঝিকে সহায়তা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আনোয়ার হোসেনের ট্রলারটি প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিলো। যা আমাদের কাজে লেগেছে। সেটিতে আগুন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বরং আগুন লাগার পর আমিসহ ঘটনাস্থলে থাকা সবাই হতবাক হয়ে যায়। আমি তাৎক্ষনিক আনোয়ার মাঝিকে খুঁজেও পাইনি। তবে পরে তার কাছ থেকে জানতে পেরেছি গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগেছে ট্রলারটিতে।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত ষ্টেশন অফিসার আব্দুল মালেক জানান, খবর পেয়ে আমার ৯টা ৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুইটি ফায়ার ষ্ট্রিগুইসার দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছি। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অজ্ঞাত বলে জানিয়েছেন আব্দুল মালেক।
এদিকে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।

সর্বশেষ