৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বানারীপাড়ায় কিশোরীকে হত্যা: তিনজনকে আসামী করে মামলা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি॥
বরিশালের বানারীপাড়ায় কিশোরী মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আয়শা আক্তারকে (১৩) হত্যার ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার রাতে নিহত আয়শার পিতা দুলাল লাহাড়ী বাদী হয়ে সিদ্দিক মীর,তার ছেলে সাব্বির ও সাইদকে সুনির্দিষ্ট ও ২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে এ মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের বৃহস্পতিবার সকালে বরিশালে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।এছাড়া সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় সিদ্দিক মীরের স্ত্রী হনুফা বেগমে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।এর আগে বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বানারীপাড়ার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের আউয়ার বাজার সংলগ্ন খাল থেকে আয়শার লাশ উদ্ধার করেছে বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। এ ঘটনায় একই পরিবারের চারজনকে আটক করা হয়। প্রসঙ্গত উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের আউয়ার দাখিল মাদরাসার সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী ও ওই এলাকার দুলাল লাহাড়ীর মেয়ে আয়শা আক্তার (১৩) মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে নিখোঁজ হয় এবং তাকে অনেক খোঁজাখুজির পরও পাওয়া যাচ্ছিলো না। বুধবার সকালে পার্শ্ববর্তী বাড়ির সিদ্দিক মীর আউয়ার খালে আয়শার লাশ জালের সাথে পেচানো অবস্থায় দেখতে পায় এবং সে ধারণা করে হয়তো তার ছেলেরা মেয়েটিকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। পরে সিদ্দিক ছেলেদের বাঁচাতে লাশটি গুম করার উদ্দেশ্যে পায়ে বালতি ও মেয়েটির ফ্রকের ভিতরে ইট ঢুকিয়ে খালে ডুবিয়ে দেয়। এদিকে আয়শা (১৩) রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার পর তাকে খুঁজে পেতে স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করে। তার খোঁজে এলাকায় মাইকিং করা সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি দিয়ে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়। এতেও তার কোন সন্ধান মেলেনি। ওই ছাত্রীর পার্শ্ববর্তী বাড়ির সিদ্দিক মীরের ঘরের পাশে বুধবার সকালে আয়শার একটি জুতা খুঁজে পায় তার স্বজনেরা।ওই জুতার সূত্র ধরেই স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম কাজল সহ অন্যরা সিদ্দিক মীর,তার ছেলে সাব্বির (২০),সাইদ(১৪) ও স্ত্রী হনুফা
বেগমকে সৈয়দকাঠি ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সিদ্দিক মীর
ছাত্রী আয়শার লাশ বাড়ি সংলগ্ন খালে ডুবিয়ে দিয়েছে বলে স্বীকার করে। খবর
পেয়ে বানারীপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই চারজনকে আটক করে। পরে
তাদের দেখানো স্থানে খালে বানারীপাড়া ও বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল
দিনভর তল্লাশি চালিয়ে বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে লাশ উদ্ধার করে। এসময়
স্বজনদের আহাজারীতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বরিশাল
জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাকেরগঞ্জ সার্কেল) আনোয়ার সাঈদ,বানারীপাড়ার
থানার ওসি শিশির কুমার পাল,ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাফর আহম্মেদ,লবণসাড়া
পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর মো. মহসিন প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিকভাবে দায় স্বীকার করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত
করেছেন বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাকেরগঞ্জ সার্কেল) আনোয়ার
সাঈদ। একই কথা জানিয়ে বানারীপাড়া থানার ওসি শিশির কুমার পাল জানান লাশ
উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে
এবং এ ব্যাপারে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মামলার
তদন্তকারী কর্মকর্তা বানারীপাড়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাফর আহম্মেদ
জানান আসামীরা স্বীকার করেছে ঘটনার দিন সকাল ১১টার দিকে আয়শা আক্তার
প্রতিবেশী সিদ্দিক মীরের ঘরে টিভি দেখতে যায়। টিভি দেখা শেষে বাড়ি যাওয়ার
সময় সিদ্দিক মীরের বাড়ির পরিত্যক্ত একটি ঘরের পিছনে খালের মধ্যে চুবিয়ে
আয়শাকে হত্যা করে সাব্বির। পরের দিন বুধবার সকালে সিদ্দিক মীর বাড়ির
পাশের ছোট খালে আয়শার লাশ জালের সাথে পেচানো অবস্থায় দেখতে পায় এবং সে
ধারণা করে হয়তো তার ছেলেরা মেয়েটিকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। পরে সিদ্দিক
ছেলেদের বাঁচাতে লাশটি গুম করার উদ্দেশ্যে পায়ে বালতি ও মেয়েটির ফ্রকের
ভিতরে ইট ঢুকিয়ে বাড়ির অদূরে বড় খালে ডুবিয়ে দেয়। এসময় সিদ্দিক মীরের ছোট
ছেলে সাইদ তার বাবাকে সহায়তা করে। তিনি আরও জানান আয়শা প্রতিবেশী সিদ্দিক
মীরের ঘরে প্রতিদিন গিয়ে টিভি দেখতো। আয়শার সঙ্গে একত্রে সাব্বিরও টিভি
দেখতো। এ নিয়ে সাব্বিরের মা হনুফা বেগম তাকে গালমন্দ করায় আয়শার জন্য
গালি শোনায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যা করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।
এদিকে স্থানীয়দের ধারণা ধর্ষণের পরে ওই কিশোরীকে হত্যা করে লাশ গুমের
চেষ্টা করা হয়েছিলো।

সর্বশেষ