৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভোগ দখলীয় জমি থেকে উচ্ছেদের পায়তারা, ভূক্তভোগীর সংবাদ সম্মেলন

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

হারুন অর রশিদ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
বরগুনার আমতলী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ওয়াবদা অফিস সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন ৬৬ শতাংশ জমি ভোগদখলে থাকা মোঃ আবুল কালাম হাওলাদার গংদের জমি থেকে উচ্ছেদের পায়তারা চালাচ্ছে একটি অসাধুচক্র।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় আমতলী রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে ওই জমিতে ভোগ দখলে থাকা ভূক্তভোগীরা একটি অসাধুচক্র কর্তৃক তাদের উচ্ছেদের পায়তারা চালানোর অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভূক্তভোগী আবুল কালাম হাওলাদার লিখিত বক্তব্যে জানায়, তার মরহুম পিতা আবদুল হাই হাওলাদার বিগত ১৯৬৩ সালে ৩০ নং চাওড়া মৌজার এসএ ৮৩৭ নং খতিয়ানের রেকর্ডিয় মালিকদের নিকট হইতে ৪৮, ৬৯, ৭১, ৭২, ৭৩ ও ৭৪ নং দাগ থেকে ১ একর জমি ক্রয় করেন। আমার পিতা ভোগ দখলে থাকা অবস্থায় ৬৬/৬৭ সালে উক্ত জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের প্রয়োজনে অধিগ্রহন করেন। সে সময় এ অধিগ্রহনকৃত জমির ক্ষতিপূরণের টাকা আমার পিতা উত্তোলণ করেন নাই। ওই জমির মধ্য থেকে ৩৪ শতাংশ জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবহার করলেও বাকী ৬৬ শতাংশ জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। পরবর্তীতে আমার পিতা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মৌখিক আদেশে ওই ৬৬ শতাংশ জমি আমার বাবা ভোগদখল করেন। আমার বাবার মৃত্যুর পরে আমরা ওয়ারিশগণ বিগত ২৭ বছর ধরে ভোগ দখলে আছি। এরপর ২০০৬, ২০১২ ও ২০২০ সালে আমাদের ভোগ দখলে থাকা ওই জমি বন্ধোবস্ত পাওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করলেও তারা আমাদের বন্ধোবস্ত না দিয়ে মৌখিকভাবে ওই জমি ভোগ দখলের অনুমতি প্রদান করেন। ওই জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফলজ গাছের চারা, বিভিন্ন প্রকারের শাক-সবজি চাষাবাদ ও মৎস্য চাষ করিয়া ভোগ দখলে আছি। আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাকে বন্দোবস্ত না দেওয়ায় ও আমার নামে বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য ২০১২ সালে আমতলী সহকারী জজ আদালত, বরগুনায় একটি দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়ের করি। মামলা নং ৩০৪/২০১২।
তিনি আরো জানান, গত ২ অক্টোবর সারাদিন ওই জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ চারা রোপন করি। বাকী কিছু গাছের চারা সেখানে রেখে আসি। ওই দিন রাতে আমার গাছের রোপিত চারা নষ্ট করার সংবাদে আমি রাত অনুমান ১২ থেকে ১টার দিকে মোটর সাইকেল যোগে আমার ভোগ দখলীয় জমির কাছে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে সেখানে পুলিশ আসে। আমি পুলিশ দেখে সেখান থেকে মোটর সাইকেল রেখে চলে আসি। পরে শুনতে পাই আমতলীর তিনজন নামধারী সাংবাদিক পরিতোষ কর্মকার, কাজী হোসাইন আলী ও জসিম উদ্দিন শিকদার গোপনে আমার ভোগদখলীয় জমির মধ্য থেকে কিছু জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা থেকে বন্ধোবস্ত এনেছেন। রাতের আধারে আমার ভোগদখলীয় সম্পতির কিছু অংশে রাতের আধারে বালুদিয়ে ভরাট করে। যাহা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বন্দোবস্ত দেয়ার শর্তাবলীর নিয়ম বহির্ভূত। এছাড়া সাংবাদিক জসিম উদ্দিন শিকদার আমার ভোগদখলীয় জমির পাশে বন্দোবস্ত বিহীন সরকারী জমিতে আধাপাকা বসতঘর নির্মাণ করিয়া বসবাস করিয়া আসিতেছে। অথচ সরকারী বন্দোবস্তকৃত জমিতে কোন প্রকার ইমারত নির্মাণ করা যাবেনা বলে প্রধান শর্ত থাকলেও জসিম উদ্দিন শিকদার তা অমান্য করেছেন। তিনিই তার ব্যবহৃত মুঠোফোন দিয়ে আমাকে দেখিয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন। আমার ধারনা এই নামধারী সাংবাদিকদের অসাধুচক্রটি আমতলী থানায় আমার নামে মিথ্যা কথা বলে আমাকে হয়রানী করার সেদিন রাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো এবং আমার ভোগদখলীয় সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য এ অসাধুচক্রটি দীর্ঘদিন ধরে পায়তারা চালাচ্ছেন।
ওই নামধারী তিন সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদপত্রে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেছেন। আমি নাকি অধিগ্রহনকৃত সম্পত্তিতে স্থায়ী ইমারত নির্মাণ করিয়াছি, অর্ধকোটি টাকার সম্পত্তি বিক্রি করে তা আত্মসাৎ করেছি এবং আমি নাকি এলাকায় চিহ্নিত ভূমিদস্যু। অথচ আমি ওই অধিগ্রহনকৃত জমিতে কোন ইমারত নির্মাণ ও জমি বিক্রি করি নাই। শুধুমাত্র ওই সম্পত্তিতে ফলজ গাছ, মাছ চাষ এবং বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি রোপণ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। আমার নামে এই মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করার জন্য তার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রশাসনের কাছে নামধারী এ সাংবাদিকদের বিচারের দাবী করছি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো অভিযোগ করেন, আমতলী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য-সহকারী মোঃ আলমগীর হোসেন কোন প্রকার বন্দোবস্ত গ্রহন ছাড়াই পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস এলাকায় ৫টি টিনসেট ঘর তুলে একটিতে তিনি ও বাকী ৪টি ভাড়া প্রদান করেন। এই কার্য-সহকারী মোঃ আলমগীর হোসেনকে ম্যানেজ করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই কথিত সাংবাদিকরা আমার ভোগদখলীয় জমির মধ্যে তাদের বন্দোবস্ত এনে দিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড আমতলী অফিসের কার্য-সহকারী মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, ওই জমি আবুল কালাম হাওলাদারের দখলেই আছে। আবুল কামাল হাওলাদার সেখানে মাছ ও শাক-সবজি চাষাবাদ করে আসছে। ওই জমিতে আবুল কালাম হাওলাদারর কোন ইমারত নির্মাণ করেনি ও জমিও বিক্রি করেনি।
এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়সার আলম মুঠোফোনে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যেহেতু ওই জমি অধিগ্রহন করে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে মৌখিকভাবে ওই জমিতে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সেহেতু সেখানে ভোগদখলে থাকা পরিবাররা মাছ ও শাক সবজি চাষাবাদ করতেই পারে। আর এখন তো সাময়িকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জমি বন্দোবস্ত দেয়া বন্ধ রয়েছে। পুনঃরায় বন্দোবস্ত দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে ওই ভূক্তভোগী পরিবারটির বিষয়টি দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, যারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি বন্দোবস্ত নিয়ে বালু ভরাট করে আধাপাকা বাড়ীঘর নির্মাণ করেছেন তাদের তালিকা তৈরী করে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সর্বশেষ