৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

ভোলায় দাঁড়িয়েও ওএমএসের পণ্য পাচ্ছেন না দরিদ্ররা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

ভোলা প্রতিনিধি ::: ভোলায় খাদ্য বিভাগের সঠিক নজরদারীর অভাবে ডিলারদের বিরুদ্ধে ওএমএসের (খোলা বাজার) পণ্য বিক্রি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও চাল-আটা পাচ্ছেন না দরিদ্র মানুষ। বিতরণে ডিলারদের বিরুদ্ধে রয়েছে স্বজনপ্রীতি ও কালোবাজারির অভিযোগ।

খাদ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ভোলা পৌরসভার ১০টি ওএমএস কেন্দ্রে প্রতিদিন ৬ মেট্রিক টন চাল ও ৬ মেট্রিক টন আটা বরাদ্দ দেয়া হয় কম দামে খোলা বাজারে বিক্রির জন্য। অভিযোগ রয়েছে, ডিলাররা প্রকৃত দরিদ্রদের কাছে কিছু চাল বিক্রি করলেও অধিকাংশ আটা কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়।

সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে আটার দাম বেশি হওয়ায় বিশেষ এ পন্থা অবলম্বন করছেন ডিলার। এছাড়া নিয়ম অনুাযায়ী খাদ্য বিভাগের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে চাল- আটা বিক্রির নিয়ম থাকলেও সরেজমিনে খাদ্য বিভাগের কাউকে পাওয়া যায়নি।

খাদ্য বিভাগ ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চলছে এ অনিয়ম। অথচ শীত উপেক্ষা করে কাকডাকা ভোরে লাইনে দাঁড়িয়েও চাল আনা না পাওয়ার অভিযোগ অনেকের।

ভোলা পৌরসভার কালিখোলা বাজারের বিকাশ মজুমদারের ওএমএস ডিলার কেন্দ্রের সামনে সময় টিভির ক্যামেরা দেখে ছুটে আসেন মো. রফিক নামে এক ভোক্তা। জানান, চাল নিতে এসে দুর্ভোগ আর ডিলারের অনিয়মের অভিযোগ করতে চাইলে তাকে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে দেয় ডিলারের ভাড়াটে লোক মো. আলাউদ্দিন। ক্রেতাদের সঙ্গে এমন অশোভন আচরণ করার জন্য আলাউদ্দিন প্রতিদিন ৫ কেজি করে আটা পান। যা নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন তিনি।

কালিখোলার ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগে মো. রফিক জানান, সাধারণ ক্রেতাদের এমন অশোভন আচরণ করে তাড়িয়ে দেয় ডিলার। পরে ওইসব চালের বস্তা অন্যত্র সরিয়ে নেয়। আর বাজারে বেশি দাম হওয়ায় ক্রেতাদের আটা না দিয়ে তা কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়।

তিনি বলেন, ‘তিন দিন গিয়া আড়াই কেজি আটা পাইছি। এর আগে ৬ দিন পর গিয়া ৫ কেজি চাল-আটা চাইছি নাই কইয়া তাড়ায়া দেয়। সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত চাল না দিয়ে দোকানের সাটার ফেল দেয়। ভাষা অনেক খারাপ করে। পরে চলে আসি।’

এছাড়াও একই পৌরসভার কালিনাথ বাজারের ডিলার উৎপল তালুকদারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে নারী ক্রেতাদের সঙ্গে বেশি অশোভন আচরণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী বলেন, ‘ভোররাত গিয়া লাইনে দাঁড়াইয়া থাকি। হোন্ডা দিয়া আসা লোকদের চাল দিয়া দেয় আর আমাগো লগে খারাপ আচরণ করে। গরিবরা পায়না।’

ভোক্তারা এই দুই ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগে জানান, প্রতিদিন ৬০০ কেজি করে আটা বিক্রি করার কথা থাকলেও তারা ১০০ কেজির বেশি আটা রাখেন না।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো ক্রেতাদের ওপরই দায় চাপানোর চেষ্টা করেন অভিযুক্ত দুই ডিলার। তারা জানান, চাহিদার চেয়ে বরাদ্দ কম পাওয়া যায়। কিছু ক্রেতা সব সময় ঝামেলা সৃষ্টি করে।

বিকাশ মজুমদারের প্রতিনিধি দীপক তালুকদার বলেন, ‘খারাপ আচরণ করি না। ৫ কেজির পরিবর্তে ১০-২০ কেজি চায়। পরিমাণ মতো না দিতে পারলে কথা কাটাকাটি হয়।’

উৎপল তালুকদার বলেন, ‘অনেকে আছে ২ বার করে নেয়। স্থানীয় লোকেরা বার বার বিরক্ত করে। এ জন্য কমিশনার সাহেব দেখেন বিষয়টা।’

অভিযোগের সত্যতা জানতে কালিনাথ বাজার কেন্দ্রের ডিলার উৎপল তালুকদারের কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ৬০০ কেজির পরিবর্তে মাত্র ৭০ কেজির মতো আটা রয়েছে। বাকি আটা কোথায় আছে জানতে চাইলে উৎপল উত্তর না দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন। ক্রেতাদের অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে দেখা করতে বলেন।

তবে সঠিক তদারকি চলছে দাবি করে ডিলারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সন্দীপ কুমার দাশ। কেন্দ্রে খাদ্য বিভাগের প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির জন্য জনবল সংকটের কথা বলেন তিনি।

সন্দীপ কুমার দাশ বলেন, ‘খারাপ আচরণ করার কোন সুযোগ নাই। কোনো অভিযোগ এলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগেই ২-১ জন বলেছে তখন আমি বলেছি জনগণের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন না। কারণ নিতান্ত অভাবের কারণেই তারা আসছে। অল্প দামে চাল আটার জন্যই তারা আসে।’

তদারকী কর্মকর্তার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘স্টক দেখে স্বাক্ষর করার পর বিতরণ করার কথা। বিষয়টি আমি দেখব।’

জেলার ৬ উপজেলার ৩২টি ওএমএস কেন্দ্র থেকে ৩০ টাকা কেজি দামে চাল ও ২৪ টাকা দরে আটা বিক্রি করা হয়। একজন ক্রেতা দিনে সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল বা আটা কিনতে পারেন।

সর্বশেষ