২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি !

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

অনলাইন ডেস্ক : দেশে করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আশা প্রকাশ করছে সরকার। প্রায় দেড় বছরেরও বেশি দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর এবার খুলে দেওয়ার এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

যদিও এখন পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শতভাগ টিকার আওতায় আনা যায়নি। ফলে তাদের করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানানোসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে সরকারের প্রস্তুতি কতটা রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জনস্বাস্থ্যবিদ, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা।

শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) চাঁদপুরে একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হতে পারে। এছাড়া আগামী নভেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে, আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলাসংক্রান্ত বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিংয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলেও তিনি জানান।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও অ্যাসাইনমেন্ট প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। বেশিরভাগ শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। এছাড়া ১২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদেরও টিকার আওতায় আনা হবে।

যদিও গত ২ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে খোলা হচ্ছে দেশের সব মেডিকেল কলেজ। এর আগে সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কলেজগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ টিকা নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সেই নির্দেশনার আলোকে টিকা কার্যক্রম জোরদার করেছি। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আমাদের টিকার পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, করোনার সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে থাকলে স্কুল খোলা যায় কি না, সে বিষয়ে করোনাসংক্রান্ত কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। তাদের অভিমত মত কী হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সেপ্টেম্বর বৈঠক করে পরামর্শক কমিটি। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সাপেক্ষে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যেতে পারে।

এদিকে, স্কুলগুলোয়ও খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শিক্ষা প্রশাসন স্কুল কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে খোলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ও প্রস্তুতি বিষয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ডগাইর সৃজনশীল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সুমন মিয়া এবং ঢাকার ডেমরার ডগাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিকুল আলম ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, আমরা শিক্ষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য ১০ দিন আগেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেয়েছে। সেই অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রার মাপার মেশিন, স্যানিটাইজার, সাবান কিনেছি। স্কুলের আঙিনা ও শ্রেণিকক্ষ, বাথরুম, বারান্দা পরিষ্কার করে রেখেছি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন করছি।

লালবাগ সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র উৎসব বিশ্বাসের অভিভাবক উজ্জল বিশ্বাস জানান, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীর পড়ালেখার প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। বাচ্চারা একদম পড়াশোনা করতে চায় না। যদিও স্কুল থেকে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস হয়েছে। কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয়। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠিান খোলার বিষয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছোট বাচ্চারা ততটা সচেতন না। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা বিষয়ে চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ এ আর সরকারি পাইলট হাই স্কুলের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিমুল মাহমুদ বলেন, অনেকদিন পরে আমাদের স্কুল খুলছে। এতে আমি অনেক খুশি। আমি ও আমার সহপাঠীরা চেষ্টা করবো, সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবো।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি থাকায় শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। পরে কয়েক দফা চেষ্টা করেও এই মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আর খোলা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। চলমান এই ছুটি আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী, আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলমান ছুটি অব্যাহত থাকবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবীর চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, যেকোনো নির্দেশনা যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়, তার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।

 

 

সর্বশেষ