১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

স্কুলমাঠে ফুটবল খেলায় কিশোরদের পেটালো সভাপতির ছেলে

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

কুয়াকাটা প্রতিনিধি প্রতিনিধি॥
বিদ্যালয়ের মাঠে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউপি মেম্বারের গরুর ঘাস থাকায় ফুটবল খেলতে বাধা দিয়েছেন। বাধা উপেক্ষা করে বল খেলতে নামায় সভাপতির ছেলের বিরুদ্ধে এলাকার কিশোরদের পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বিকালে পটুয়াখালীর উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আদমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। এ ঘটনার দু’টি ভিডিও নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ৯২নং আদমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রব। করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় তিনি বিদ্যালয়ের মাঠে গরুর জন্য ঘাস রাখছেন। ওই স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলতে নামে স্থানীয় কিশোরা। ঘাস নষ্ট হবে বিধায় কিশোরদের ফুটবল খেলতে বাধা দেন তিনি । বাধা অমান্য করে আবার ফুটবল খেলতে গেলে সভাপতি ও ইউপি সদস্যের ছেলে মো. ইউসুফ আলী অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করেন। পিতা-পুত্র এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না কেউ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েক জন জানান, বিদ্যালয়ের জমি দান করেছেন আব্দুর রব’র পিতা। তাই স্কুলের জমি ও মাঠ তাদের খেয়াল খুশি মতো ব্যবহার করে আসছেন। তারা প্রতি বছর গরুর জন্য ঘাস পালছেন। এজন্য মাঠে কোন খেলাধুলা হয় না। এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় এলাকার কয়েকজন কিশোর ফুট খেলার উদ্যোগ নেয়। মাঠে খেলতে নামলে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রব বাধা প্রদান করেন। পরের দিন খেলতে নামলে তার ছেলে মো.ইউসুফ আলী কিশোরদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করলে কিশোররা প্রতিবাদ করে। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করেন।

ভুক্তভোগী অভিভাবক ফেরদৌস বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় এলাকার বেকার কিশোররা প্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে পরেছেন। ওরা মোবাইলে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গ্রেম খেলছে। মাদকের আসক্ত হবার আশংকা রয়েছে। প্রযুক্তিতে আসক্ত বেকার কিশোরদের শরীর চর্চার পাশাপাশি বাজে আড্ডা ও মাদক থেকে দূরে রাখতে ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু ইউপি মেম্বার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং তার ছেলে আমাদের বাধা দিয়ে অকথ্য ভাষায় মা-বাপ তুলে গালাগাল এবং মারধর করে করে।

এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত ইউসুফ আলী মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, গরুর ঘাসের জন্য ফুটবল খেলতে বাধা দেয়া হয়েছে এটা সঠিক না। মাঠে ফুটবল খেললে স্কুলের ক্ষতি হয় তাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্কুলের পুরানো ভবন ফুটবলের আঘাতে ধ্বসে পরার আশংকা করে তিনি আরও বলেন, নতুন একটি টিন শেট রুম করা হয়েছে বল পরে সেটাও নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে বাধা দেয়ায় ওরা আমার সাথে খারাপ আচারণ করেছে।

এ বিষয়ে আদমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম খান বলেন, ‘স্কুল মাঠ থাকলে এলাকার ছেলেরা খেলাধুলা তো করবেই। আমি বিষয়টি শুনে সভাপতিকে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য অনুরোধ করেছি।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য আব্দুর রব তার ছেলের মতো ফুটবলের আঘাতে স্কুলের ক্ষতির বিষয়টি উল্লেখ্য করে বলেন, আমরা জমি দান করলেও আমাদের বলে দাবী করছি না। আরও দুইটি ভবন উঠলে অথবা ফুলের বাগান করলে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু ফুটবল খেলে স্কুলের ক্ষতি করবে তা আমি হতে দেবো না। তিনি আরও বলেন, ফুটবল খেলতে অন্য গ্রামের, অন্য ওয়ার্ডের পোলাপান আসে। রাতে নেশা করে যাবার সময় স্কুলের মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। আমি সচেতন মানুষ হিসেবে তা হতে দিতে পারি না।

কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবুল বাসার বলেন, মাঠে গরু-ছাগলের ঘাস রাখার বিষয়টি আমি শুনে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির সাথে কথা বলে খেলাধুলার জন্য মাঠ উন্মুক্ত রাখতে বলছি। স্কুল মাঠে গরু ছাগলের জন্য ঘাস রাখার কোন সুযোগ নেই। মারধরের ঘটনা দুখঃজনক। ঘটে থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সর্বশেষ