১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিবির নেতার পর এবার বিএনপি নেতার হাতে নৌকা

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

বাণী ডেস্ক: দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যেনো নৌকার প্রার্থীর আকাল পড়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে শিবির নেতাকে নৌকার প্রার্থী করা নিয়ে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এবার সিলেটের বিয়ানীবাজারে নৌকা প্রতীকে বিএনপি নেতার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে!
১/১১’র পূর্ববর্তী সময়ে সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচুর অনুমোদিত ইউনিয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন হাজি মো. বাহার উদ্দিন।
ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতিও ছিলেন তিনি। রয়েছে বাংলাদেশ ও আমেরিকার দ্বৈত নাগরিকত্ব। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তার বাড়ি থেকে ত্রাণের টিনও জব্দ করার অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
চতুর্থ ধাপে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৩ ডিসেম্বর। এরই মধ্যে উপজেলার ১০টি ইউপির চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে তালিকা পাঠানো হয়েছে।
এই তালিকায় উপজেলার কুঁড়ারবাজার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী না থাকায় সাবেক ওই বিএনপি নেতাকে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী মনোনীত করে তালিকা কেন্দ্রে মনোনয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে।
এ নিয়ে তোলপাড় চলছে কুঁড়ারবাজার এলাকায়। ঘটনাটি জানাজানির পর খোদ আওয়ামী লীগ নেতারাও হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
শক্তিশালী প্রার্থী না পাওয়ার অজুহাতে সম্প্রতি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণ রণিখাই ইউপিতে সাবেক শিবির নেতা ইকবাল হোসেন ইমাদকে নৌকার প্রার্থী করা হয়। যদিও নির্বাচনে ইমাদ বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু তৃণমূল আওয়ামী লীগে ক্ষোভ হতাশা নেতাকর্মীদের এখনো কাঁদাচ্ছে। এ ঘটনার পুনারাবৃত্তি ঘটলো এবার সিলেটের বিয়ানীবাজারে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, নৌকার একক প্রার্থী নাম প্রস্তাব করা হাজি মো. বাহার উদ্দিন দুইবার ইউনিয়ন বিএনপির পদবীধারী নেতা ছিলেন।
ওই ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থী থাকলেও তাদের নিভৃত করে নৌকা প্রার্থী হিসেবে দ্বৈত নাগরিক বাহার উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে কেন্দ্রে। এ কারণে ক্ষুব্ধ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠন।
বাহার উদ্দিন বিএনপির নেতা ছিলেন, সত্যতা প্রমাণ করতে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যের অনুমোদিত কমিটির কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল করা হয়েছে। যদিও নিজেকে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন বাহার উদ্দিন।
এসব অভিযোগ মিথ্যা-বানোয়াট উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি কোনো দিন ধানের শীষে সিলও মারিনি। যারা বিএনপি করেন, তারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। অথচ বিএনপি নেতারাও বলছেন আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। আর ১/১১’র সময় সন্ত্রাসীদের চাঁদা না দেওয়াতে বাড়িতে ত্রাণের টিন রেখে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়।
অবশ্যই দ্বৈত নাগরিক থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ২০০৬ সালে আমেরিকা পাড়ি দেই। ৫ বছর পর নাগরিকত্ব পেয়েছি। গত এপ্রিলে দেশে এসে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। কেউ প্রার্থী হননি, তাই তৃণমূলের ২০ ভোটের ১৮টি ভোট আমি পেয়েছি। নৌকার একক প্রার্থী মনোনীত হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে বদনাম করা হচ্ছে। আর বিএনপির যে কমিটি দেখানো হয়েছে, সেটিতে ফ্রুইট দিয়ে মিশিয়ে অন্যের নামের স্থলে তার নাম বসানো হয়েছে।
এছাড়া পোস্টারের ওপরে লিখা মুছে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, ওখানে কোনো কিছু লেখা ছিল না!
এ বিষয়ে কুঁড়ারবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলা উদ্দিন বলেন, ইউনিয়নে ৫/৬ চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। তারা সবাই সরে দাঁড়িয়েছেন। কেউ নৌকা না চাওয়ায় বাহার উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করতে হয়েছে। তবে, কোনো ভোটাভোটি হয়নি। ভোটাভোটি হলে নিজেই ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতাম।
তিনি বলেন, তার বাড়ি ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি/সম্পাদক লিখিত দিয়েছেন তিনি নাকি দল করতেন। আমি তো কোনো দিন শুনিনি তিনি আওয়ামী লীগ করতেন। এখন শুনেছি বাহার বিএনপি করতেন। যৌথ বাহিনী সময় তার বাড়ি থেকে ত্রাণের টিন খুলে নেওয়া হয়। এগুলো আগে কেউ বলেনি। তাছাড়া বাহার উদ্দিন দীর্ঘদিন আমেরিকায় ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের তাগিদে তড়িগড়ি করে প্রার্থী দিতে হয়।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান বলেন, যেখানে রাজাকারের ছেলের নাম মুক্তিযোদ্ধার গেজেটে আসে। সেখানে সাবেক বিএনপি নেতার হাতে নৌকা!
ওই ইউনিয়নে নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবে, আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থীও কি নেই! যাকে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে, তিনি বিএনপির সাবেক এমপি লেচু মিয়ার সঙ্গে চলতেন। বিষয়টি খুবই কষ্টদায়ক।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, ওই ইউনিয়নে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সবাইকে ম্যানেজ করে বাহার একক প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেউ তো প্রার্থী হলে তার নাম প্রস্তাব করতাম। অনেক আওয়ামী লীগ নেতা আছেন, নির্বাচনে দাঁড়ালে বিজয়ী হতে পারবেন না। আর অন্য কেউ প্রার্থী হলে বদনাম ছড়াবেন। কোম্পানীগঞ্জে নৌকার প্রার্থীকে শিবির বলে হুলস্থুল হলো। সে তো ভোটে বিজয়ী হয়েছে। আর বিএনপির সাবেক এমপি ড. মকবুল হোসেন অনেক ভালো মানুষকেও নষ্ট করেছেন। বিতর্কিত করতে আওয়ামী লীগ নেতার নামও যুক্ত করে কমিটি দিতেন। নির্বাচনে ভিন্ন আঙ্গিকে চিন্তা করতে হয়। সমাজে ভালো মানুষ হলে তাকে দলে টানা যায়।

বাংলানিউজ

সর্বশেষ