৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আদালতের সামনে মামলার বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি!

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

হারুন অর রশিদ, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা মামলা তুলে নিতে আদালতের সামনেই মামলার বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ (বৃহস্পতিবার) সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন মামলার বাদী নিহত গৃহবধূর বাবা সোহরাব গাজী।

অভিযোগ ও মামলার বিবরণ থেকে জানাগেছে, বরগুনার তালতলী উপজেলার ছাতনপাড়া এলাকার সোহরাব গাজীর মেয়ে সালমা আক্তারের সাথে ২০১৫ সালে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের লস্করপুর এলাকার খালেক আকনের ছেলে এমাদুলের। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে সালমার বাবা নগদ টাকা ও স্বর্নালংকারসহ ৩ লক্ষ টাকার মালামাল দেন। বিয়ের ৩ বছর যেতে না যেতেই যৌতুকলোভী জামাতা এমাদুল একটি ত্রি-হুইলার মাহেন্দ্র গাড়ী ক্রয় করার অযুহাতে আরো ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক হিসেবে শ্বশুরের কাছে দাবী করেন। দরিদ্র শ্বশুর সোহরাব গাজী জামাতার এ যৌতুকের দাবী মেটাতে না পারলে মেয়ে সালমার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে গত ১৮ অক্টোবর (রবিবার) যৌতুকের দাবীতে সালমার উপর দিনব্যাপী অমানুষিক নির্মম নির্যাতন চালায় যৌতুকলোভী স্বামী এমাদুল। সে সময় পাষন্ড স্বামী এমাদুলের ইটের আঘাতে সালমার বাম চোঁখ রক্তাক্ত জখম হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। নির্যাতনের ঘটনায় ওই দুপুরে রান্নাও করতে পারেনি গৃহবধূ সালমা। চিকিৎসা না করিয়ে ঘরেই আটকে রাখে সালমাকে। ওই দিন গভীর রাতেই মারা যায় গৃহবধূ সালমা। পরে ঘাতক স্বামী এমাদুল স্ত্রী সালমার গলায় রশি বেঁধে ঘরের আড়ার সাথে মরদেহ ঝুলিয়ে রেখে পিত্রালয় খবর দেয়।

সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতনে চোঁখে রক্তাক্ত অবস্থায় গৃহবধূ সালমার মরদেহ উদ্ধার করে কলাপাড়া থানায় নিয়ে এসে ময়না তদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে প্রেরণ করেন।

এ ঘটনায় সালমা বাবা বাদী হয়ে গত ১৯ অক্টোবর (সোমবার) পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া থানায় ঘাতক স্বামী এমাদুলসহ ৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তাৎক্ষনিক এমাদুলকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে। গত ২৭ (অক্টোবর) মঙ্গলবার হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কলাপাড়া থানার এসআই আলমগীর হোসেন উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ঘাতক স্বামী এমাদুলকে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানী শেষে বিজ্ঞ আদালত এমাদুলের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আদালত ভবনের সামনেই গৃহবধূ সালমার বাবা ও মামলার বাদী সোহরাব গাজীকে ঘাতক স্বামী এমাদুলের মামাসহ তার আত্মীয়- স্বজনরা বেশী বাড়াবাড়ি না করতে ও মামলা তুলে নিতে বলেন। অন্যথায় তাকেও প্রাণনাশের হুমকি দেন তারা।

সালমার বাবা সোহরাব গাজী মুঠোফোনে বলেন, যৌতুকের জন্য অমানুষীক নির্যাতন করে আমার জামাতা এমাদুল আমার মেয়ে সালমাকে মেরে ফেলেছে। মঙ্গলবার বিজ্ঞ বিচারক ঘাতক জামাতার ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতের সামনে বসেই ঘাতক এমাদুলের মামা মালেকসহ তার আত্মীয়- স্বজনরা আমাকে মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলাপাড়া থানার এসআই আলমগীর হোসেন বিষয়টি স্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন, আদালত ভবনের সামনে নিহত সালমার বাবা ও হত্যা মামলার বাদী সোহরাব গাজীর সাথে আসামী এমাদুলের আত্মীয়- স্বজনরা কথা কাটাকাটি (তর্ক) ও মামলা তুলে নিতে বলেছেন বলে সংবাদ পেয়েছি। দ্রুতই মামলার সঠিক তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

সর্বশেষ