২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা গলাচিপায় পঞ্চবটি আশ্রমে ৭দিন ব্যাপি মহানাম যজ্ঞ অনুষ্ঠিত তৃষ্ণার্ত মানুষদের বিশুদ্ধ পানি খাওয়ালো জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাবুগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জেরে যুবককে মারধর ।। পাথরঘাটায় মৎস্য বিভাগের অভিযানে ‘মারধর’, নদীতে ঝাঁপ দিয়ে এক জেলে নিখোঁজ এফডিসিতে সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে পিরোজপুরে মানববন্ধন রাঙাবালী তে সালাতুল ইসতিস্কার নামাজ ও দোয়া মোনাজাত পিরোজপুরে ভোটে অংশ নেওয়ায় দল থেকে বিএনপি নেতা বহিষ্কার অন্যায়ের সাথে নয়া দিগন্তের সাংবাদিকরা কখনোই আপোষ করেন না বরগুনায় বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী, জায়গা নেই হাসপাতালের মেঝেতেও

প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

শেয়ার করুনঃ

Share on facebook
Facebook
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email

 

বরিশাল বাণীঃ আজ তেল-গ্যাস -খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ – বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ৯১ তম জন্মদিন।
মহৎ কর্মযোগী ও দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তাঁর সমগ্র জীবনজুড়ে রয়েছে সততা, একনিষ্ঠতা দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ। একজন প্রকৌশলী হয়েও তাঁর মধ্যে সার্বক্ষণিক বিপ্লবীর চরিত্র পাওয়া যায়। তাঁর জীবনসংগ্রাম থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর এমন এক মহৎ জীবন, যে জীবনজুড়ে রয়েছে সততা, একনিষ্ঠতা, দৃঢ়তা, কঠোর শ্রম, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ। শ্রম-সময়-অর্থ, ভালোবাসা দিয়ে দেশব্যাপী তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষার আন্দোলন গড়ে তোলা এই অকুতোভয় ও ইস্পাতদৃঢ় মানুষটির জীবনের অনেক কাহিনীই সাধারণ মানুষের অজানা। এমন মহৎ জীবনের অধিকারী মানুষকে সাধারণ্যে নিয়ে যাওয়া প্রতিটি সচেতন মানুষের দায়িত্ব-কর্তব্য। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে তার সংক্ষিপ্ত জীবন-সংগ্রাম পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি।
শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ জন্মেছেন ৩১ জুলাই ১৯৩১ সালে; খুলনার দৌলতপুরে। বাবা শেখ মুহাম্মদ হানিফ, মা মরিয়ম খাতুন। তার বাবা মারা যান ১৯৭৭ সালে এবং মা ১৯৯৪ সালে। শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিএসসি পড়াশোনা দৌলতপুরেই। ১৯৪৬ সালে প্রথম শ্রেণিতে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট সায়েন্স পরীক্ষায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯তম স্থান এবং ১৯৫০ সালে বিএসসিতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। ওই বছর তৎকালীন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে তিনি এই কলেজ থেকে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট এবং ৭৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে মেডেলিস্ট হন।
মেধা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি চাকরিতে না গিয়ে, ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত না হয়ে বেসরকারি চাকরি বেছে নিলেন। ১৯৫৫ সালে কর্ণফুলী হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রজেক্টে (কাপ্তাই) ৪৫০ টাকা বেতনে তার চাকরিজীবন শুরু। ১৯৫৮ সালে এই চাকরি ছেড়ে চলে আসেন। ১৯৬৪ সালে মাজহারুল ইসলাম ও প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্সি ফার্ম ‘বাস্তুকলাবিদ’ যাত্রা শুরু করে। ১৯৭০ সালে এই ফার্মের সঙ্গে প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সম্পর্ক ছিন্ন হয়।
১৯৬৯ সালের ৯ ডিসেম্বর আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির পত্রিকা ‘মার্ক্সবাদী’ বহন করার অপরাধে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এভাবে শুরু হয় তার রাজনৈতিক জেল-জীবন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কনডেম সেলে থাকার পর পাবনা জেলে স্থানান্তর ১৯৭০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। তার পর পাবনা থেকে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় আনা হয়।
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর দৌলতপুরের বাড়ি থেকে তার দুই ভাই ও আশ্রিত হিন্দু ছেলেসহ তিনজনকে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তান আর্মি ধরে নিয়ে মহেশ্বরপাশা ক্যান্টনমেন্টে হত্যা করে।
১৯৯৮ সালের এপ্রিল মাসে প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে আহ্বায়ক করে ‘তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’র যাত্রা শুরু হয়, যা আজও চলমান। এটা কেবল সম্ভব হয়েছে তার যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের কারণে। এ কমিটির যাবতীয় কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অধিকাংশই তার ব্যক্তিগত উপার্জন থেকে ব্যয় করেন।
বামপন্থি রাজনৈতিক দল ও তার গণসংগঠন (প্রায় ৪০টি), প্রগতিশীল ধারার সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রগতিশীল ধারার পত্রিকা-ম্যাগাজিন-বই ও স্মারকগ্রন্থ প্রকাশে সহযোগিতা, স্কুল-কলেজ নির্মাণ, পাঠাগারে অনুদান, সভা-সেমিনার-স্মরণ অনুষ্ঠান ও চিকিৎসা সহযোগিতা প্রদান ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আর্ত-মানবতার সেবায় অকুণ্ঠ চিত্তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তিনি, যা আজও অব্যাহত। সহযোগিতা এবং দান-অনুদান সবই দিয়েছেন তার উপার্জিত অর্থ থেকে। জীবনযাপনের জন্য খুব সামান্যই ব্যয় করেন তিনি। জয়তু মহৎ কর্মযোগী প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, মূলনীতি হতে হবে দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও তার জন্য ত্যাগস্বীকার করা। সব সময় সামনের দিকে তাকাতে হবে। সঠিক ‘লাইন’ খুঁজে সেই পথ ধরে চলতে হবে। যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে এবং শ্রমসহিষ্ণুতা রক্ষা করতে হবে।

আমি যখন ১৯৯৮ সালে প্রথম ঢাকায় আসি, তখন ভিসামুক্ত বিশ্বআন্দোলন আ ব ম মোস্তফা আমিনের নেতৃত্বে বেশ তুঙ্গে। সেই কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ। ভিসামুক্ত বিশ্ব আন্দোলনে আমি যুক্ত হওয়ার কারনে, এবং প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ ও আমার বাড়ি কাছাকাছি হওয়ার কারণে তার প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ জেগে উঠেছিল। সেখানে আমার ছেলেবেলার বন্ধু খুলনা ডুমুরিয়া বাড়ি, আমিনুল ইসলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করতেন। সেই অফিসে আমিনুলের সাথে আমার প্রায় দেখা হত।আমার দেখা একজন সৎ,নির্ভীক ও আদর্শবান মানুষ প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ ইসলাম।তিনি স্থাপত্যবিদ্যায় যে অবদান রেখেছেন তা ইতিহাসের পাতায় অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ৯১ বছরে পা দিলেও আজ ও তিনি চিরসবুজ, আত্মত্যাগী,নির্লোভ একজন মানুষ, সময়ের প্রতি কমিটমেন্ট অবিসরনীয়।৪ টায় সময় দিলে, ৪ টা ১ কোনোদিন ও বাজেনি। যানজট বা অজুহাত এই ধরনের অজুহাত তার মুখ থেকে কখনো প্রকাশ পায়নি।লক্ষ লক্ষ বিপ্লবীদের তিনি স্পন্দন। ব্যক্তিজীবনে আমি বাম ঘরণার রাজনীতি না করলেও তিনি আমার জীবনে প্রেরণার বাতিঘর।
আপনি সুস্থ থাকুন, শতায়ু হউন।

সর্বশেষ