জাকির হোসেন হাওলাদার, দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
কুয়াকাটা-পটুয়াখালী-লেবুখালী-ঢাকা মহাসড়কে ইতোমধ্যে পায়রা নদীর ওপর দিয়ে সংযোগ ঘটিয়েছে দুমকি উপজেলার লেবুখালীর ‘পায়রা সেতু’। বর্তমানে সেতুটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে, উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সেতুটির উপর দিয়ে যান চলাচলও শুরু হবে অল্পদিন পরেই। সেতুটিতে দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে পদ্মার পাড়ের শরিয়তপুর প্রান্ত থেকে সরাসরি কুয়াকাটার সঙ্গে প্রায় ২১৩ কিলোমিটার সড়কের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। সেতুটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙক্ষা পূরণ করবে। এর মাধ্যমে এখানকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং সরবোপরি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বৃহৎ আকারে প্রসার ঘটবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ব্যবস্থায় কুয়াকাটা পর্যন্ত নিরাপদে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন এই সেতু। একই সাথে সেতুটি চালুর মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের আজন্ম স্বপ্ন ফেরিবিহীন নির্ঝঞ্জাট যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এদিকে সেতুটি অক্টোবরের যেকোন দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছে সেতু সংশ্লিষ্টরা। পায়রা সেতু’র প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল হালিম সাংবাদিকদের জানান, প্রথম বারের মতো পায়রা সেতুতে আমরা ‘ব্রিজ হেলথ মনিটরিং সিস্টেম’ চালু করেছি। বিভিন্ন দুর্যোগে কিংবা ওভারলোডেড গাড়ি চলাচলের ফলে ব্রিজের যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, তার পূর্বাভাস দেবে এই হেলথ মনিটরিং সিস্টেম। এটা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোনো সেতুতে সংযোজন করা হলো। এই সেতুর কিছু বিশেষত্বের মধ্যে সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে এটা ‘ডিপেস্ট ফাউন্ডেশন’। এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্টেট পদ্ধতিতে করা ১ হাজার ৪শ ৭০ মিটার দৈরঘ্য এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি বাংলাদেশে দ্বিতীয়। ১শ ৩০ মিটার পাইল বিশিষ্ট সেতু এটি, যা পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রেও করা হয়েছে।
২০১২ সালের মে মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয় পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালী সফরে এসে ফোরলেন বিশিষ্ট পায়রা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ২০১৬ সালের জুলাইয়ের দিকে শুরু হয় সেতুর ভৌত কাজের। নকশাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে নির্মাণ কাজ কিছুটা বিলম্বতি হয়।এর ফলে কয়েক দফায় বেড়ে সর্বশেষ এ সেতু প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৪শ ৪৭ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। যা শুরুর দিকের আনুমানিক মূল ব্যয়ের সাড়ে ৩ গুণেরও বেশি, শুরুর দিকে ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৪শ ১৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বিনিয়োগে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘লনজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন’ সেতুর নির্মাণের কাজ করছে। এখন সেতুর কাঠামো নির্মাণের পুরোপুরি শেষের দিকে, তবে রং করাসহ শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। নদী শাসন প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আরো কিছুদিন সময় লাগতে পারে বলেও জানা গেছে।